বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর এবার দলটির রাজনৈতিক নিবন্ধন বাতিলের দিকে এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী সোমবার (১২ মে) কমিশনের পাঁচ সদস্যের একটি বৈঠকে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের অনুপস্থিতির প্রেক্ষাপটে দলের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। রাজধানীর গুলিস্তানে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও এখন কার্যত পরিত্যক্ত। আইন অনুযায়ী, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় না থাকলে ইসি সেই দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যাবতীয় রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। গত ১০ মে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে বলা হয়, কোনো রাজনৈতিক দল বা তাদের সহযোগী সংগঠনের বিচার করতে পারবে ট্রাইব্যুনাল। এই বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ব্যবস্থা কার্যকর থাকবে।
আইনি দিক থেকে বিষয়টি আরও সুসংহত হয়েছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২-এর ৯০ জ(১)(খ) অনুচ্ছেদে। এতে বলা হয়েছে, যদি কোনো দল সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশন সেই দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে। একইসঙ্গে দলটির সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় না থাকায় আরপিও-এর ৯০ খ(১)(ক)(ই) অনুযায়ীও নিবন্ধন বাতিলের আইনগত ভিত্তি রয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, “সরকারের নিষেধাজ্ঞার গেজেট প্রকাশ পেলেই আমরা বৈঠকে বসব। এরপর আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” তিনি বলেন, “আমরা কেবল নিবন্ধন বাতিল করতে পারি, কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার এখতিয়ার সরকারের।”
বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫০টি। ২০০৮ সালে প্রবর্তিত নিবন্ধন প্রথার পর এ পর্যন্ত পাঁচটি দলের নিবন্ধন ইতোমধ্যেই বাতিল করেছে ইসি, যার মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ফ্রিডম পার্টির নাম।
আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি চূড়ান্ত হলে তা দেশের রাজনীতিতে এক বড় মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।