Saturday, May 18, 2024

যশোর সদরে নীরার জয়

- Advertisement -

বিচ্ছিন্ন দু’ একটি ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের উপনির্বাচন। বিপুল বিজয় লাভ করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী নুরজাহান ইসলাম নীরা। তিনি দু’ লাখ ৬৩ হাজার ছয়শ’ ২৫ ভোটের ব্যবধানে একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী নুর উন নবীকে পরাজিত করেছেন। নির্বাচনে নীরা পেয়েছে দু’ লাখ ৭৬ হাজার ১৯ ভোট এবং নুর উন নবী পেয়েছেন ১২ হাজার তিনশ’ ৯৪ ভোট।
ভোটের পর পরই সমস্ত ব্যালটপেপার কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গণনার পর রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ। এসময় নুরজাহান ইসলাম নীরার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট অ্যাডভোকেট মুস্তাফিজুর রহমান মুকুল উপস্থিত থাকলেও নুর উন নবীর কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবির, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরাও এসময় কড়া পাহারায় ছিলেন।
তিনি জানান, নিবাচনে মোট ভোট পড়েছে দু’ লাখ ৯০ হাজার একশ’ ৯৪টি। শতাংশের হিসেবে যা ৫১ দশমিক ৭৭। এর মধ্যে বাতিল ভোটের সংখ্যা এক হাজার সাতশ’ ৮১টি। বৈধ ভোট দু’ লাখ ৮৮ হাজার চারশ’ ১৩। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নুরজাহান ইসলাম নীরা দু’ লাখ ৭৬ হাজার ১৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী নুর উন নবী পেয়েছেন ১২ হাজার তিনশ’ ৯৪ ভোট।
নির্বাচন পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, ভোট হয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে। বিএনপির অভিযোগ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে জনগণকে ভোট দিতে দেয়া হয়নি।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু করা হয় যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ। যা বিরতিহীনভাবে চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। নির্বাচনে সারাদিন কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কম লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুবই কম।
নির্বাচন চলাকালীন কয়েকটি কেন্দ্রে প্রতিপক্ষের হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতারা। জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে দেয়া লিখিত অভিযোগে বিএনপি প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট দেলোয়ার হোসেন খোকন দাবি করেছেন একশ’ ৭৫টি ভোট কেন্দ্রের একশ’ ৫০টিতে তাদের প্রার্থীর কোনো এজেন্টকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। বাকি ২৫টিতে এজেন্টরা প্রবেশ করার সুযোগ পেলেও সকাল ১১টার পর তাদেরকেও বের করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি ভোট হয়েছে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে।
বেশকিছু কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায় ভোটারদের উপস্থিতি কম। নির্ধারিত সীমানার বাইরে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের কর্মীদের নির্বাচনী বুথ লক্ষ্য করা গেছে। সেখানেও কর্মীরা প্রায় অলস সময় কাটিয়েছেন। প্রতিটি কেন্দ্রেই বিএনপির কয়েকজন কর্মী দেখা গেলেও তাদের কোনো টেন্ট লক্ষ্য করা যায়নি। কর্মীরাও ছিলেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে। বুথগুলোর ভেতরেও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে।
সকাল ১০টার দিকে কাশিমপুর ইউনিয়নের মীরাপুর দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের দু’প্রুপের সংঘর্ষে দলের ইউনিয়ন কমিটির সহসভাপতি শাহাজান আলীসহ (৩৫) পাঁচজন আহত হয়েছেন। শাহজাহান আলী গুরুতর আহত অবস্থায় যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
এছাড়া পৃথক নির্বাচনী সহিংসতায় আহত আরও চারজন গুরুতর অবস্থায় যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এরা হলেন বসুন্দিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গাইদগাছী গ্রামের কাজী আব্দুল আজিজ ইলাহী (৪২), তার ছেলে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি কাজী মঞ্জুর এলাহী সনি (২৪), যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী তৌফিক এলাহী টনি (২৭) এবং নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের সিরাজসিংহা গ্রামের বিএনপি কর্মী আতিয়ার রহমান (৩৫)। সকাল ১০টায় বসুন্দিয়া ইউনিয়নের কাজী আব্দুল আজিজ ইলাহী গাইদগাছী ভোট কেন্দ্রে গেলে নৌকার সমর্থকেরা আব্দুল আজিজ ও তার দু’সন্তানকে মারপিট করে।
সকাল ১১টার দিকে বিএনপি কর্মী আতিয়ার রহমান সিরাজসিংগা সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয় মাঠে ভোট দিতে গেলে কিছু ব্যক্তি তাকে জানান তার ভোট হয়ে গেছে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ওই যুবকেরা তাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেন।
আরবপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলাম সকালে বালিয়াভেকুটিয়া কেন্দ্রে ভোট দিতে গেলে তাকে মারপিট করেন নৌকা প্রতীকের সমর্থকেরা।
এদিকে, পৌর কাউন্সিলর সন্তোষ দত্তের বিরুদ্ধে সকাল ১০টার দিকে ইসলামিয়া বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারকে মারপিট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার পর পরই প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। কিন্তু, কাউন্সিলর সন্তোষ দত্তকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে একটা সংবাদ শুনে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়েছিলাম। আর কিছু জানিনা। বিষয়টি রিটার্নিং অফিসার বলতে পারবেন’।
এদিকে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী নুরজাহান ইসলাম নীরা সকাল সাড়ে ১১টায় সেবা সংঘ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে, বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী নুর উন নবী সকাল নয়টায় শংকরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট প্রদান করেন।
অন্যদিকে, যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সেবা সংঘে, যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার দুপুরে সেবা সংঘে, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন দুপুর সাড়ে ১২টায় বিএড কলেজ কেন্দ্রে, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল সাড়ে ১১টার দিকে সেবা সংঘে, যশোর পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু দুপুর ১২টায় পুলিশলাইন কেন্দ্রে ভোট প্রদান করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত সাড়ে ১১টার দিকে বিএড কলেজ কেন্দ্রে এবং জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম সকাল ১১টায় এনএম খান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট প্রদান করেন।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরজাহান ইসলাম নীরা, যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার, জেলা পরিষদের সদস্য সাইফুজ্জামান পিকুল, পৌরমেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ভোট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, নির্বাচন হয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর পরিবেশ ছিল না। মানুষ ভোট দিয়েছেন উৎসবমুখর পরিবেশে। এই ভোট আরও একবার প্রমাণ করেছে, মানুষ মনেপ্রাণে আার বিএনপিকে চায় না। দেশের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে চলেছে তার প্রতি পূর্ণ আস্থাই রয়েছে সাধারণ মানুষের।

বিশেষ প্রতিনিধি

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত