নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরে ঈগল পরিবহন কাউন্টারসহ ‘সেই’ তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখনো খোলা হয়নি। আবার কেন বন্ধ করা হয়েছে তা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এসব নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করা হচ্ছে। যদিও আন্তঃজেলা বাস সিন্ডিকেটের কর্মচারী রিপন বিশ্বাসকে বরখাস্ত করাকে কেন্দ্র করেই এ ঘটনার সূত্রপাত বলে দাবি করছেন সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বলা হচ্ছে, সংগঠনের সভাপতি ও সম্পাদক নিয়মবহির্ভূতভাবে রিপনকে বরখাস্ত করেছে। যা মানতে না পেরে শ্রমিকেরা একাট্টা হয়ে আন্তঃজেলা বাস সিন্ডিকেটের নেতাদের কাছে যান বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহারের জন্য। কিন্তু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উল্টো হুমকি দেন। এ কারণে তারা তোপের মুখে পড়ে দোকান বন্ধ করে আত্মগোপন করেন। পরবর্তীতে দোকান বন্ধ করে হুমকি ধামকির নাটক সাজান।
এ ঘটনার পর যুবদলের কয়েক নেতা জোর করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে বলে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। যা ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছে জেলা য্বুদল। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তি বিভিন্ন পত্রিকা অফিসে পাঠিয়েছেন যুবদল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
আন্তঃজেলা বাস সিন্ডিকেট সূত্র জানায়, ঈগল পরিবহনের স্বত্বাধিকারী ও আন্তঃজেলা বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র কাপুড়িয়া কর্মচারীদের সাথে অশোভন আচরণ করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। বিশেষ করে যারা বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন তাদেরকে তিনি টার্গেট করে করে চাকরিচ্যূৎ, বেতন বন্ধসহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে আসছিলেন। কিন্তু এতদিন কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পায়নি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের শীর্ষনেতাদের সাথে পবিত্র কাপুড়িয়ার ছিল দহরম মহরম। এককথায় আন্তঃজেলা বাস সিন্ডিকেটই শুধু না, তিনি প্রভাব খাটাতেন অন্যসব বাস মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর উপরও।
গত বছরের ৪ নভেম্বর আন্তঃজেলা বাস সিন্ডিকেটের নড়াইলের কন্ডাক্টরদের রোটেশন স্লিপে গাড়ির নম্বর লিখতে ভুলে গিয়েছিলেন। কিন্তু গাইড বইতে সবই ঠিকই ছিল। এ কারণে দু’মাস পর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে রিপনকে শোকজ করা হয়। এরমধ্যে ৬ জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। হাসপাতালে কয়েকদিন চিকিৎসা নেন। এরপর বাড়িতে এসে বিশ্রামে ছিলেন। এরমধ্যে ১০ জানুয়ারি তার শাশুড়ি মারা যান। রিপন চলে যান মাগুরার শালিখায়। এসব কারণে রিপন শোকজের জবাব দিতে পারেননি।
সর্বশেষ, ১৩ জানুয়ারি রিপনকে জানানো হয় ১৫ জানুয়ারি থেকে তাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে। এরপর শ্রমিকরা সকলেই পবিত্র কাপুড়িয়ার কাছে চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানান। পবিত্র কাপুড়িয়া সন্ধ্যার পর রিপনকে অফিসে ডাকেন। সকলেই ভেবেছিলেন রিপনকে ক্ষমা করে দিয়ে চাকরিতে পুনর্বহাল করবেন তিনি। কিন্তু উল্টো সকলের সামনে রিপনের সাথে দুর্ব্যবহার করেন পবিত্র কাপুড়িয়া। তখন বিপুলসহ উপস্থিত অন্যরা প্রতিবাদ করেন। খবর পেয়ে শ্রমিকরা ধীরে ধীরে পবিত্র কাপুড়িয়ার অফিসে হাজির হন। বিষয়টি নিয়ে সংগঠনের সভাপতিরও হস্তক্ষেপ কামনা করেন। একপর্যায়ে পবিত্র কাপুড়িয়া দোকান থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে চলে যান। একইসাথে কর্মচারীদের দোকান বন্ধ করে দিতে বলেন। একই কাজ করেন সংগঠনের সভাপতি দাউদ খানও। পরে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হামলার নাটক সাজানো হয় বলে দাবি করেন সমিতির কর্মচারীরা।
এ বিষয়ে রিপন বিশ্বাস বলেন, ২০ বছর ধরে তিনি আন্তঃজেলা বাস সিন্ডিকেটে কর্মরত। বিএনপির কর্মী হওয়ায় তার উপর নানা নির্যাতন চালানো হয়েছে। শুধু তিনি না, সাধারণ সম্পাদকের হাতে অনেকেই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এবার তারা প্রতিবাদ করেছেন বলে এ ধরনের অভিযোগ করা হচ্ছে।
জেলা যুবদলের সহসভাপতি সাইদুর রহমান বিপুল বলেন, তিনি যুবদলের সহসভাপতি বটে, কিন্তু এখানে তার বড় পরিচয় তিনি আন্তঃজেলা বাস সিন্ডিকেটের বেতনভুক্ত শ্রমিক। বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় তার সাথেও নানাভাবে অন্যায় করা হয়েছে। তাকে যশোর থেকে নড়াইলে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। রিপনের জন্য সুপারিশ করতে তিনিও তাদের সভাপতি-সম্পাদকের কাছে গিয়েছিলেন। সেখানে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। সভাপতি-সম্পাদক নিজেরাই দোকান বন্ধ করে জোর করে দোকান বন্ধের কথা প্রচার করছেন।
তিনি আরও বলেন, একটি মহল বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। যুবদলের সহসভাপতির সাথে নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হোসেনের নামও জড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনার সাথে যুবদলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই ।
এদিকে, এ বিষয়ে যশোর নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হোসেন বলেন, অহেতুক তাকে জড়ানো হচ্ছে। মূলত এটা আন্তঃজেলা বাস সিন্ডিকেটের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটি রাজনৈতিক বিষয় না।
বাস সিন্ডিকেটের সভাপতি পবিত্র কাপুড়িয়া ও সাধারণ সম্পাদক দাউদ খান দাবি করেছেন, গত সোমবার সন্ধ্যার পর দলবল এনে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে সাইদুর রহমান বিপুল, রিপন ছাড়াও ৪০ থেকে ৫০ জন ছিলেন। এরপর থেকেই তারা ভয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারছেন না। তবে, সর্বশেষ অবস্থা জানতে বৃহস্পতিবার রাতে একাধিকবার ফোন করলেও তারা রিসিভ করেননি।