যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির বিতর্কিত সদস্য ও একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত এডভোকেট আমির হোসেনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের স্বীদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত ১ জুলাই সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় সমিতির আর একজন সদস্য সৈয়দ কবির হোসেন জনির বহিস্কারাদেশও প্রত্যাহার করা হয়। সেইসাথে মক্কেলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ স্বীকার করে টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়ায় নিষ্পত্তি করা হয় সদস্য রুহিন বালুজের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগটি। তবে, এডভোকেট মিজানুর রহমান বিপ্লবের বহিস্কারাদেশ সভায় বহাল রাখা হয়। সভায় উপস্থিত কার্যনির্বাহী কমিটির কয়েকজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপরিউক্ত তথ্য জানিয়েছেন। এদিকে, এডভোকেট আমির হোসেনের একের পর এক অপকর্মের সাথে যুক্ত হওয়া এবং তাকে বরখাস্ত করে ফের তা প্রত্যাহার করার ঘটনায় সাধারণ আইনজীবীদের মধ্যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকে আমিরের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানিয়েছেন।এসব সদস্যরা জানান, সভার শুরুতে বরখাস্ত তিন সদস্যর বিষয়টি উত্থাপন করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর। এ বিষয়ে প্রথম আলোচনা করেন ‘টাউট উচ্ছেদ ও শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির’ আহবায়ক ও সমিতির সহসভাপতি খোন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন মুকুল। তিনি এডভোকেট আমির হোসেনের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের বিরোধিতা করে যুক্তি উপস্থাপন করেন। পরে পক্ষে ও বিপক্ষে নির্বাহী কমিটির অপরাপর সদস্যরা আলোচনা করেন। এক পর্যায়ে এডভোকেট আমির হোসেন ও সৈয়দ কবির হোসেন জনির বরখাস্তাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। আগামী সাত জুলাই থেকে এ আদেশ কার্যকর হবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নির্বাহী কমিটি সূত্রে আরও জানা যায়, এডভোকেট রুহুল বালুজের বিরুদ্ধে সমিতিতে ৬০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দেন তার মক্কেল ফতেপুর ইউনিয়নের শাহীন কবীর। যে বিষয়ে সমিতির পক্ষ থেকে তদন্তের জন্যে কমিটি গঠন করা হয়। সভায় এডভোকেট বালুজ ও অভিযোগকারীকে হাজির করা হয়। এডভোকেট বালুজ দায় স্বীকার করে ৪৫ হাজার টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে বিষয়টির নিস্পত্তি করা হয়। এছাড়া, জজ আদালত থেকে নথি চুরির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া আইনজীবী মিজানুর রহমান বিপ্লবের বরখাস্তের আদেশ সভায় বহাল রাখা হয়। এদিকে, নির্বাহী কমিটির ওই সভার সিদ্ধান্তের বিষয়টি ছড়িয়ে পড়েল সাধারণ আইনজীবীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এডভোকেট আমিরের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ থাকার পরও সভায় তার বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে অনেককে প্রকাশ্যে সমালোচনাও করতে দেখা যায়। আইনজীবীরা প্রশ্ন তোলেন, এমন একজন (এডভোকেট আমির) ব্যক্তিকে কীভাবে মাফ করে দেয়া হয় তা বোধগম্য নয়। এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলম বাচ্চু, কাজী ফরিদুল ইসলাম, সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর আবুল হোসেন, জুলফিকার আলী জুলুসহ অন্তত ২০ জন আইনজীবী জানান, আমিরের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, অর্থ আত্মসাত, আদালতের নথি জালিয়াতিসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা বিচারাধীন, জেল খেটেছেন একাধিকবার। এর আগে তিনবার যশোর জেলা আইনজীবী সমিতি তাকে বরখাস্ত করে। অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে তার বিরুদ্ধে কৈফিয়ত তলবেরও নজির আছে। তার বিরুদ্ধে যশোরের বিভিন্ন এলাকায় মিছিল এবং মানববন্ধনও হয়েছে। তার শাস্তির দাবিতে একাধিকবার সাংবাদিক সম্মেলন হয়েছে। শতাধিক আইনজীবী তার বিরুদ্ধে লিখিতভাবে সমিতিতে অভিযোগ দিয়েছেন। তারপরেও আমিরের পার পেয়ে যাওয়াটা মেনে নেয়া যায় না। এটাকে রহস্যজনকও অভিহিত করেছেন অনেকে। এতে শুধু সমিতির নয়, পুরো আইনজীবী সমাজের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে বলেও মত দিয়েছেন তারা। সমিতির সাবেক এসব নেতা আমিরের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার পুনর্বিবেচনা করে তা সাধারণ সভায় উত্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এম ইদ্রিস আলী ও সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুরের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তারা বলেন, স্ত্রী হত্যার অভিযোগে আমিরকে বহিস্কার করা হয়। কিন্তু, সুরতহাল রিপোর্টে স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রমাণ হওয়ায় তার বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া, জনি ভুল স্বীকার করে নেয়ায় তার বরখাস্তের আদেশও প্রত্যাহার করা হয়।
বিশেষ প্রতিনিধি