আজম খান: বাংলাদেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার ইতিহাস যেন এখন আরও করুণ হয়ে উঠেছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন ভাতা নিয়ে যে জটিলতা চলছে, তা শুধু তাদের অর্থনৈতিক অবস্থাকে নাজুক করেনি, বরং তাদের পেশাদারিত্ব এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও গভীর প্রভাব ফেলছে।
শিক্ষকদের বেতন পরিশোধে দেরি বা খণ্ডিত পরিশোধ যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। ২ তারিখে কিছু সংখ্যক শিক্ষকদের EFT এর মাধ্যমে বেতন দেওয়া হলেও, বাকি শিক্ষকদের বেতন নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই গেছে। কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা না আসায় শিক্ষকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। এমনকি মিডিয়ায় ভাসমান তথ্যও অস্পষ্ট এবং বিভিন্ন মতামতের ভিত্তিতে গড়া।
শিক্ষকদের বঞ্চনার দীর্ঘ ইতিহাস
ব্রিটিশ আমল থেকে বাংলাদেশের শিক্ষকেরা নানা ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছেন। বদলি, প্রমোশন, বাড়ি ভাড়া, এবং চিকিৎসা ভাতার মতো মৌলিক সুযোগ সুবিধাগুলো তাদের জন্য প্রায় অপ্রতুল। অবসর ভাতা পেতে যেখানে ৫ বছরের অপেক্ষা করতে হয়, এখন সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা মাত্র ১২,৫০০ টাকা বেতন পেয়ে কিভাবে জীবনযাপন করবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
একই সিলেবাসে পাঠদান করেও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তুলনায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবস্থান যেন অনেকটাই পিছিয়ে। অনেক শিক্ষকের জীবন শেষ হয় দারিদ্র্যের মধ্যে, অবসরে গিয়ে তারা এমনকি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হয়।
ঈদের সময়ও বঞ্চনা অব্যাহত
দেশের শ্রমিকদের জন্য ঈদের সময় বোনাস নিশ্চিত করা হলেও, শিক্ষকরা সেই সুবিধা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত। সমাজে শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদার যে অবনতি ঘটেছে, তা আজ হতাশাজনক। একসময় শিক্ষকদের বলা হতো জাতি গড়ার কারিগর। আজ তারা যেন নিজেদের টিকিয়ে রাখার জন্য প্রাইভেট টিউশন, কোচিং সেন্টার কিংবা অন্য পেশায় বাধ্য হচ্ছেন।
সমাধান কোথায়?
শিক্ষকদের এই দীর্ঘমেয়াদী বঞ্চনার অবসান হওয়া প্রয়োজন। একাধিক কমিশন গঠন করা হলেও, শিক্ষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা, যাতে শিক্ষকদের বেতন ভাতা নিয়ে আর কোনো জটিলতা না থাকে।
শিক্ষকদের জন্য ন্যায্য বেতন, প্রমোশন, বদলি এবং অবসর সুবিধা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। কারণ, একটি জাতির উন্নয়নের মূল ভিত্তি তাদের শিক্ষাব্যবস্থা এবং সেই ব্যবস্থার দায়িত্ব যাদের ওপর, তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়।