যশোরের মণিরামপুরের ঢাকুরিয়া এলাকায় ডিস লাইনের দুই কর্মচারিকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় এসেছে চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক তথ্য। একটি মেয়েলি ঘটনার জের ধরে এই জোড়া হত্যাকান্ড। খুন হওয়ার আগে আহাদ খুন করে সহকর্মী বাদলকে। আর আহাদকে খুন করে ভাড়াটে খুনী হিসেবে আসা জাহিদ হাসান ওরফে মানিক। এই মানিককে আটক করে রিমান্ড চাইলে ৩ দিন মঞ্জুর করেছে আদালত।
১৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় ঢাকুরিয়া ও বলরামপুরে মধবর্তী নিউসোনা ব্রিক্সের পাশে কুপিয়ে হত্যা করা হয় জয়ন্তা গ্রামের লুকমান ওরফে নিকমল মোল্লার ছেলে আব্দুল আহাদ মোল্লা (২৫) ও প্রবাসী আক্তার হোসেন ওরফে আকু গাজীর ছেলে বাদল হোসেন (২২)। নিহতরা দুজন সম্প্রর্কে প্রতিবেশি চাচাতো ভাইও ছিলেন। নিহত আহাদ ও বাদল রুপদিয়া একটি ডিস ববসায়ীর অধীনে ডিস ও নেট কর্মচারি হিসেবে কাজ করায় তারা সহকর্মীও ছিলেন। ঘটনার কয়েকদিন আগে বাদল একটি নতুন মোটরসাইকেল কেনেন। ইন্টারনেট ব্যবসার পাশাপাশি তিনি ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতেন। ১৫ অক্টোবর সন্ধ্যার পরে বাদল ও আহাদ বসুন্দিয়া জয়ন্তা বাজারে কেরাম বোর্ড খেলার সময় ফোন আসে। তারা একই সাথেই বের হয় ওই মোটরসাইকেলে। ঘন্টা খানেক পরে তাদের কুপিয়ে হত্যার খবর আসায় ধারনা করা হচ্ছিল মোটর ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে কে বা কারা এই হত্যাকান্ড ঘটাতে পারে। তবে ডিবির তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে চলমান তদন্তে আটক হয় যশোরের চাউলিয়া গ্রামের চান মিয়ার ছেলে জাহিদ হোসেন মানিক (২৩)। আটক মানিক গোয়েন্দা পুলিশকে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য থেকে জেলা গোয়েন্দা শাখার ডিবি জানিয়েছে, নিহত বাদল একাধিক মেয়ের সাথে প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে তুলে অনৈতিকতা করত। আর এ বিষয়ে কাছের মানুষ হিসেবে আহাদ মোল্লা বাধ সাধত। বাদল আহাদের পরামর্শ না শুনে ক্রমেই খারাপ পথে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হন আহাদ। আহাদ হুমকি দেয় না শুধরালে বাদরলে স্ত্রীকে সব বলে দেবে। একই হুমকি দিয়ে প্রায়ই আহাদ কথা বলত বাদলের সাথে। এতে করে আহাদ শয়েস্তা করার জন্য বাদল তার পূর্ব পরিচিত ওই মানিকের সাহায্য চায়। ঘটনার দিন বাদল ফোন করে রপদিয়া বটতলা আসতে বলে মানিককে। এদিকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে আহাদকে মোটরসাইকেলে তুলে নেয় বাদল। বটতলা থেকে বাদল মোটরসাইকেল চালাতে দায়িত দেয় মানিককে। মাঝে বসানো হয় আহাদকে। আর পেছনে বসে বাদল। ঘটনাস্থল ঢাকুরিয়া এলাকায় নিউ সোনা ব্রিক্সের পাশে নির্জন এলাকায় পৌঁছে পেছন থেকে আহাদকে ছুরিকাঘাত শুরু করে বাদল। দু একটি আঘাত করার পর চাকুটি হাত দিয়ে ধরে ফেলে আহাদ। এরপর জখম আহাদ ওই চাকু দিয়েই বাদলকে কোপানো শুরু করে। এসময় মোটরসাইকেলের স্ট্রাট ছিল, লাইট জ¦লছিল। আহাদ লাইট সুইজ বন্ধ করে আবারো বাদলকে ধাওয়া করে। পালানোর চেষ্টায় দৌঁড়াতে গিয়ে পড়ে যায় বাদল। সেময় আহাদ আবারো আঘাত করে গলা কেটে হত্যা করে বাদলকে। এদিকে আগে কোপ খাওয়া আহাদ মাটিতে পড়ে যায়। এদিকে নিজে হত্যার পরিকল্পনা ও হত্যা ঘটনায় ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে মানিক ওই চাকু দিয়ে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে আহাদকে। এরপর সে মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়।
এদিকে এই জোড়া খুনের রহস্য উদ্ঘাটনের সাফল্য তুলে ধরে ২২ অক্টোবর দুপুরে যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন তার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন। তিনি জানান জোড়া হত্যাকা-ের ঘটনাটি ছিল ক্লুলেস, চাঞ্চল্যকর ও স্পর্শকাতর। এসব বিবেচনায় এটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবিকে। সেই অনুযায়ী ডিবির কর্মকর্তারা তৎপরতা শুরু করেন। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে আটক করা হয় জাহিদ হাসান ওরফে মানিককে। তার স্বীকারোক্তিতেই ঘটনাস্থলের আধা কিলোমিটার দুরের মোশারফ হোসেন ওরফে টুকু মেম্বারের পুকুর থেকে নিহত বাদল হোসেনের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। এরপর ঘটনাস্থলের পাশের আলতাফ হোসেনের জমি থেকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত একটি বার্মিজ চাকু উদ্ধার হয়।
ব্রিফিংয়ের সময় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অপরাধ সালাউদ্দিন সিকদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডিএসবি তৌহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম রব্বানী, মণিরামপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার শোয়েব আহমেদ, ডিআইও ১ এম মশিউর রহমান, ডিবি ওসি সোমেন দাশ প্রমূখ। এদিকে বিকেলে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে মানিককে আদালতে চালান দিলে ৩ দিন মঞ্জুর হয়েছে।
বিশেষ প্রতিনিধি