Sunday, May 19, 2024

স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল বাঘারপাড়ার ফিরোজার!

- Advertisement -

সহায় সম্বলহীন এক পরিবার থেকে ২০০১ সালে বউ হয়ে আসেন ফিরোজা। বাসরঘর থেকেই রাতের আকাশের ‘তাঁরা’ দেখতে পান তিনি। ঝড়-বৃষ্টিতে কাঁথা-বালিশ বুকের মধ্যে নিয়ে রাত কেটে যায়। তখন থেকেই সংকল্প অনাগত সন্তানদের যেনো এই কষ্টের মধ্যে না পড়তে হয়। তৈরি করতে হবে একটি ভালো ঘর।
স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই শুরু করেন দিন মজুরের কাজ। প্রতি বছর সঞ্চয় বাড়তে থাকে। এরপর কেটে গেছে অনেক বছর। এখন দু’টি সন্তান তার। ছেলে মেহেদি দশম শ্রেণির ছাত্র। মেয়ে মাহমুদার বয়স দু’বছর। ভালোই চলছিলো তাদের সংসার। পরিকল্পনা মতো ২০১৯ সালে জমানো টাকা দিয়ে তিনকক্ষবিশিষ্ট ঘরের কাজও শুরু হয়। দেয়াল পর্যন্ত কাজও শেষ হয়।
হঠাৎ এলোমেলো হয়ে যায় ‘সুখি’ পরিবারটি। স্বামীর কন্ঠনালীতে ধরা পড়ে টিউমার থেকে ক্যান্সার। প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নেয়া হয়। পরবর্তীতে ঢাকায়। জমানো সঞ্চয় ও ধারদেনা করে তার চিকিৎসা করানো হয়। তারপরও বাঁচানো যায়না স্বামী ওবায়দুলকে। রোগ নির্ণয়ের তিন মাসের মধ্যেই চলে যান না ফেরার দেশে।
ফিরোজা ভেজাচোখে বলেন, ‘এখন ছেলেমেয়ে নিয়ে বাবার বাড়িতে রাত কাটাতে হচ্ছে। সন্তানদের লেখা-পড়াও অনিশ্চিত। জানিনা ভবিষ্যতে কী আছে কপালে’।
ফিরোজা বেগম যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ভাতুড়ীয়া গ্রামের মৃত ওবায়দুলের স্ত্রী ও একই গ্রামের দ্বীন আলীর মেয়ে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শামছের বিশ্বাসের ছয় সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন ওবায়দুল। পেশায় বর্গাচাষি। ওবায়দুলের সম্পদ বলতে পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া বসত বাড়ির তিন শতাংশ জমি ছাড়া কিছুই নেই। তাই পরিবারকে সুখে রাখতে শুরু করেন কঠোর পরিশ্রম। পরিশ্রমী ওবায়দুল সকালে কৃষি কাজ, দুপুরে বেকারির পণ্য বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করতেন। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বর্গাজমিতে কাজ করতেন। এছাড়াও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে  প্রতি বছর একটা গরু কিনতেন। উদ্দেশ্য কুরবানির ঈদে বেশি দামে বিক্রি করে টাকা জমাবেন। এভাবেই কেটে গেছে ১৯টি বছর।
ফিরোজার ছোটভাই আমির আলী বলেন, ‘এই দম্পতির স্বপ্ন ছিল নিজেদের একটা সুন্দর বাড়ি থাকবে এবং কিছু আবাদি জমিজমাও থাকবে। এ বিষয়ে অন্য ভাইদের সাথে দুলাভাই প্রায়ই চ্যালেঞ্জ করতেন। জমানো টাকা দিয়ে বাড়িও শুরু করেছিলেন তারা। কিন্তু মেঝোভাই মারা যাওয়ায় ঘরই শেষ করতে পারছেন না। সংসার চালাতে এসএসসি পরিক্ষার্থী ভাগ্নে মেহেদিকেও করতে হচ্ছে রাজমিস্ত্রীর জোগালের কাজ। সারা দিন বাড়িতে থাকতে পারলেও রাত হলে ঘুমাতে যায় অন্যের বাড়িতে। এভাবে কত দিন চলবে! মাত্র ছয় বান টিন হলে তারা অন্তত মাথা গোজার ঠাঁই পেতেন-বলছিলেন ফিরোজার ছোটভাই আমির আলী।

বিশেষ প্রতিনিধি

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত