Saturday, May 18, 2024

যশোর কারাগারকেন্দ্রীক প্রতারক চক্র সক্রিয়,বন্দি স্বজনদের ভয়দিয়ে টাকা দাবি চলছেই

- Advertisement -

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারকেন্দ্রিক একটি প্রতারকচক্র বন্দিদের স্বজনদের ভয় দেখিয়ে হয়রানি করছে। বন্দিরা অসুস্থ, মারামারিতে লিপ্ত হয়েছে, মামলা হবে, অন্য কারাগারে চালান করে দেয়া হবে ইত্যাদি কথা মোবাইলে স্বজনদের কাছে বলে ভয় দেখানো হয়। হাতিয়ে নেয়া হয় অর্থ। গত বুধবারও এ ধরণের ঘটনা ঘটেছে। করোনার কারণে বন্দিদের সাথে স্বজনদের সাক্ষাত বন্ধের সুযোগকে পুঁজি করে তারা বোপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে একাধিক অভিযোগ থাকলেও প্রতারক চক্রের সদস্যরা রয়েছে ধরা ছোয়ার বাইরে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত ওইসব প্রতারকদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন সবাই। বারান্দিপাড়া এলাকার গৃহবধূ জ্যোতি জানান, তার স্বামী মুকুল কাজী তিন মাস একটি মামলায় ভেতরে রয়েছেন। বুধবার বিকেল চারটার ০১৪০০১৮৫২২৬ নম্বর থেকে তার মোবাইলে কল আসে। ওপাশ থেকে জানানো হয়, তার স্বামী এক বন্দিকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন। আর যাকে মেরেছে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরের হাসাপাতালে ভর্তি করতে হবে। এজন্য টাকার প্রয়োজন। দ্রুত ১৫ হাজার টাকা না পাঠালে তার স্বামীকে রিমাণ্ডে নেয়া হবে। ওই বধূ জানান, প্রথম ফোনের কয়েক মিনিট পর দ্বিতীয় ফোন আসে। এবার ০১৭৭৮৫৭৩৩১৪ নম্বর থেকে ফোন করে বলা হয়, ‘আমি ভিতরে (জেলের ভিতরে) ছিলাম। আপনার স্বামীর অবস্থা খুবই ভয়াবহ। এখনই টাকা না পাঠালে হয়তো তার মুখ আর দেখতে পারা যাবে না’। এরপর একের পর এক কল আসতে থাকে তার মোবাইলে। একেস সময় একেক নাম্বার থেকে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি ফোন করে টাকা পাঠাতে বলেন। সবারই একটা কথা কারাগারের পাশে যেখানে পিসির টাকা নেয়া হয় তার পাশে নজরুলের হাতে টাকা দিয়ে আসতে হবে। বিষয়টি সন্দেহ হলে জ্যোতি তাদের আইনজীবীকে জানান। আইনজীবী বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে কোনো ঘটনা ঘটেনি জানিয়ে টাকা না দেয়ার জন্য জ্যোতিকে জানান। সর্বশেষ ০১৮৩৬৪৬৩৭৭২ নাম্বার থেকে কল দিয়ে জ্যোতিকে টাকা নিয়ে চাঁচড়া মোড়ে যেতে বলাহয়। কয়েকঘণ্টা পর ওসব নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়াও, গত বছরের ৩১ অক্টোবর যশোর সদর উপজেলার চাঁদপাড়া গ্রামের রাবেয়া বেগমের সাথেও এ ধরণের ঘটনা ঘটে। রাবেয়া জানান, ৩১ অক্টোবর বিকেলে একটি মুঠোফোন থেকে তাকে কল করে বলা হয়, তার স্বামী রকিবের হার্টে ব্লক ধরা পড়েছে। হার্টের ৯০ ভাগ নিস্ক্রিয় হয়ে গেছে। রিং না পরালে তিনি মারা যাবেন। তাকে যশোর কারাগার থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আপাতত বিকাশে এক লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরে তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশের পরামর্শে তিনি টাকা লেনদেন থেকে বিরত থাকেন। শুধু জোতি কিংবা রাবেয়া নন, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে। বন্দির স্বজনদের হয়রানি ও তাদের কাছ থেকে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিতে তৎপর রয়েছে চক্রটি।  এ বিষয়ে স্থানীয়রা বলছেন, যশোরের পুলিশ প্রশাসন এখন যথেষ্ঠ সক্রিয়। ক্লুলেস বিভিন্ন মামলায় মোবাইলফোন ট্রাকিং ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে বড় বড় অপরাধীদের শনাক্ত করছেন। এসব নাম্বার ট্রাকিং করে মুল অপরাধীদের ধরে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা। এ বিষয়ে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার শেখ মো. রাসেল জানান, গত সপ্তাহে ০১৪০০১৮৫২২৬ নাম্বার থেকে কল করে রামনগর এলাকার এক বন্দির স্ত্রীর কাছে সমস্যার কথা বলে টাকা দাবি করা হয়। তারা কারা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। বুধবারও ওই একই নাম্বার থেকে  জ্যোতি নামের আরেক বন্দি স্বজনের কাছে টাকা দাবি করেন।  তিনি শুক্রবার দুপুরে  তাদের অফিসে এসে বিষয়টি জানিয়েছেন। পরে তাকে জানানো হয়েছে তার স্বামী ভালো আছেন। তিনি বলেন, ‘নতুন কোনো বন্দি এলে আমরা প্রথমেই তাকে এসব বিষয়ে সতর্ক করি। প্রতিনিয়ত মাইকিং করে দর্শনার্থীদের প্রতারক হতে সাবধান থাকতে বলা হচ্ছে’। এ বিষয়ে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান বলেন, এ রকম অভিযোগ মাঝেমধ্যে তারা পান। বিষয়টি নিয়ে তারাও বিব্রত। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করবেন বলে তিনি জানান।তিনি আরও বলেন, কেউ অসুস্থ হলে সরকারিভাবে তার চিকিৎসা করা হয়। একইভাবে কেউ যদি মারামারি করে তার বিরুদ্ধে কারা আইনে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এখানেও টাকা নেয়ার কথা অবান্তর। করোনার কারণে বন্দি সাক্ষাত বন্ধ থাকার সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে প্রতারক চক্রের সদস্যরা।

বিশেষ প্রতিনিধি

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত