Thursday, May 16, 2024

যশোরে ছাত্রদলের ১৭টি ইউনিটের কমিটি অনুমোদন,বঞ্চিত হয়েছেন ত্যাগীরা!

- Advertisement -

যশোর জেলা ছাত্রদলের ১৭টি ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্র। প্রত্যেক কমিটিতে ২১ জন করে রয়েছেন। কোনো কোনো ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটিতে ত্যাগীদের বাদ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, টাকার বিনিময়ে ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বিবাহিত, অছাত্র ও আন্দোলন সংগ্রামে না থাকাদের কমিটিতে আনা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, বিভিন্ন উপায়ে কমিটিতে ঠাঁই হয়েছে ছাত্রদলের রাজনীতি করেননি এমন অনেকের। অভিযোগ উঠেছে, জুনিয়রদের বড় পদ দিয়ে সিনিয়রদের অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়ে অসম্মান করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, কেশবপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি হোসাইন মজনুকে বাদ দিয়ে উপজেলা কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অথচ ছাত্রদলের এই নেতার নামে রয়েছে একাধিক মামলা। আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নেয়ায় একাধিকবার কারাবরণ করেন তিনি। এমনকি কেন্দ্রে পাঠানো জেলা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে তাকে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল। অথচ তাকে কমিটিতে স্থান না দিয়ে মোহাম্মদ আজিজুর রহমান আজিজকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। যিনি ছাত্রদলের এ পদের যোগ্য না বলে দাবি করেছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। শুধু তাই না, এ কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাফিজকে। যিনি বিবাহিত বলে অভিযোগ করছেন জেলা ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা। এক মেয়ের সাথে মোস্তাফিজের একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। কেশবপুর কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফরিদুজ্জামানকেও কোথাও স্থান না দিয়ে পদ বঞ্চিত করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে নেতাকর্মীরা বলছেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের হস্তক্ষেপে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। শ্রাবণ নাকি কেন্দ্রীয় কমিটিকে এটি করতে বাধ্য করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, কমিটি দেয়া নিয়ে আর্থিক লেনদেনের।
অভয়নগর উপজেলা ছাত্রদল নেতা আব্দুল্লাহ আল মারুফ আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বলে দাবি এখানকার নেতাকর্মীদের। তার নামে রয়েছে ডজন খানিক রাজনৈতিকভাবে হয়রানিমূলক মামলা। গত কমিটির সহসভাপতি ছিলেন তিনি। সেখানে তাকে আহ্বায়ক না করে আহ্বায়ক করা হয়েছে নাঈম উদ্দীন বিজয়কে। মারুফকে করা হয়েছে যুগ্ম আহ্বায়ক-৩। এর আগের দু’জন যুগ্ম আহ্বায়ক মারুফের থেকে জুনিয়র বলে সূত্র জানিয়েছে। এই কমিটির সদস্য সচিব করা নিয়েও একই ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি অনেক নেতাকর্মীর। তুহিন হোসেনকে সদস্য সচিবের জন্য জেলা কমিটি ও অভয়নগরে ছাত্রদলের নেতারা সুপারিশ করলেও এ পদে আনা হয়েছে তকিবুর রহমানকে। যিনি একজন ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তকিবুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় ছাত্রলীগের সাথে মিশে নিজেকে রক্ষা করে চলেছেন। এছাড়া, নওয়াপাড়া পৌর কমিটিতে নয়ন হোসেন ও রাজু আহম্মেদকে উপযুক্ত পদ দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে।
যশোর নগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক প্রার্থী রেজওয়ান বাশার সোহানকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং আরেক প্রার্থী রাজু আহম্মেদকে সদস্য করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আব্দুল আহাদ গাজী সাংগঠনিক হলেও তাকে কোনো পদে রাখা হয়নি। সরকারি সিটি কলেজ শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পাওয়া মফিজুল ইসলাম বুলবুল ছিলেন আহ্বায়ক প্রার্থী। এমএম কলেজ ছাত্রদলের রিয়াদ হোসেনকে কোনো পদেই রাখা হয়নি।
