Tuesday, April 30, 2024

যশোরের বর্ষীয়ান রাজনীতিক খালেদুর রহমান টিটোর ইন্তেকাল

- Advertisement -

বর্ষীয়ান রাজনীতিক সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী, আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক এমপি খালেদুর রহমান টিটোর (৭৬) ইন্তেকাল করেছেন।( ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।  

রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছেন চাচাতো ভাই যশোর কলেজের অধ্যক্ষ মুস্তাক হোসেন শিম্বা।

চাচাতো ভাই শিম্বা জানান, খালেদুর রহমান টিটো শনিবার রাতে মারা যান। কিন্ত, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেন রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। এর আগে খালেদুর রহমান টিটোর ছেলে আইনজীবী খালেদ হাসান জিউস বলেছিলেন, ‘আব্বুর অবস্থা ভালো না, লাইফ সাপোর্টে আছেন’।

এদিকে, খালেদুর রহমান টিটোর মৃত্যুর খবরটি দ্রুত যশোরে ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বত্র এ নিয়ে রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর রাজনৈতিক অনুসারী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ-সবার চোখেই পানি গড়িয়ে পড়ে। যে যার মতো করে খবরটি অন্যকে দেয়ার চেষ্টা করেন। অনেকে ফোন করে নিজের মতো করে দুঃসংবাদটি জানার চেষ্টা করেছেন। তাঁর শহরের ভোলা ট্যাংক রোড়ের বাড়িতে ছুটতে শুরু করেন রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষ।

জানা যায়, খালেদুর রহমান টিটো ১৯৪৫ সালের ১ মার্চ কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম অ্যাডভোকেট হবিবুর রহমান। তিনি একজন এমএ, বিএল ছিলেন। মা মরহুম করিমা খাতুন একজন এমএ, এম-এড ছিলেন। সাত ভাইবোনের মধ্যে টিটো দ্বিতীয়। বড়ভাই মাসুকুর রহমান তোজো ১৯৭১ সালে রাজাকার বাহিনীর হাতে নৃশংসভাবে খুন হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডবল অনার্স নিয়ে ফিজিক্সে মাস্টার্স পাশ করেছিলেন।
খালেদুর রহমান টিটোর শিক্ষাজীবন শুরু হয় যশোর জিলা স্কুলে। ১৯৬০ সালে এখান থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৬৩ সালে ঢাকার কায়েদে আজম কলেজ হতে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। ১৯৬৭ সালে কারাগারে অবস্থানকালে যশোর এমএম কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেন। পরবর্তীতে মাস্টার্স করতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তি হয়েও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে মাস্টার্স আর শেষ করা সম্ভব হয়নি।
খালেদুর রহমান টিটো রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছেন। ১৯৬৩ সালে যশোর এমএম কলেজ ছাত্র ইউনিয়নে সম্পৃক্ততার মধ্যদিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হন।
১৯৬৭ সালে কলেজের লেখাপড়া শেষে করে তিনি শ্রমিক রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬৯ সালের শেষের দিকে তিনি কৃষক আন্দোলন জোরদার করতে কোটচাঁদপুর, মহেশপুর ও কালীগঞ্জ এলাকায় ভ্রমণ করেন। ১৯৭০ সালের শেষের দিকে তার সাথে দলের রাজনৈতিক মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। শ্রেণিশত্রু উৎপাটনের পদ্ধতিকে তিনি মেনে নিতে পারেননি। ফলে এক সময়ে দল থেকে বের হয়ে আসেন। এসময় তিনি পুলিশি অভিযানের কারণে কুষ্টিয়াতে চলে যান। ওই বছরের মার্চ মাসে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি আবার ভারতে চলে যান। বাম রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার কারণে সেখানে তিনি শান্তিতে থাকতে পারেননি। আবার পূর্ব পাকিস্তানেও ঢুকতে পারতেন না। এর কারণ হিসেবে ঐ সময় পাক আর্মি তার মাথার দাম ধার্য করেছিলো ১০ হাজার টাকা।

১৯৮৪ সালে যশোর পৌরসভার নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় পার্টি পক্ষ থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৭ সালে তিনি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হন। ১৯৯০ সালের মে মাসে তিনি শ্রম ও জনশক্তি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। সরকার পতনের ফলে ১৯৯১ সালে তাকে জেলে যেতে হয়। ১৯৯১ এর শেষে জাতীয় পার্টির মহাসচিব হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর পার্টির চেয়ারম্যান জেনারেল এরশাদের সাথে তার মতবিরোধ হয়। এ সময় বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তাকে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির মধ্যদিয়ে তার দলকে সহযোগিতা করার প্রস্তাব দেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তাকে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে তিনি নির্বাচন বয়কট করেন।
২০০৫ সালে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা খালেদুর রহমান টিটোকে তার দলে যোগদানের জন্য আহবান জানান। ২০০৬ সালে ১১ জানুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের করে প্রায় ২বছর শাসনকার্য চালায়। অবশেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ সালের ২৯ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করলে যশোর থেকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে নমিনেশন পান আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আলী রেজা রাজু। কিন্তু কিছু দিন পর মি. রাজুর নমিনেশন প্রত্যাহার করে খালেদুর রহমান টিটোকে যশোর সদর আসনে নমিনেশন দেয়া হয়। খালেদুর রহমান টিটো তার প্রতিপক্ষ বিএনপিনেতা, সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামকে নির্বাচনে পরাজিত করে যশোর সদর আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের দিকে খালেদুর রহমান টিটোর পরিবারের সাথে ঘনিষ্ট ব্যবসায়ী মফিজুর রহমান জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে মরদেহ আনার জন্য সিএমএইচ এ অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে পরিবারের সদস্যরা গেছেন। মরদেহ আসার পর পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও রাজনৈতিক সহকর্মীদের সাথে আলোচনা করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

খালেদুর রহমান টিটো কয়েক মাস আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ঢাকায় চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়ার পর তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন। পরে তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে ভারতে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরে কিছুদিন বাড়িতে ছিলেন। সেখানে গত বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় অসুস্থ হলে পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু, অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে ওই সময়ই যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচএ) এ স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন বর্ষিয়ান এ রাজনীতিক।খালেদুর রহমান টিটো ছিলেন সাবেক এমপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন।

রাতদিন সংবাদ

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত