যশোর ক্লাবের লাক্সারি কনভেনশন হল মানেই সাধারণত উচ্চবিত্তের জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন। কিন্তু এই চিরচেনা ধারণা ভেঙে গেল শনিবার। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে এক ভিন্নধর্মী উদ্যোগের সাক্ষী হলো যশোর।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের উদ্যোগে এই প্রথম শহরের শতাধিক শ্রমজীবী মানুষকে আপ্যায়ন করা হলো ওই অভিজাত প্রাঙ্গণে। আর এ আয়োজনের মাধ্যমে দলীয় কর্মসূচির গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে এক মানবিক বার্তা দিলেন অনিন্দ্য ইসলাম।
শুধু তাই নয় সেখানে শতাধিক শ্রমজীবী মানুষকে তিনি নিজ হাতে আপ্যায়ন করলেন, যা যশোরের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এটি ছিল কেবল একটি ভোজ নয়, বরং শ্রম ও মেহনতী মানুষের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের এ উদ্যোগে দলীয় নেতা-কর্মীরা স্মরণ করেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সাধারণ মানুষের কাতারে নেমে এসে দেশ গড়ার ইতিহাস।
এছাড়াও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকীতে দুস্থ অস্বচ্ছল মানুষের গৃহ মেরামত সামগ্রী প্রদান, অসহায় নারীদের বস্ত্র বিতরণ এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানের মত ব্যতিক্রমী কর্মসূচি আয়োজকদের রীতিমত প্রশংসায় ভাসিয়েছে।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠন সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি পালন করছে। এর অংশ হিসেবে শনিবার যশোর ক্লাবের লাক্সারি কনভেনশন হলে শতাধিক রিকশা চালক, ইমরাত ও নির্মাণ শ্রমিককে আমন্ত্রণ জানিয়ে এক মহাভোজের আয়োজন করে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল।
যেকোনো অভিজাত সামাজিক বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে যেভাবে বিভিন্ন পদের খাবার দিয়ে মেহমানদের আপ্যায়ন করা হয়, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের এই ভোজের অনুষ্ঠানেও কোন পদের কমতি ছিল না।
অনুষ্ঠানের অতিথি অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে নিজ হাতে মেহমানের খাবার পরিবেশন করতে দেখা যায়। যা পরম তৃপ্তির সাথে উপভোগ করেন শ্রমজীবী মানুষ।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোস্তফা আমির ফয়সাল বলেন, “শ্রমজীবী মানুষেরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যে অর্থ উপার্জন করে, দুর্মূল্যের বাজারে তাতে তাদের সংসার চালানো খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। যে কারণে একটু ভালো আয়োজন করে ভালো মানের খাবার তারা খেতে পারেন না। আমরা সে কারণেই একটু ভালো আয়োজনের মাধ্যমে তাদের ভালো মানের খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করেছি, যাতে অন্তত এক বেলা মাছ মাংস দিয়ে পেট ভরে শ্রমজীবী মানুষ ভালো খেতে পারেন।”
একই দিন বিকেলে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের পক্ষ থেকে দুস্থ অস্বচ্ছল পরিবারের মাঝে গৃহ মেরামত সামগ্রী প্রদান করা হয়। শহরের কারবালা দক্ষিণপাড়ায় ১৭টি পরিবারের মাঝে ঢেউ টিন প্রদান করেন বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগম। জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃবৃন্দ জানান, তারা শুধু গৃহ মেরামত সামগ্রীই প্রদান করবেন না, বরং নিজেরাও শ্রম দিয়ে গৃহ মেরামত করে দেবেন।
বিকেলে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে নগর বিএনপি আয়োজিত অপর একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অধ্যাপক নার্গিস বেগম শতাধিক দুস্থ নারীর মাঝে বস্ত্র ও খাবার বিতরণ করেন।
এছাড়া নগর বিএনপির আয়োজনে শহরের সেবাসংঘ বালিকা বিদ্যালয় মাঠে এবং সদর উপজেলা বিএনপির আয়োজনে সতীঘাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে অসহায় মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, পৃথক দুটি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা প্রায় এক হাজার দুইশ রোগীকে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সেবা ও বিনামূল্যে ওষুধ সামগ্রী প্রদান করা হয়।
এর আগে সকালে শহরের ভৈরব নদে জেলা মৎস্যজীবী দল মাছের পোনা অবমুক্ত করে। এই কর্মসূচিতেও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। জেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন টেনিয়া জানান, সিলভার কার্প, রুই ও তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় দুই মণ দশ কেজি মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে।