Sunday, May 12, 2024

পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, কী ছিল তার অপরাধ?

- Advertisement -

পৃথিবীর সবচেয়ে কনিষ্ঠতম মৃত্যুদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত আসামী ছিল ১৪ বছরের একটি ছেলে। তার নাম জর্জ স্টিন্নি জুনিয়র, আমেরিকার সবচেয়ে কনিষ্ঠতম মৃত্যুদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত আসামী।মৃত্যুদণ্ডের সময় ছেলেটির বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। ১৯৪৪ সালের ২৩শে মার্চ ১১ বছরের বেট্টি এবং ৭ বছরের মেরি নামের দুটি শ্বেতাঙ্গ মেয়ে নিঁখোজ হয়। পরের দিন অর্থাৎ ২৪শে মার্চ জর্জ স্টিন্নির বাড়ির পাশ থেকে ছোট্ট মেয়ে দুটির মৃতদেহ উদ্ধার হয়। হাতুড়ি জাতীয় ভারী কিছুর দ্বারা মেয়ে দুটির মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়েছিলো। এই হত্যাকাণ্ডের খুনী সন্দেহে পুলিশ জর্জকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের কারণ ছিলো বেট্টি ও মেরি ২৩ তারিখ বিকেলবেলা সাইকেল চালিয়ে জর্জের বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তারা ফুল কুড়োতে যাওয়ার সময় জর্জকে ‘ম্যাপল’ এর রাস্তা জিজ্ঞেস করেছিলো। এই কথোপকথনের কারণেই পুলিশ সন্দেহ করে জর্জ স্টিন্নিই তাদের হত্যা করেছে।পুলিশ হেফাজতে জর্জ মোট ৮১ দিন ছিল। এই ৮১ দিনের ৮০ দিন সে তার মা, বাবার সঙ্গে দেখা করতে পারেনি। কৃষ্ণাঙ্গ যুবক দুজন শ্বেতাঙ্গকে হত্যা করেছে, এ কী কম বড় ব্যাপার? জর্জের মা-বাবাও সামাজিক বয়কটের মুখে পড়ে ছেলের সঙ্গে শেষের ৮০ দিন আর দেখা করতে পারেননি।১৯৪৪ এর ১৪ই জুন জর্জের বিচার শুরু হয়। মাত্র দুই ঘণ্টার সেই বিচার সভায় সমস্ত শ্বেতাঙ্গ বিচারকদের নিয়ে তৈরি জুরি বোর্ড জর্জকে কোনোরকম আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়নি। জর্জের পক্ষে কোনো আইনজীবি, তার মা বাবা কেউ সেখানে উপস্থিত হতে পারেনি। এই বিচার পর্বে জর্জ স্টিন্নি কেবল একটি বাইবেল হাতে বারবার বলেছে সে নির্দোষ। জুরি বোর্ডের সদস্যরা তার কোনো কথায় কর্ণপাত না করে তাকে বেট্টি ও মেরির হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত করে ইলেকট্রিক চেয়ারে মৃত্যুদন্ডের নির্দেশ দেন।আদালতের এই রায়ের পর জর্জের পরিবার, তার মা বাবা, কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকারের জন্য তৈরি সংগঠন ছেলেটির বয়স মাথায় রেখে সেখানকার গভর্নরের কাছে মৃত্যুদণ্ড রদের আবেদন করলে গভর্নর জনস্টন নাকচ করেন।তিনি বলেন, আপনারা ওর প্রাণভিক্ষা করছেন? আপনারা জানেন না ও কী বিভৎস অন্যায় করেছে? বড় মেয়েটিকে ধর্ষণ করার চেষ্টা চালায় জর্জ। এরপর ছোট মেয়েটিকে হত্যা করে। বড় মেয়েটি সুযোগ না দেয়ায় তাকেও হত্যা করে।

এরপর মৃতদেহের সঙ্গেই সঙ্গমে লিপ্ত হয় জর্জ। প্রথমবার মৃত দেহটিকে ধর্ষণের ২০ মিনিট পর পুনরায় ফিরে এসে ও আবার ধর্ষণের চেষ্টা করতে যায়। তবে মেয়েটির দেহ খুব ঠাণ্ডা হওয়ায় আর ধর্ষণ করতে পারেনি। এই জঘন্য অপরাধের কোনো ক্ষমা হয় না।১৬ই জুন সন্ধ্যা ৭টা ২৫ এ জর্জকে সেল থেকে বের করে তার বাবার সঙ্গে দেখা করানো হয়। তারপর জর্জকে ইলেকট্রিক চেয়ার বসানো হয়। ৫ ফুট ১ ইঞ্চির ছোট্ট অসহায় মানুষটার হাত বাঁধা হয় চেয়ারের সঙ্গে।ইলেকট্রিক হেলমেট মাথায় পড়াতেই জর্জ কান্নায় ভেঙে পড়ে আবার বলে ‘আমি নির্দোষ’। এরপর জর্জের মুখ কালো কাপড়ে ঢেকে সাড়ে ৭ টায় ৫৩৪০ ভোল্টের ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়। দুর্ভাগা কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরটি চিৎকার করে মুহূর্তেই চুপ করে যায়। ৮ মিনিট পর জর্জকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার পুরো শরীরই তখন পুরে ছাই।এই ঘটনার ঠিক ৬০ বছর পর ২০০৪ সালে পুরো কেস স্টাডি করে নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি স্কুল ওফ’ল এর একদল আইনজীবি এই কেস পুনরায় রি-ওপেন করেন। ২০০৪-২০১৪ দীর্ঘ ১০ বছর কেস চলার পর ২০১৪ সালে বিচারকদের জুরি বোর্ড ঘোষণা করেন জর্জ স্টিন্নি নির্দোষ। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের উল্লেখযোগ্য কোনো প্রমাণ নেই। ঠিক যেমন তার ধর্ষণ করার সপক্ষেও পুলিশের কাছে কোনো প্রমাণ নেই।মারা যাওয়ার ৭০ বছর পর জর্জ স্টিন্নি নির্দোষ প্রমাণিত হয়। মৃত্যুর আগেও ছেলেটি বলেছিল ‘আমি নির্দোষ’। তার কথা কেউ শোনেনি। প্রাণভিক্ষা পায়নি ১৪ বছরের ছেলেটি।

অনলাইন ডেস্ক

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত