লালনের গানে গানে লালনকে স্মরণ করলো যশোরের ভক্তরা। ঘোষিত সময়ের বেশ কিছুক্ষণ পর শুরু অনুষ্ঠান। রাত গভীর হচ্ছে। কিন্তু গান শোনার আকাঙ্খা যেন কমতি ছিলনা শ্রোতাদের। অনুষ্ঠান শুরুর পর শিল্পীরা একের পর এক লালনের আবেশ ছড়িয়ে দেন হল জুড়ে। যে আবেশ ছড়িয়ে যায় কান থেকে মনে। শনিবার লালনের তিরোধান দিবসে শিল্পকলা আয়োজিত একদিনের স্মরণ অনুষ্ঠানের রূপ ছিল এমনই।শিল্পকলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলুর স্বাগত বক্তৃতার পর বসে গানের আসর। শিল্পী রীপা রায়, রুবেল হোসেন, আজিজুল ইসলাম আজিজ, মকবুল বাউল, পপি খাতুন, পরিতোষ বাউল, জাহাঙ্গীর হোসেন এবং মজিদ বাউল সুরের পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন লালনের প্রতি। শিল্পীদের সাথে দোতারায় বিকাশ শীল ও নকুল দাস, ঢোলে মিলন দাস, বাঁশিতে হাবিবুর রহমান জেয়াদ, তবলায় অমিতাভ রাজ এবং হারমোনিয়ামে সঙ্গত করেন তাওহিদুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন কামরুল হাসান রিপন। পোশাক, ভাব, নৃত্যের তাল সবকিছুতেই শিল্পীদের ছিল স্বকীয়তা। গান নির্বাচনের বিষয়ও ছিল বিশেষ শিক্ষনীয়। প্রত্যেক শিল্পী দু’টি করে গান পরিবেশন করেন। সাধু সঙ্গ ভালো সঙ্গ আমার হলো কই; ওই চরণের দাসের যোগ্য নই; এমন মানব জনম; ক্ষম অপরাধ ওহে দীননাথ কিংবা ভবে কেউ কারো নয় এমন দুখের দুঃখী গানগুলো নতুন করে মনে করায় মানুষের দৃশ্যমান শরীর এবং অদৃশ্য মনের মানুষ পরস্পর বিচ্ছিন্ন। সকল মানুষের মনে ঈশ্বর বাস করেন। সবকিছুর ঊর্ধ্বে তাই মানবতাবাদকে সর্বোচ্চ স্থান দিতে হবে। ধর্ম, জাত, বর্ণ, লিঙ্গের ঊর্ধ্বে থেকে রহস্যময়, অজানা এবং অস্পৃশ্য সত্ত¡া মানব আত্মাকে আধ্যাত্মিক ভাবধারায় দীক্ষা দিতে হবে।প্রসঙ্গত লালনের তিরোধান দিবস উপলক্ষে প্রতিবছর বৃহৎ আয়োজনে কুষ্টিয়ায় লালনের আঁখড়া বাড়িতে স্মরণ উৎসব হয়। এ বছর করোনা মহামারির কারণে সে আয়োজন হয়নি। তাই বলে থেমে নেই এ মহাত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। সাংস্কৃতিক দায়িত্ববোধ থেকে সংস্কৃতির পীঠস্থান যশোরে এ আয়োজন করে শিল্পকলা একাডেমি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সমগ্র আয়োজন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্যে কর্তৃপক্ষের বিশেষ প্রচেষ্টা ছিল। গান আর আলোচনায় অনুষ্ঠান শুরুর আগ থেকেই অডিটোরিয়াম এবং এর বাইরে লালন ভক্তদের মিলনমেলা চোখে পড়ে সবার। গুরু শিষ্য পরম্পরা কিংবা সাঁইজির নির্দেশিত জীবনাচারণ ক্ষণিকের মিলন মেলায় সবই মূর্ত হয়ে ওঠে।
রাতদিন সংবাদ