তবে, এঘটনার পরপরই পুলিশ সুপার তাৎক্ষনিক ভুমিকা নিয়েছেন। দায়িত্বে থাকা চার পুলিশ সদস্যকে নিজ অফিসে ডেকে কৈফয়ত তলব করেছেন। একই সাথে ওই চারজনেক পুলিশ লাইনে ক্লোজের পর অন্য থানায় বদলি করেছেন। রাতের আধারে ট্রাক নিয়ে ডাকাতির খবরে শনিবার শহর জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ওই প্রতিষ্ঠানে নাইট গার্ডের দায়িত্বে থাকা আবুল হোসেন জানান, প্রথমে একজন দুর থেকে তাকে অনুসরণ করে। এরমধ্যেই চারপাঁচজন তাকে এসে পায়ে আঘাত করে ফেলে দেয়। অস্ত্রধারী চারপাঁচজন তাকে ঘিরে ধরেন। হত্যার হুমকি দিয়ে গামছা দিয়ে বেধে এক পাশে ফেলে রাখেন। তিনি কথাও বলতে পারছিলেন না। তার কাছে একজন পাহাড়া দেয়। অন্যরা মালামাল লোড করে পালবাড়ির দিকে চলে যায়। পরে তিনি ইশারায় একজনকে ডাক দেন।
উপশহরের বাসিন্দা লোকসমাজের প্রেস শ্রমিক কর্মচারি আলামিন জানান, কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে দেখেন নাইটগার্ডের হাতপা বাধা। ওই দোকান খালি। তিনি দাড়িয়ে হাত পাখুলে দেন। পরে পুলিশ ও দোকান মালিককে কল করে বিষয়টি জানান।
এদিকে, এ খবর শুনেই সকালে ঘটনাস্থলে ছুটে যান যশোরের পুলিশ সুপার জিয়া উদ্দিন আহম্মেদ। এ সময় তিনি সার্বিক বিষয় খোঁজ খবর নেন। কথা বলেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী পরিবারের সাথে।
দোকান মালিকের ছেলে নুর নবী পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করে বলেন, তিনি রাত আড়াইটায় মোবাইলের মাধ্যমে দোকানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেছেন। তখন সব ঠিক ছিলো। তিনটা ১৫ মিনিটে সিসি ক্যামেরাগুলো বিকল হয়ে যায়। স্থানীয়দের কাছথেকে খবর শুনে দোকানে আসেন ৩টা ২৫ শে। এসে দেখেন ১৫০ টা ব্যাটারী নেই। নেই টায়ার ও নগদ টাকা। পুলিশকে কল করলে ৫/১০ মিনিটের মধ্যেই তারা চলে আসেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ৩টা ৪০ থেকে ৪৫ এ তালা ভেঙেছে। মালামাল উঠাতে যায় অন্তত আরও ২০ মিনিট। যে ট্রাকে তারা এসেছিলেন তার ধারন ক্ষমতা ছিলো দুই টন। কিন্তু সেখানে তিনগুন লোড নিয়ে ট্রাকটি চলে যায় পালবাড়ি হয়ে ধিনাইদহের দিকে। তিনি বলেন এসবদিকের রাস্তা উচু নিচু ও ভাঙ্গা। এই ২০ থেকে ২৫ মিনিটের ব্যবধানের মাঝে ডাকাতেরা বেশী দুর পৌছাতে পারতো না। পুলিশ তাড়া করে ওয়ারলেসের মাধ্যমে অন্যথানাগুলোকে অবহিত করে ডাকাতদলের চক্রকে ধরতে পারতো। কিন্তু পুলিশকে এ বিষয়ে বারবার অনুনয় বিনয় করে অনুরোধ জানালেও তারা কাঙ্খিত সেবা দেননি।
তিনি পুলিশ সুপারকে অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ যদি একটু চেষ্টা করতো তাহলে তার ২৫ লাখ টাকার এ ক্ষতি হতনা বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। অভিযোগ শুনে পুলিশ সুপার উপশহর ক্যাম্পের ইনচার্জ কামাল হোসেনকে কেন এমনটি হল বলে কৈয়ফত তলব করেন। কারা ওই টহল টিমে ছিলেন তাদের নাম জানতে চান।
উপশহরক্যাম্প ইনচার্জ এসআই কামাল হোসেন জানান, ওই টিমে এএসআই ইশারস, এএসআই আলী মিয়া, কন্সটেবল মাহফুজ ও মাসুদ ছিলেন। তিনি ঘটনাস্থলে সকলের সামনেই তাদেরকে লাইনে সংযুক্ত করার নির্দেশ দেন। এবং কেন এমনটি করলো তা জানতে চেয়ে অফিসে হাজিরের নির্দেশ দেন। এরপর অন্যকর্মকর্তাদের এ বিষয়ে অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা যশোর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ক্রাইম এন্ড অপস) আবুল বাশার পুলিশ সুপারকে জানান, একই ধরনের একটি ঘটনা খুলনার গিলেতলা এলাকায় ঘটেছে। ওই ঘটনার সাথে জড়িতদের সাথে এ ঘটনার মিল রয়েছে। যা তদন্তে ডিবির বিশেষ টিম কাজ করছে বলে জানান। এসময় পুলিশ সুপারের সামনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী পরিবার। তারা দ্রুত আইনী সহায়তার দাবি জানান। পুলিশ সুপার তার উপর আস্থা রাখার আহবান জানিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পুলিশের এ ভুমিকায় প্রশংসা কুড়ান স্থানীয়দের।
শোরুমের মালিক আবুল কাশেম সন্দেহ করেন, বৃহস্পতিবার রাতে তার কাছে একটি গাড়িতে করে একজন ব্যক্তি আসেন। নাম বলেন গিয়াস উদ্দীন রানা। নিজেকে ব্যাটারী কোম্পানীর এমপোর্টার দাবি করে তার সাথে ব্যবসা করতে বলেন। এসময় তিনি পুরো শোরুম ঘুরে দেখেন। তিনি ধারনা করেন, ওই ব্যক্তির সাথে এ ঘটনার সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। এমনকি স্থানীয় একটি চক্রও তাদের সহযোগি হিসেবে কাজ করেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়ে রাত সাড়ে সাতটায় ডিবির অফিসার ইনচার্জ মঞ্জুরুল হক ভুঞা বলেন, আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। নাইট গার্ডকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে, তার কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, তাদের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। কাজ করছে থানা পুলিশও । এ বিষয়ে দ্রুতই ভালো কোনো সংবাদ শোনা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, এএসআই ইসারতকে রায়পুর পুলিশ ক্যাম্প, এএসআই আলীকে ভাটপাড়া তদন্ত ক্যাম্প, কন্সটেবল মাসুদকে সিদ্দিপাশা, মাহফুজকে খেদাপাড়ায় বদলি করা হয়েছে। এরআগে তারা শনিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের অফিসে হাজির হন। পুলিশ সুপার জিয়া উদ্দীন আহম্মেদ তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
সর্বশেষ রাত আটটায় ৩০ মিনিটে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ কাজী বাবুল বলেন, ভুক্তখোগি ব্যবসায়ীর সাথে তার কথা হয়েছে। রাতেই এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা রেকর্ড করা হবে।
রাতদিন সংবাদ/আর কে-১৩