শার্শা উপজেলা ছাত্রদলে মোহাইমিনুল সাগরকে বঞ্চিত করে শরিফুল ইসলাম চয়নকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। চয়ন সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী। বেনাপোল পৌর ছাত্রদলের তোফাজ্জেল হোসেন তুহিনকে উপযুক্ত পদে রাখা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। যশোর নগর ছাত্রদলের শীর্ষপদে আলোচনায় থাকা গোলাম হোসেন সনিকে কমিটিতে রাখা হয়নি। বঞ্চিতরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,‘সংগঠনের জন্য জেল খেটেছি। হয়রানিমূলক মামলায় আসামি হয়েছি। অথচ মূল্যায়ন করা হলো না।’
এ বিষয়ে যশোর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর বলেন, কোনো কোনো কমিটিতে যোগ্য ও ত্যাগীদের বাদ দেয়া হয়েছে। যা অনাকাঙ্খিত। কেন্দ্রে যে সুপারিশ করা হয়েছিল অনেক জায়গায় তা মানা হয়নি। এটি কেন্দ্র থেকে করা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পী বলেন,কমিটিতে অনেকে এসেছেন যাদের আন্দোলন সংগ্রামে কোনোদিন দেখা যায়নি। তবে,  কোনো কোনো ইউনিট যোগ্য নেতৃত্বের হাতে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, যশোরে ছাত্রদলের কমিটিতে তার কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। একটি  মহল তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কোনো অর্থ লেনদেনের প্রশ্নই ওঠেনা। এ বিষয়ে তিনি কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও খুলনা বিভাগীয় টিম লিডার মিজানুর রহমান সজিবের সাথে কথা বলতে বলেন। মিজানুর রহমান সজিব জানান,জেলা ছাত্রদলের সুপার ফোর নেতাদের নিয়ে, কেন্দ্রীয় কমিটির পাঁচজন ও বিভাগীয় টিমের চারজনের সমন্বয়ে যাচাই বাছাই করে কমিটি দেয়া হয়েছে। ৬০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে বলা হয়েছে। উত্থাপিত অভিযোগ  প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ, মঙ্গলবার রাতে ঘোষিত কমিটির শীর্ষ নেতারা হলেন, যশোর সদর উপজেলা শাখার আহবায়ক আলমগীর হোসেন লিটন ও সদস্য সচিব পিকুল হোসেন, যশোর নগর ছাত্রদলের আহবায়ক সুমন আহম্মেদ ও সদস্য সচিব মাসুদ কায়সার ইশতি, সরকারী এমএম কলেজ শাখার আহবায়ক শেখ ইমাম হাসান ও সদস্য সচিব নুর ইসলাম রুবেল, পলেটেকনিক ইন্সটিটিউিট শাখার আহবায়ক সাইদুর রহমান ও সদস্য সচিব মাহাদী হাসান রিফাত, সরকারী সিটি কলেজ শাখার আহবায়ক মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান ও সদস্য সচিব শাওন ইকবাল সজিব,কেশবপুর উপজেলা শাখার আহবায়ক আজিজুর রহমান আজিজ ও সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাফিজ, কেশবপুর পৌর কমিটির আহবায়ক খাইরুল ইসলাম ও সদস্য সচিব মনিরুল ইসলাম, কেশবপুর সরকারী ডিগ্রী কলেজ শাখার আহবায়ক রাহাদুল ইসলাম সুজন ও সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন, শার্শা উপজেলার আহবায়ক শরিফুল ইসলাম চয়ন ও সদস্য সচিব সবুজ হোসেন খান, বেনাপোল পৌর শাখার আহবায়ক হয়েছেন আরিফুল ইসলাম আরিফ সদস্য সচিব ইশতিয়াক শাওন, মণিরামপুর উপজেলা শাখার আহবায়ক আলিয়ার রহমান ও সদস্য সচিব ইউনুস আলী জুয়েল, মণিরামপুর পৌর আহবায়ক কামরুজ্জামান ও সদস্য সচিব মিকাউল হোসেন, অভয়নগর উপজেলা কমিটির আহবায়ক নাঈম হোসেন বিজয় ও সদস্য সচিব তকিবুর রহমান, নওয়াপাড়া পৌর শাখার আহবায়ক আসাদুজ্জামান ইমন ও সদস্য সচিব মোহাম্মদ ফয়সাল, বাঘারপাড়া উপজেলা শাখার আহবায়ক নাফিজ ইকবাল ঈশা ও সদস্য সচিব মাসুদ পারভেজ, বাঘারপাড়া পৌর শাখার আহবায়ক রফিকুল ইসলাম রফিক ও সদস্য সচিব হৃদয় তারেক, বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজ শাখার আহবায়ক তাসকিন তানহা নাঈম ও সদস্য সচিব সাজ্জাদ হোসেন।

বিশেষ প্রতিনিধি

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত