জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুলি চালিয়ে সাধারণ জনগণ ও শিক্ষার্থীদের হতাহত করার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন থানা ও আদালতে ১ হাজার ৫৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত পুলিশের ৪১ জন সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা
গ্রেপ্তার হওয়া পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এবং এ কে এম শহীদুল হক, সাবেক ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, ডিআইজি মোল্যাহ নজরুল ইসলাম, সাবেক চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলামসহ অনেকে। অন্যদিকে, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ও অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদসহ কয়েকজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা পলাতক রয়েছেন, কেউ কেউ দেশের বাইরে চলে গেছেন।
কত মামলা হয়েছে?
পুলিশ সদর দপ্তর আনুষ্ঠানিকভাবে মোট মামলার সংখ্যা জানায়নি। তবে সূত্র জানায়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় ১,৩৯৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যার ঘটনায় ৬৫৬টি এবং আহতদের নিয়ে ৭৩৭টি মামলা হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি মামলা কার বিরুদ্ধে?
ডিএমপির তৎকালীন অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ১৭৪টি মামলা হয়েছে। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে ১৫৯টি, মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৪৬টি, হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ১১৮টি এবং অতিরিক্ত ডিআইজি বিপ্লব কুমার সরকারের বিরুদ্ধে ১২৮টি মামলা হয়েছে।
নির্বিচার গুলি ও হত্যার নিন্দা
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় পুলিশের নির্বিচার গুলির ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। নিহতদের স্বজন ও আহতদের পরিবার বিচার দাবি করে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও বিচার কাজ চলছে, যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎকালীন ১৮ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
পুলিশ প্রশাসনের বক্তব্য
পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর বলেছেন, “ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাগুলো পুলিশ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে। তদন্তে যাঁদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
সাবেক আইজিপির মতামত
সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করতে হবে। নিরপরাধ ব্যক্তিদের মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে হবে এবং প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করতে হবে।”
তদন্ত ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, আটটি রেঞ্জের প্রতিটিতে একজন অতিরিক্ত ডিআইজির নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা মামলাগুলো তদারকি করবে। সাবেক ও বর্তমান অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মামলাগুলোর তদন্ত চলছে।
বিশ্লেষকদের মতে, পুলিশের এতো সংখ্যক সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। সুষ্ঠু তদন্ত ও যথাযথ বিচার নিশ্চিত করা গেলে এটি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।