শামীম হোসেন: যশোরের মণিরামপুর উপজেলার মশ্বিমনগর কওমি মহিলা মাদ্রাসার একজন ছাত্রীকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে ওই প্রতিষ্ঠানের বড় হুজুর জালালের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত জালাল পলাতক। অভিযোগ উঠেছে, একটি প্রভাবশালী মহল ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে চলছে দফায় দফায় মিটিং ও দেনদরবার। এ নিয়ে এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়। ভিকটিমের বাবা রাতদিন নিউজকে জানান, বুধবার সকাল ৯টার দিকে তার মেয়েকে বলা হয় জালালের অসুস্থ মাকে খাবার পৌঁছে দিতে হবে।
নির্দিষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, মাদ্রাসা থেকে খাবার নিয়ে জালালের বাড়িতে যেতে হবে। মেয়েটি সরল বিশ্বাসে নির্দেশ মেনে জালালের বাড়িতে যায়। খাবার পরিবেশন চলাকালীন হঠাৎ জালাল তার মেয়েকে ঝাপটে ধরে। একপর্যায়ে মেয়ে চিৎকার শুরু করলে তার ভাই স্থানীয় স্কুলশিক্ষক জুলফিকার ঘটনাস্থলে আসেন। এরপর দুই ভাই মিলে তার মেয়েকে ভয়ভীতি ও মোটা অঙ্কের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে বিষয়টি গোপন রেখে মাদ্রাসায় যেতে বলেন। ছাত্রীটি মাদ্রাসায় ফিরে গিয়ে জামাকাপড় নিয়ে বাড়িতে চলে যান এবং পুরো ঘটনা পরিবারের কাছে প্রকাশ করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বুধবার সন্ধ্যায় এলাকাবাসী মাদ্রাসার অফিস ঘেরাও করে। পরে বাড়িতেও খোঁজাখুঁজি করে। কিন্তু তার আগেই ‘বড় হুজুর’ জালাল পালিয়ে যান। অভিযোগ করা হচ্ছে এ সময় জালালের দুই ভাই স্কুলশিক্ষক জুলফিকার ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল খালেক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তারা একাধিকবার ভিকটিম পরিবারকে চাপ ও মীমাংসার প্রস্তাব দেন। ভিকটিমের বাবা আরও জানান, অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বসে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করার প্রস্তাব আসে, তবে শর্ত থাকে এতে যেন পুলিশকে না জানানো হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে একটি পক্ষ অনুপস্থিত থাকায় আলোচনা হয়নি। শুক্রবার সকাল ১১টায় আসাদ মেম্বারের উপস্থিতিতে আবারও মীমাংসার চেষ্টার কথা জানানো হয়। তবে ভিকটিমের বাবা স্পষ্টভাবে বলেন, আমি মীমাংসা চাই না, আমি আমার মেয়ের শ্লীলতাহানির বিচার চাই।
ওই মাদ্রাসার আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বড় হুজুর জালাল নিয়মিত শিক্ষার্থীদের নিজ বাড়িতে নানা অজুহাতে নিয়ে যেতেন। কখনও অসুস্থতার কথা বলে, কখনও কোনো কাজ করানোর নাম করে। শুধু তাই নয়, জালালের মেয়ে যিনি নিজেও ওই মাদ্রাসার শিক্ষিকা। বাবা ও মেয়ে মিলে শিক্ষার্থীদের দিয়ে ঘর মোছা, রান্নাবান্না, ময়লা পরিষ্কারের মতো কাজ করান। ছাত্রীরা পড়া বন্ধ করে এসব কাজে বাধ্য হন। এদিকে, এ ঘটনায় স্থানীয়ভাবে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনার প্রতিবাদে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। মাদ্রাসা অফিস ঘেরাও ও স্থানীয়দের জড়ো হয়ে বিচার দাবির ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী অভিযুক্ত জালালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত বড় হুজুর জালালের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি; ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। একইভাবে তার ভাই জুলফিকারকেও পাওয়া যায়নি। ফলে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে মশ্বিমনগর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও বড় হুজুর জালালের ভাই আব্দুল খালেক রাতদিন নিউজ এর কাছে পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, শতাধিক ব্যক্তি নিয়ে তাদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। এর নেপথ্যে অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে। কাদের নামে এক ব্যক্তি এর ইন্ধন দিচ্ছে। এছাড়া বিষয়টি মীমাংসার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি । তিনি বলেন তাদেরকে এমনিতেই ডাকা হয়েছিল কিন্তু তারা আসেননি। জালাল হুজুর কোথায় আছে তিনি জানেন না। এ বিষয়ে মণিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ বাবলুর রহমান খান বলেন, এ বিষয়ে কেউ তাদের কাছে কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।






