Sunday, May 12, 2024

কালীগঞ্জে কন্যা সন্তানের মা হলেন মানসিক প্রতিবন্ধি, দায়িত্ব নিলেন জেলা প্রশাসন

- Advertisement -

অজ্ঞাত মানসিক প্রতিবন্ধী।গতকাল শুক্রবার বিকেলে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফুটফুটে কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন অজ্ঞাতনামা মানসিক প্রতিবন্ধী ওই নারী।খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে আসেন ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ। তিনি হাসপাতালেই অজ্ঞাতনামা ওই নারীর নবজাতককে বুকে তুলে নিলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্ণা রানী সাহা।ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও পত্রিকার সংবাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বিসয়টি অবগত হয়েছেন। এ বিষয়টির দেখভাল করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। খবর শুনে শুক্রবার সন্ধ্যায় কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে নবজাতক ও নবজাতকটির মায়ের সকল চিকিৎসার খরচ জেলা প্রশাসন বহন করবেন।এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো অর্থ প্রদান করা হয়। সদ্যজাত নবজাতকের চিকিৎসার জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর আগে শুক্রবার সকালে প্রসব যন্ত্রনা শুরু হলে নিজ বাড়িতে আশ্রয় ও সেবাদানকারী উপজেলার ময়ধরপুর গ্রামের দিনমজুর আমজাদ ছাকিরন দম্পতি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মিডিয়া কর্মীদের সহযোগিতায় কালীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গুরুত্বের সঙ্গে চেষ্টা করার পর বিকেল চারটার দিকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। অজ্ঞাত অসহায় ওই নারীর চিকিৎসার যাবতীয় খোঁজ-খবর নিচ্ছেন স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার, ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূবর্ণা রানী সাহা। আনুমানিক ২২-২৩ বছরের পরিচয়হীন এক মানষিক প্রতিবন্ধী মহিলা উপজেলার কোলাবাজারে ঘোরাফেরা করতেন। কখনও ময়লা কাপড় চোপড় শরীরে জড়িয়ে আবার কখনও অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় থেকে মুখে বিড় বিড় করে কি যেন বলতেন। কেউ কিছু বললে কখনও তেড়ে আসতেন। আবার কখনও দেখা যায় ঠাণ্ড মেজাজে। কিন্তু গত সপ্তাহ খানেক আগে  ময়ধরপুর গ্রামের রাস্তার পাশে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে ছিলেন। চোখ মেলে তাকাতে পারলেও তার ছিল না কোনও নড়াচড়া। সেই সময়ে পথচারী ও গ্রামের লোকজনের ভিড় শুরু হয়। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় কমতে থাকে। কিন্তু অসহায় অসুস্থ মানুষটি তো কারও না কারও সন্তান বা বোন। এটা ভেবে বিবেকের তাড়নায় ওই গ্রামের আমজাদ আলী, আব্দুর রশিদসহ বেশ কয়েকজন তাকে নিয়ে কালীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগী দেখেই বললেন মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা। এখন তার পর্যাপ্ত খাওয়া-দাওয়া আর বিশ্রাম দরকার। দেয়া হলো প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা। এরপর বেশ খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠতেই বেডে শুয়েই শুরু করেন অসহ্য পাগলামী। অস্থির করে তোলে গোটা হাসপাতাল এলাকা। বাধ্য হয়ে গাড়ি ভাড়া করেই আবার তাকে নিয়ে এলাকায় যান। এরপর আশ্রয় দেয়ার ইচ্ছা অনেকের থাকলেও অস্থিরতার কারণে সকলেই এড়িয়ে যান। কিন্তু এমন অবস্থায় অসুস্থ পাগলীকে বিবেকের তাড়নায় আর বাজারে ছেড়ে দিতে পারেননি দিনমজুর আমজাদ আলী। গর্ভের সন্তানের কথা চিন্তা করে তিনি নিজ বাড়িতে নিয়ে আশ্রয় দিয়ে সেবা-যত্ন করতে থাকেন। দিনমজুর আমজাদের অভাবের সংসার হলেও তার স্ত্রী ছাকিরন নেছা নিজের সংসারের সদস্যের মতো করে সেবা-যত্ন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তাদের এই মহত্বের বিষয়টি তুলে ধরে দিনমজুর আমজাদের মানবিকতার দৃষ্টান্ত শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।কালীগঞ্জ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আফসানা পারভিন জানান, শিশুটি ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে স্বাভাবিক না থাকায় ছোট্ট একটি অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান বের করা হয়েছে। তবে মা ও নবজাতক এখন সুস্থ আছেন। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূবর্ণা রানী সাহা আরটিভি নিউজকে জানান, খবর পেয়েই তিনি হাসপাতালে যোগাযোগ করে অসহায় মায়ের ব্যাপারে কথা বলেছেন। যেকোনো প্রয়োজনেই তিনি তার পাশে থাকবেন।

অনলাইন ডেস্ক

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত