Saturday, January 25, 2025

ছাত্র আন্দোলন ও জুলাই ঘোষণাপত্র: সংবিধান পরিবর্তনের দাবি নিয়ে বিতর্ক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে ঘোষিত জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে উত্তপ্ত আলোচনা। ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে ঘোষণাপত্র প্রকাশের মাধ্যমে ‘বাহাত্তরের মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচনা’ হবে—এমন ঘোষণা দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত এটি চূড়ান্ত হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণাপত্র তৈরিতে কাজ করছে, যেখানে সংবিধান সংশোধন বা নতুন সংবিধান প্রণয়নের মতো স্পর্শকাতর বিষয় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে বলে দাবি করেছে ছাত্র সংগঠনগুলো।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাত দফা দাবির অন্যতম পঞ্চম দফায় বলা হয়েছে, ‘ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল ভিত্তি সংবিধান বাতিল করে নির্বাচিত গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়নের অঙ্গীকার করতে হবে।’

আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা চাই, সংবিধানের এমন বিষয়গুলো বাদ দেওয়া হোক, যেগুলো বাকস্বাধীনতা ও ভোটাধিকারের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। তবে আমাদের লক্ষ্য সংবিধান পুরোপুরি রহিত করা নয়, বরং তা সংস্কার করা।”

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম মনে করেন, সংবিধানে ফ্যাসিবাদী উপাদানগুলোর সংস্কার প্রয়োজন। তিনি বলেন, “এই ঘোষণাপত্র শুধু ৭২-এর ইতিহাস নয়, বরং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত করবে।”

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, “জুলাই ঘোষণাপত্র হবে একটি রাজনৈতিক নথি। এর কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা থাকবে না, তবে নৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে এটি গুরুত্বপূর্ণ হবে।” তিনি আরও বলেন, “সংবিধান স্থগিত করার প্রশ্ন এখানে আসছে না। এটি লিগ্যাল ডকুমেন্টের মাধ্যমে নয়, বরং রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হবে।”

বিএনপি এবং গণঅধিকার পরিষদসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, “নতুন প্রজাতন্ত্রের প্রস্তাবনা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে। আমরা চাই, ঘোষণাপত্রে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাকে ধরে রাখা হোক।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাশেদা রওনক খান মনে করেন, সংবিধানের মতো মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো কঠিন। তিনি বলেন, “সব দল ৫ আগস্টের আগে ঐক্যবদ্ধ ছিল। কিন্তু সংবিধান বা রাষ্ট্র সংস্কারের মতো বিষয়ে প্রত্যেকের স্বার্থ আলাদা।”

সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েছে। মাহফুজ আলম বলেন, “আলোচনা দ্রুততম সময়ে চূড়ান্ত করার চেষ্টা চলছে। তবে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সম্ভব না হলেও বেশি বিলম্ব হবে না।”

জুলাই ঘোষণাপত্রে সংবিধান ইস্যু নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও সব পক্ষের দাবি, এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হবে।

অনলাইন ডেস্ক/আর কে-০৬

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর