Friday, December 13, 2024

পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন তত্ববধায়ক মাসুম বিল্লাহ, জবানবন্দিতে জানালেন নির্যাতিতরা

৩ বন্দি কিশোর হত্যা মামলায় সোমবার দ্বিতীয় দিনে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্যাতিত আরও তিন বন্দি আদালতে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা স্বিকার করেন, প্রথম তারা প্রধান নিরাপত্তা কর্মীকে মারপিট করে যা পুলিশ থেকে মিমাংশা করে দেয়। কিন্তু কর্মকর্তারা নিরাপত্তা কর্মীর চিকিৎসা বাবদ পাঁচলাখ টাকা দাবি করে। অন্যথায় তাদেরকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সাইফুদ্দীন হোসাইন তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করে ফের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র প্রেরণের আদেশ দেন।
সোমবার যারা আদালতে জবানবন্দি দিলো তারা হচ্ছে-গোপালগঞ্জের মকসেদপুর উপজেলার উজানী গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে পলাশ, নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বালশা গ্রামের মিলনের ছেলে পলাশ ও গোপালগঞ্জ কাশিয়ানী উপজেলার মৃত বিল্লাল খানের ছেলে নাঈম খান।
আদালত সূত্র ও পুলিশের একটি সূত্র জানায়, নির্যাতনের শিকার ওই ৩ বন্দি জবানবন্দি থেকে জানা যায়, চুল কাটাকে কেন্দ্র করে প্রধান নিরাপত্তা প্রহরীর সাথে লালমনিরহাটের হৃদয় নামে এক বন্দির গোলাযোগ হয়। এর জের ধরে গত ৩ আগস্ট তারা কয়েকজন মিলে প্রধান নিরাপত্তা প্রহরীকে মারপিট করে। পুলিশ সদস্যরা সেদিন এ ঘটনা মীমাংসা করে দেন। কিন্তু শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জড়িত বন্দিদের সাজা দেওয়ার জন্য ১৮ জনকে বাছাই করেন। গত ১৩ আগস্ট ওই ১৮ জনকে অফিস কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের মারধরের জন্য অনুগত কয়েকজন বন্দি কিশোরকে আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা হয়েছিলো। অনুগত বন্দি কিশোরদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-হুমাইদ, মোহাম্মদ আলী, রিফাত, মনোয়ার, পলাশ, আনিস, তুহিন প্রমুখ। এ সময় উপ-তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহ প্রধান নিরাপত্তা প্রহরীকে মারধরের জন্য জড়িত বন্দি কিশোরদেরকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে বলে জানিয়েছিলেন। নতুবা তাদেরকে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকিও দেন তিনি। এরপর জানালার গ্রিলের ভেতর দিয়ে দুই হাত বের করে বেঁধে, মুখ বেঁধে ১৮ বন্দিকে মারধর করা হয়। কর্মকর্তাদের মধ্যে মাসুম বিল্লাহ ও ফিজিক্যাল ইনসট্রাক্টর একেএম শাহানুর আলম ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে তাদের পেটান। তাদের অনুগত বন্দিরা ক্রিকেটের স্ট্যাম্প, কাঠের চলা, গাছের ডাল, সুপারি গাছের বাটাম, এসএস পাইপ ইত্যাদি দিয়ে ইচ্ছেমতো মারপিট করেন। এসময় কয়েকজন জ্ঞান হারান। তাদের মধ্যে ৩ জন মারা গেছে। উল্লেখ্য, গত ১৩ আগস্ট যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের বন্দিদের ওপর নির্যাতনে ৩ জন নিহত হয়। এছাড়া আরো ১৫ জন আহত হয়। এ ঘটনায় মামলার পর পাঁচ কর্মকর্তাকে আটক করা হয়। মারপিটের ঘটনার সাথে জড়িত আট কিশোর বন্দিকে শ্যোন এ্যারেস্ট দেখানো হয়। পরে তাদেরকে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি রোকিবুজ্জামান। এরপর আদালতে নির্যাতিতদের জবানবন্দি গ্রহনের আবেদন জানান তিনি। আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন। গত রোববার তিনজন ও সোমবার তিনজন সহ ছয়জনের জবানবন্দি গ্রহণ করে আদালত। বাকি আছে আরো নয়জনের।

রাতদিন সংবাদ

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর