Friday, December 13, 2024

৫ মাস ধরে গৃহবধূর পেটে গজ-ব্যান্ডেজ, পচন ধরার পর অস্ত্রোপচার

সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেওয়ার পাঁচ মাস পর গৃহবধূর পেট থেকে বের করা হয়েছে গজ ও ব্যান্ডেজ। অপারেশনের সময় পেটে গজ-ব্যান্ডেজ রেখেই সেলাই করে দিয়েছিলেন চিকিৎসক। এতে পেটের ব্যথা নিয়ে পাঁচ মাস  বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসকের কাছে ঘুরে অবশেষে ময়মনসিংহের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে অপারেশনের পর ধরা পরে বিষয়টি।ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর নাম ফজিলা খাতুন (২৮)। তিনি ত্রিশাল উপজেলার আমিরাবাড়ী গ্রামের শাহজাহান মোল্লার স্ত্রী। তিনি এর আগে দুজন সন্তান স্বাভাবিকভাবে প্রসব (নরমাল ডেলিভারি) করেছিলেন। তৃতীয় সন্তান প্রসবের সময় তার সিজার করা হয়। গত শুক্রবার ময়মনসিংহের ভাটিকাশর এলাকার আইডিয়াল নাসিং হোমে পুনরায় অপারেশন করে তার পেটের গজ-ব্যান্ডেজ বের করা হয়েছে। গজটি ভিতরে পচন ধরায় চিকিৎসকরা তার সুস্থতার বিষয়ে কিছুই বলতে পারছেন না। যন্ত্রণায় হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন ফজিলা। তার অবস্থা খুবই গুরুতর।ফজিলা বেগমের স্বামী শাহজাহান মোল্লা জানান, পাঁচ মাস আগে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ময়মনসিংহের ভালুকায় বেসরকারি ডিজিটাল হাসপাতালে ভর্তি করান স্ত্রীকে। সেখানকার হাসপাতালের মালিক পক্ষ জানান, ফজিলাকে জরুরি সিজার করতে হবে। তাদের কথামতো রাজি হয়ে গত ১৩ এপ্রিল ডা. মফিজের মাধ্যমে ও ডা. মেহেদীর অ্যানেসথেসিয়ায় সিজার করে ছেলে সন্তানের জন্ম দেন ফজিলা। চারদিন হাসপাতালে থেকে বাড়ি নিয়ে আসেন স্ত্রীকে। কয়েকদিন পরই ফজিলার পেটে ব্যথা ও পেট ফুলে গেলে ভালুকায় ডা. মোশারফের কাছে নিয়ে যান স্ত্রীকে। তিনি আল্ট্রাসনোগ্রাম করার পর জানান, ফজিলার পেটে অ্যাতে কোনো প্যাচ বা ইনফেকশন হয়েছে। আপনি ময়মনসিংহ নিয়ে ভালো ডাক্তার দেখান। পরে তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। কিন্তু সেখানেও কোনো রোগ ধরা পরেনি। তারা রোগীকে ঢাকা নিয়ে যেতে বলেন।শাহজাহান আরও বলেন, ‘আমার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় ফজিলাকে ময়মনসিংহের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করাই। সেখানের ডাক্তাররা রোগীকে অপারেশনের কথা বলে ও অনেক রিস্কি হবে জানান। আমি দিশা না পেয়ে রাজি হয়ে যায়। পরে ওই হাসপাতালে পরিচালক ডা. রবিনসহ পাঁচজন সার্জারি ও গাইনি ডাক্তার মিলে আমার স্ত্রীর অপারেশন করান। পরে ডাক্তাররা জানান, আমার স্ত্রীর পেট থেকে গজ-ব্যান্ডেজ বের করা হয়েছে, ভিতরে নাড়িতে পচন ধরেছে। আল্লাহকে ডাকো। ডাক্তাররা বলেছেন, তোমার স্ত্রী যদি বেঁচে থাকে, তাহলে ৩ মাস পর আরও একটা অপারেশন করতে হবে। ৫মাস ধরে স্ত্রীকে ডাক্তারের কাছে যেতে যেতে, চিকিৎসা করাতে বর্তমানে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমি ওই চিকিৎসকের বিচার চাই, যাতে আর কেউ এমন যন্ত্রণায় না ভোগে।এ বিষয়ে আইডিয়াল নাসিং হোমের পরিচালক ও অপারেশন টিমের ডা. এম এ রবিন বলেন, ‘পেট ফুলা ও ব্যথা নিয়ে ফজিলাকে আমাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আমরা জানতে পারি, পাঁচ মাস আগে ভালুকায় তার সিজার করা হয়। রোগীর স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিই। অস্ত্রোপচারে পেটের ভিতর থেকে গজ-ব্যান্ডেজ (ডাক্তারি ভাষায় মব বলে) বের করা হয়। ওই মবটি অ্যাতের ভিতরে ঢুকে পরছে। সেটি ইনফেকশন হয়ে অ্যাতের ভিতরে ঢুকে ছিল।রোগীর অ্যাত জোরা লাগাতে তিন মাস পর আরও একটা অপারেশন লাগবে।ভালুকা ডিজিটাল হাসপাতালে পরিচালক মো. শরীফ বলেন, আমাদের এখানে তারা কোনো অভিযোগ করে নাই। আমি শুনছিও না। অনেক অপারেশন হয়তো এগুলো মনে থাকে না। আমি খোঁজ নিয়ে দেখতাছি।

অনলাইন ডেস্ক

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর