Friday, May 17, 2024

সাতক্ষীরায় বেকার যুবকদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এনে দিয়েছে মৌচাষ

- Advertisement -

সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ সাতক্ষীরার মাঠে প্রান্তরে এখন হলুদের সমারোহ। দৃষ্টি নন্দন এই হলুদ পরিবেশের সাথে উড়ছে মৌমাছির দল। তারাও ব্যস্ত মধু সংগ্রহে। আর মধু সংগ্রহের এই সময়টাকে দারুনভাবে ব্যবহার করছে এখানকার ভ্র্যামমান মধু সংগ্রহকারীরা। জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যো এ বছর সবেচেয়ে বেশি সরিষার আবাদ হয়েছে কলারোয়া ও দেবহাটা উপজেলায়। বিস্তৃত প্রান্তরের শষ্য ক্ষেতের ধারে ধারে স্থাপন করেছে মধু সংগ্রহের বক্স।

মধু সংগ্রহের এই কার্যক্রম সারা বছর চল্লেও নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই চার মাস ব্যস্ত সময় পার কারছেন এখানকার ভ্রাম্যমান মৌ চাষীরা। মধু সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করা হয় বৃটিশ নাগরিক বেভারেজ নিউটন আবিকৃত বক্স সুপার চেম্বার, বুরট, নিউক্লিয়াস প্রভৃতি বক্স। আর ফুল থেকে মধু আহরণের  জন্য এপিস মেলিন্ডা প্রজাপতি অস্ট্রেলিয়ার মৌমাছি এ কাজে ব্যবহার করা হয়।

সরিষা ক্ষেতের এই বক্সগুলো মৌমাছিরা মধু আহরণ করে জমা করে। প্রতিটি বাক্স থেকে সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়। যার পাইকারি বাজার মূল্য ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। প্রতিটি খামারী কমপক্ষে ১০০ থেকে ২০০টি বাক্স ব্যবহার করে। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় বিভিন্ন স্থানে ২২-২৫ জন ভ্রাম্যমান মৌচাষী আড়াই- তিন হাজার মৌবক্স স্থাপন করেছেন। প্রতিটি খামারে ৩-৫ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে। তারা এখান থেকে প্রতি মাসে ৭-৮ হাজার টাকা পর্যন্ত ইনকাম করে।

গত বছর জেলায় ১৪ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছিল। আর এসব সরিষা ফুল থেকে মধু উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৫৩ হাজার ৫১০ মেট্রি: টন। এ বছর সরিষার আবাদ হয়েছে প্রায় ১৯ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে এবং মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ২ হাজার মেট্রি: টন। উৎপাদিত এসব মধু জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।

আর সরিষা ক্ষেতে পাশে মৌ খামার স্থাপনের ফলে মৌমাছি দ্বারা পরাগায়নের ফলে সরিষার ফলন ১০ থেকে ২০ ভাগ বৃদ্ধি পায়। মৌচাষীরা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি তথা এ জনপদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মৌ খামারী সেলিম হোসেন বলেন, ১৮ বছর ধরে এ  ব্যবসার সাথে জড়িত। এক সময় চারটি বাক্স নিয়ে মৌ সংগ্রহের কাজ শুরু করেছিলাম। এখন আমার বাক্সের সংখ্যা-১৫০টি।

সদর উপজেলার সদরের বাশঘাটা এলাকার কৃষক সাইফুল বলেন, আমার ৫ বিঘা জমিতে বারি-৭, বারি- হাইব্রীড, সাদা ও লাল জাতের সরিষা চাষ করেছি।  সরিষা খেতের পাশে মৌবক্স বসালে মৌমাছির পরাগায়নের ফলে সরিষার উৎপাদন ভালো হয়। মৌচাষী মো. ফয়জুল্লাহ বলেন, কলারোয়া উপজেলা জয়নগর এলাকায় ১০০টির মত মৌবক্স বসিয়েছি। এই সিজনে ৬-৭ বার মধু ভাঙা হবে। আশা করছি এখান থেকে ৬০ ড্রামের বেশি মধু সংগ্রহ করতে পারবো। প্রতি মণ সারিষা ফুলের মধু ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হবে।

মৌচাষী মোশারফ বলেন, প্রথম দিকে সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌবক্স বসালে কৃষকরা তারিয়ে দিতো মৌবক্স ভেঙে দিতো তারা ভাবতো মৌমাছির কারনে সরিষার ফুল নষ্ট হয় ফলন কম হয় তবে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় এখন কৃষকদের মাঝ থেকে ভূল ধারণা দূর হয়েছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র কুটির শিল্প (বিসিক) সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক গোলাম সাকলাইন জানান, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র কুটির শিল্প (বিসিক) মৌচাষীদের প্রশিক্ষণ ও ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে সহায়তা করে আসছে। এবার ২ হাজার মেট্রিক টন মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম জানান, সাতক্ষীরা উপকূলীয় জেলা হলেও বিভিন্ন ফসলের বৈচিত্র রয়েছে। এর মধ্যে সরিষা অন্যতম। মৌমাছির পরাগায়নের ফলে সরিষার ফলন ১০ থেকে ২০ ভাগ বৃদ্ধি হয়। তা ছাড়া মধুর উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

সাতক্ষীরা জেলা সুন্দরবনের কোলঘেষে হওয়ায় এখানকার মৌচাষীরা  বড় একটা সুযোগ কাজে লাগিয়ে  সেখান থেকে বিপুল পরিমান মধু আহরণ করে থাকে।এ সমস্ত মৌচাষীরা স্বল্প সুদে বা বিনা সুদে সরকারি ঋণ ও সমবায় পদ্ধতিতে বাজারজাত করার সুযোগ পেলে আরও মৌচাষীর সংখ্যা বাড়বে এবং মৌচাষের প্রতি বেকার যুবকরা আগ্রহী হবে।

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত