যশোরের চৌগাছা উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, অনিয়মের সাথে জড়িতরা যদি পার পেয়ে যায় তাহলে তারা আর সেখানে চাকরি করতে পারবেন না। কারণ তারা তখন আর কোনোকিছুর তোয়াক্কা করবেন না। চৌগাছায় বিসিআইসির সার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি না করা এবং নির্দিষ্ট এলাকায় না আনার বিষয়টি নিশ্চিত হতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি। এই কমিটিতে পাঁচজন রয়েছেন। অবস্থা বেগতিক দেখে কয়েকজন বিসিআইসি সার ডিলার ম্যানেজ মিশনে নেমেছেন। গণমাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে যাতে কোনো রকম সংবাদ প্রকাশিত না হয় সেজন্যে বেশ কয়েকজনকে ইতিমধ্যে অর্থ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া, বিসিআইসি সার ডিলারদের লাগাতার হুমকির মুখে থাকা চৌগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে রোববার রাতে চৌগাছা থানায় জিডি করেছেন।বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে যশোরের চৌগাছার তিনজন ব্যবসায়ীর বিসিআইসি সারের ডিলারশিপ বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। গত ১৪ অক্টোবর চৌগাছাউপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি এ সিদ্ধান্ত নেয়। যা রেজুলেশন করে জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটিতে পাঠানো হয়।যে তিনটি ডিলারশিপ বাতিলের সুপারিশ করা হয় সেগুলো হচ্ছে, নারায়নপুর ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার ইউনুচ আলীর মালিকানাধীন মেসার্স ইউনুচ আলী, পাতিবিলা ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার ফরিদুল ইসলামের মালিকানাধীন মেসার্স ফরিদুল ইসলাম এবং পৌরসভার বিসিআইসি সার ডিলার আতিকুর রহমান লেন্টুর মালিকানাধীন মেসার্স শয়ন ট্রেডার্স।লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করার কারণ হচ্ছে, চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা কৃষি অফিসার গত ২০ আগস্ট মেসার্স শয়ন ট্রেডার্সের গুদাম পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখেন, ডিলার ১৭ মেট্রিকটন ডিএপি সারের আগমনী বার্তা প্রদান করলেও তিনি তা গুদামে তোলেননি। এ কারণে মেসার্স শয়ন ট্রেডার্সের সার বিক্রি বন্ধের আদেশ দেন এবং কৈফিয়ত তলব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশ উপেক্ষা করে শয়ন ট্রেডার্স সার বিক্রি অব্যাহত রেখে ধৃষ্টতা দেখায় বলে রেজুলেশনে উল্লেখ করা হয়। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর বেশি দামে সার বিক্রি করা, মূল্য তালিকা না টাঙানোসহ বিভিন্ন অনিয়মে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মেসার্স শয়ন ট্রেডার্সসহ তিনজন সার ডিলারকে জরিমানা করেন। এতকিছুর পরও তারা সংশোধিত না হওয়ায় ডিলারশিপ বাতিলের উদ্যোগ নেয় উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি। এই কমিটি রেজুলেশন আকারে প্রস্তাব পাঠায় জেলা কমিটিতে। রোববার দুপুরে জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় তিন ডিলারের লাইসেন্স বাতিলের বিষয়ে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাসকে। এছাড়া, অন্যান্য সদস্যরা হলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান, বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এনমুল হক, অ্যাসোসিয়েশনের যশোর জেলার সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান টুকুন ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচ উদ্দীন। তাদেরকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।চৌগাছা উপজেলার ২৪ জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা লিখিতভাবে অভিযোগ করেন বিসিআইসি সার ডিলারদের বিরুদ্ধে। তাদের বক্তব্য, ডিলাররা সার বিক্রির কোনো বিধিবিধান মানছেন না। অধিকাংশ ডিলার কোথায় সার বিক্রি করছেন তার কোনো হিসেব দিচ্ছেন না। অনেকেরই গুদাম নেই। দু’ একজনের যা আছে তাতে বরাদ্দকৃত সার পুরোপুরি রাখা যায় না। গত ২০ আগস্ট শয়ন ট্রেডার্স নামে এক বিসিআইসি ডিলার ১৭ মেট্রিকটন ডিএপি সার উত্তোলনের আগমনী বার্তা দিলেও ওই ডিলারের গুদামে গিয়ে কোনো সার দেখা যায়নি। তখন উত্তোলিত সার বাইরে বিক্রি করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এরপর উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি এবং সদস্য সচিব শয়ন ট্রেডার্সকে সার বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই নির্দেশ মানেনি শয়ন ট্রেডার্সের মালিক। গত ১৭ সেপ্টেম্বর বেশি মূল্যে সার বিক্রি করা, মূল্য তালিকা না টাঙানোসহ বিভিন্ন অনিয়ম দেখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মেসার্স শয়ন ট্রেডার্সকে ছয় হাজার, মেসার্স রুবেল এন্টারপ্রাইজকে তিন হাজার এবং মেসার্স সেন এন্টারপ্রাইজকে চার হাজার টাকা জরিমানা করেন। এরপর থেকে ডিলাররা কৃষি অফিসার রইচ উদ্দীনের উপর চটে যান। তারা তাকে চৌগাছা থেকে বিতাড়িত করার অপচেষ্টা শুরু করেন। এমনকি নানা ধরনের হুমকি দেন বলে অভিযোগ কৃষি কর্মকর্তা রইচ উদ্দীনের। বর্তমানে জীবনাশঙ্কায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এ কারণে শেষ পর্যন্ত জিডি করতে বাধ্য হয়েছেন এই কৃষি কর্মকর্তা।এদিকে, নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে কয়েকজন সার ডিলার বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে যাতে কোনো সংবাদ প্রকাশ এবং লাইসেন্স বাতিল না হয় সেজন্যে কয়েকজনের দারস্থ হয়েছেন তারা। এসব ব্যক্তির মধ্যে কয়েকজন সাংবাদিকও রয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। তারা নাকি অনিয়মের সাথে জড়িত সার ডিলারদের অভয়ও দিয়েছেন।
রাতদিন নিউজঃ