Saturday, January 25, 2025

আ.লীগের সময় নিয়োগ প্রাপ্ত টাঙ্গাইল মেডিক্যালের ১৫ জনকে অব্যাহতি

টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত বিভিন্ন পদের ১৫ কর্মচারীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে অব্যাহতির বিষয়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবগত নয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক আব্দুল কুদ্দুস।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ল্যাব এটেনডেন্ট, ওয়ার্ড বয়, ইলেট্রিশিয়ান, বাবুর্চি ও নিরাপত্তা প্রহরী পদের ১৫ জনকে অব্যাহতি দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাছরাঙ্গা সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড। বিষয়টি নিয়ে কর্মচারীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অব্যাহতি পাওয়া কর্মচারীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়ায় চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও তাদের নিয়োগের শর্তানুযায়ী ১৬ হাজার ১৩০ টাকা বেতনের মধ্যে দেওয়া হতো ১০ হাজার করে। সর্বশেষ গত পাঁচ মাসে ১২ হাজার টাকা করে দিয়েছে।

অব্যাহতির ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে বিভিন্ন পদবির ৯০ জন জনবল সরবরাহ করা জনবলের মধ্যে নিম্নে বর্ণিত পদবির ১৫ জনকে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও মিটিং মিছিলের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের নিয়োগপত্রের ৩নং শর্তাবলী অনুযায়ী অফিস শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে লিপ্ত হওয়ায় তাদের নিয়োগপত্র বাতিল করা হলো।

অব্যাহতি পাওয়া কর্মচারীরা দাবি করে, আওয়ামী লীগের নেতাদের মাধ্যমে হাসপাতালে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় নিয়োগ পাওয়া এখনও অনেকেই কর্মরত রয়েছে, শুধুমাত্র এই ১৫ জনকে অব্যাহতির চিঠি দেওয়া হয়েছে। অথচ কেউ কোনও দল বা মিছিল মিটিং করেনি। কোনও খারাপ রেকর্ডও নেই। পর্যায়ক্রমে নিয়োগ পাওয়া ৯০ জনকেই চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হবে শুনেছি। পরে নতুন করে অন্যদলের লোকজন নিয়োগ দেবে তাদের মতো করে। বর্তমানে বিএনপির দুই নেতা হাসপাতালে লোকবল নিয়োগের জন্য দায়িত্ব পেয়েছেন বলে শুনেছি। অব্যাহতি পাওয়া কয়েকজন ওই বিএনপির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, চাকরি ফেরত পাওয়ার জন্য। কিন্তু আমাদের জায়গাতে অন্যদের নিয়োগ দিয়েছে।

অব্যাহতি পাওয়া ল্যাব এটেনডেন্ট পাপিয়া আক্তার বলেন, কর্মচারীদের একটি গ্রুপে অব্যাহতির ওই চিঠি দেওয়া হয়েছে। পরে সুপারভাইজার গ্রুপে অব্যাহতি পাওয়া ১৫ জনকে হাসপাতালে আসতে নিষেধ করেন। আওয়ামী লীগের সময় নিয়োগ পাওয়ায় নাকি আমাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আমরাতো কোনও দল করি না। কোনও কারণ ছাড়াই এমন চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। কোম্পানি থেকেও কিছু বলা হয়নি। অব্যাহতির চিঠিটা সঠিক কি না আমরা জানি না। আমাদের অনেকেই এখনও হাসপাতালে ডিউটি করছেন।

ওয়ার্ড বয় মেরিনা বলেন, ছয় মাসের বেতন বকেয়া ছিল। কোম্পানি থেকে পাঁচ মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। প্রথমে ১০ হাজার করে বেতন দিতো কিন্তু অব্যাহতি দেওয়ার আগে দুই হাজার টাকা বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা করে বেতন দিয়েছে। অথচ শর্তানুযায়ী বেতন দেওয়ার কথা ছিল ১৬ হাজার ১৩০ টাকা করে।

টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপারভাইজার আল আমিন দাবি করেন, অব্যাহতি পাওয়া কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের আগে মিছিল মিটিং করা, চাকরির কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে প্রতিষ্ঠান তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাছরাঙ্গা সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজার জিলান বলেন, অব্যাহতি পাওয়া কর্মচারীরা আওয়ামী লীগের সময় রাজনৈতিক প্রোগ্রামে মিছিল মিটিং করেছে। সুপারভাইজারের দেওয়া অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি আমরা জানি না। এই বিষয়ে কোনও চিঠি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়নি।

প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটি ৫ আগস্টে সরকার পতনের পর সম্প্রতি টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল হিসেবে নামকরণ করা হয়।

অনলাইন ডেস্ক-জয়–

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর