কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কয়া মহাবিদ্যালয়ের কমিটি নিয়ে কোন্দলের জেরে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় কয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনিসসহ সংগঠনটির আরও ২ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় আরো একজন পলাতক রয়েছে।
শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) বিষয়টি জানিয়ে জেলার পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত বলেন, কলেজের কমিটি নিয়ে বর্তমান সভাপতির সঙ্গে স্থানীয় একটি গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলছিলো। এরই জেরে বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) রাত ১টার সময় কয়া ইউনিয়নের যুবলীগ সভাপতি আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে চারজন বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুর করে। বাঘা যতীনের ভাস্কর্যের নাক ও ডান গালের কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়। নৈশপ্রহরী খলিলুর রহমান এটি দেখে ফেলেন এবং পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে এ কথা জানান তিনি।
শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে আনিস, হৃদয় ও সবুজকে গ্রেপ্তার করা হয়। এখনো পলাতক রয়েছে বাচ্চু নামের আরেক যুবলীগ কর্মী। ভাঙচুরের ঘটনায় কুমারখালী থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ হারুন উর রশিদ।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাতের কোনো এক সময় উপজেলার কয়া মহাবিদ্যালয়ে স্থাপিত ভাস্কর্যটির নাক ও ডান গালের কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়। শুক্রবার সকালে বিষয়টি নজরে আসে। পরে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়া মহাবিদ্যালয়ে অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ, কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিজামুল হক চুন্নু, নৈশ প্রহরী খলিলুর রহমান ও কয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনিসুর রহমানকে আটক করা হয়।
উল্লেখ্য, মাত্র ৩৬ বছর বয়সে ১৯১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ইংরেজ পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে নিহত হন বিপ্লবী বাঘা যতীন। কয়া গ্রামে বাঘা যতীনের বাস্তুভিটায় কয়া মহাবিদ্যালয়ে কয়েক বছর আগে স্থাপন করা হয় তার আবক্ষ ভাস্কর্যটি।
এর আগে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ঢাকার ধোলাইড়পাড়ে বঙ্গবন্ধুর একটি বড় আকৃতির ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু এর বিরোধিতা শুরু করেন কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক বিভিন্ন সংগঠনের জোট হেফাজতে ইসলামের নেতারা। এরপর প্রতিবাদে রাস্তায় নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন, লেখক-অধ্যাপক, শিল্পী-সাহিত্যিকরা।
এসব ঘটনার মধ্যেই গত ৪ ডিসেম্বর রাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন একটি ভাস্কর্যের ডান হাত, পুরো মুখমণ্ডল ও বাম হাতের অংশবিশেষ ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা।