Tuesday, May 21, 2024

যশোরে যুবলীগনেতা আলমগীর হত্যার ছয়বছর পর মামলার অন্যতম প্রধান আসামি ফসিয়ার আটক

- Advertisement -

দীর্ঘ ৬ বছর পালিয়ে থেকেও শেষ রক্ষা হয়নি যশোর সদর উপজেলা যুবলীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক আলমগীরের হত্যার প্রধান চারজনের একজন ফসিয়ার রহমানের।  আটক ফসিয়ার রহমান কাজীপুর গ্রামের হাতেম আলী গাজীর ছেলে।সোমবার ভোর রাতে একই উপজেলার কাজীপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ তাকে আটক করে। এদিকে আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারী থাকা এই হত্যা মামলার অপর তিন প্রধান আসামি রফিকুল ইসলাম বিসমিল্লাহ, মহিদুল ইসলাম ও মহব্বত আলী এখনো রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও স্বজন সূত্র মতে, যশোর সদর উপজেলা যুবলীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন এলাকার অসহায়, নিরীহ এবং সাধারণ লোকজনের ন্যায় বিচার আদায়ে সচেষ্ট ছিলেন। পাশাপাশি মাদক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেও ছিলেন সরব। ফলে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মাদক কারবারীসহ অপরাধিরা একত্রিত হয়ে দুনিয়া থেকেই আলমগীর হোসেনকে সরিয়ে দিতে নানা পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের ২৫ মে রাত ৮টার দিকে সদর উপজেলার রাজারহাট বাজারে অবস্থানকালে রামনগর গ্রামের বাসিন্দা রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল হাসান, শাহিন ওরফে পাগলা শাহিন, মহব্বত আলী, রফিকুল ইসলাম ওরফে বিসমিল্লাহ, অ্যাডভোকেট টিএম ওমর ফারুক, রামনগর পুকুরকুল এলাকার সুমন হোসেন ওরফে পাটালি সুমন, মানিক, রাকিব, রামনগর ধোপাপাড়ার আকাশ, একই এলাকার খাঁ-পাড়ার নাজমুল ইসলাম, মুরাদ, আহাদ, আফজাল, ওমর আলী, কাজীপুর গ্রামের ফসিয়ার রহমান গাজী, শফিক ওরফে শফিকুল, তরিকুল ইসলাম ও তফিকুল ইসলাম, সিদ্দিক, মুরাদ হোসেন ও ফরহাদ হোসেন, মহিদুল ইসলাম, আব্দুল জলিল ও তার দুই ছেলে আলম এবং আলিম, আব্দুল জব্বার খান, মফিজ, জিয়াউর রহমান, সুজন হাসান, শেখ রাসেল ইসলাম, ইয়াছিন আরাফাত ও শরফত হোসেন, আব্দুল গফুর, আকরামুল ইসলাম, শওকত হোসেন, শরিফুল ইসলাম মিন্টু, মিলন হোসেন, মুড়োলি খা’পাড়ার বিল্লাল হোসেন এবং মোশারেফ হোসেনসহ ৪০/৫০ জন সন্ত্রাসী একত্রিত হয়ে অস্ত্র, গুলি ও বোমা নিয়ে অতর্কিতভাবে আলমগীরের উপর হামলা চালায়। তাকে গুলি করে ও বোমা হামলা চালিয়ে মারাত্মক আহত করে। প্রথমে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল এবং পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বছরের ১৮ জুন তিনি মারা যান।
এই ঘটনায় মৃত্যুর আগে তার বড় ভাই আলতাফ হোসেন বাদী হয়ে ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। প্রথমে থানা এবং পরে ডিবি পুলিশের এসআই আবুল খায়ের মোল্যা মামলাটি তদন্ত শেষে ৪০ জনকে অভিযুক্ত করে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
ফলে ৬টি বছর এভাবেই চলছে। তাই বিচার পাওয়া নিয়েও সংশয়ে রয়েছে আলমগীরের পরিবার।  সেই সূত্র ধরেই গতকাল সোমবার ভোর রাতে কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই আনসারুল হকের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ফসিয়ারকে আটকের জন্য অভিযান চালান। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত রক্ষা হলোনা তার। রাতেই আটকের পর তাকে থানা হাজতে রাখা হয়। আর এদিনই তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক জামিন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন।  কিন্তু বাকি রফিকুল ইসলাম বিসমিল্লাহ, মহব্বত আলী ও মহিদুল ইসলাম এখনো পলাতক রয়েছে।  সূত্র মতে, এ মামলায় আটক আসামিদের মধ্যে কয়েকজন এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। আসামিদের জবানবন্দির ভিত্তিতে তদন্ত কর্মকর্তা ৪০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। আর চার্জশিট দাখিলের পর ও তারা প্রকাশ্যেই এলাকায় ঘোরাফেরা করছে। আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তবে এর মধ্যে যশোর সদর উপজেলার সীমানার কাছেই মণিরামপুর উপজেলার কালারহাটে বসবাস করতেন পাগলা শাহিন। মাগুরা জেলা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
সদ্য আটক অভিযুক্ত ফসিয়ার রহমান মুড়লীর পাশেই কাজীপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন।  পলাতক অন্যতম প্রধান খুনির একজন মহব্বত আলী। তিনিও কখনো বাড়ি, আবার কখনো আশপাশের আত্মীয় বাড়িতে থাকেন। অপর অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বিসমিল্লাহ কেশবপুরে বসবাস করছেন। তিনিসহ সেখানে আলমগীর হত্যার সাথে জড়িত পলাতক মহিদুল ইসলাম একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।  এছাড়া ওই খুনিদের সদর আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহম্মেদের শহরের একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায়। ফলে থেমে আছে মামলার বিচার কার্যক্রম। একের পর এক দিন ধার্য হলেও মামলার চার্জ গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না। সে কারণে বিচার কাজ দিনের পর দিন বিলম্বিত হচ্ছে। মামলার বাদী নিহতের ভাই আলতাফ হোসেন বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি যুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার না করায় আটকে আছে যশোরের আলোচিত যুবলীগ নেতা আলমগীর হত্যা মামলার চার্জ গঠন। ২০১৪ সালে জনপ্রিয় এই নেতা হত্যাকাণ্ডের পরের বছরই তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। কিন্তু মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় আর আইনি প্রক্রিয়া এগোয়নি। হত্যার শিকার আলমগীর হোসেনের পরিবারের অভিযোগ, খুনিরা এলাকায় রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবে তাদের গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ।
নিহত আলমগীর হোসেনের স্ত্রী ও রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজনীন নাহার আলমগীর বলেছেন, আইনের চোখে প্রধান চার আসামি পলাতক থাকলেও তারা প্রকাশ্যে রয়েছে। তাদের আটক করছে না পুলিশ। খুনিদের আটকের পর বিচারের কাঁঠগড়ায় দাঁড় করাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি।

বিশেষ প্রতিনিধি

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত