Tuesday, December 10, 2024

ঘুনী শাখারিপাড়ার আসমা আক্তারের ষড়যন্ত্রে নাজেহাল গ্রামবাসী

যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের ঘুনী শাখারিপাড়ার আসমা আক্তারের ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় নাজেহাল গ্রামবাসী। পরিবারের সদস্যদের নামে একের পর এক মামলা দেয়ার পর যারা তার নির্যাতনের বিষয়ে কথা বলছেন তাদের নামেই মামলা দিচ্ছেন আসমা। এ পর্যন্ত তার দায়ের করা মামলার শিকার হয়েছেন ১৬ জন। যার মধ্যে নিজের বড় ভাবি জেসমিন আক্তারের নামেই ১৪টি মামলা করেছেন তিনি।
আসমার মামলার শিকার হয়েছেন তার বড় ভাই সাদেক ব্যাপারি। বড় ভাবি জেসমিন আক্তারের বাবা সামাদ মোল্লা, ভাই মাসুম বিল্লাহ ও মামুন বিল্লাহর নামেও করেছেন মামলা। আপন ছোট চাচা রফিকুল ইসলাম ব্যাপারি, ফুপা আইয়ুব আলী ব্যাপারি, চাচা শাহজালাল ব্যাপারি, আলা ব্যাপারি, গ্রামের আব্দুল মুজিত, জনি হোসেন, সুবহান ব্যাপারি, আব্দুল গফুর ব্যাপারি, শফিকুল ইসলাম ও সর্বশেষ আসমা আক্তারের বন্ধু মনিরুল ইসলাম তার মামলার শিকার। দায়ের করা মামলার বেশিরভাগই চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও হত্যাপ্রচেষ্টা। মামলা থেকে রেহাই পাননি খোদ ইউপি সদস্য ফারুক হোসেনও।
বুধবার দুপুরে ওই গ্রামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়ে আসমার অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে প্রশাসনসহ বিবেকবান মানুষের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন তার বড় ভাবি জেসমিন আক্তার, বড় ভাই সাদেক ব্যাপারি, মেজ ভাই ফারুক ব্যাপারির স্ত্রী রাহাতুননেছা সাদিয়া, ছোট ভাই ফিরোজ ব্যাপারির স্ত্রী নাসরিন, নাসরিনের বড়বোন সৈয়দা বেগম, ছোট চাচা রফিকুল ইসলাম, ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন ও সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য রাহেলা বেগম। সাংবাদিক সম্মেলনে এলাকার অসংখ্য নারী-পুরুষ উপস্থিত থেকে আসমার কুকৃতির বর্ণনা দেন।
আসমার অপকর্মের বর্ণনা দিয়ে বড় ভাই সৌদি প্রবাসী সাদেক ব্যাপারি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিদেশ থেকে তার পাঠানো টাকায় গ্রামে বাড়ি করেন পিতা জাফর ব্যাপারি। সেই বাড়িটিও কৌশলে বোন আসমা বাগিয়ে নিয়েছেন। তিনি বিদেশে থাকাকালীন স্ত্রী জেসমিন আক্তারের ওপর নির্যাতন চালান আসমা। এসব বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের আপোষনামাকেও গ্রাহ্য করেননি তিনি। আসমা ও তার পিতার একটাই কথা জেসমিনকে তালাক দিতে হবে। এই অন্যায় আব্দার না মানায় তারা সাদেকের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করেছেন।
সাদেকের স্ত্রী জেসমিন আক্তার জানান, আসমা তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ১৪টি মামলা করেছেন। তার স্বামী সৌদিতে থাকাকালীন তার ওপর নানা উছিলায় আসমা অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছেন। স্বামীর পাঠানো টাকাও তাকে ঠিকমতো দেননি শ্বশুর জাফর ব্যাপারি। আসমা একজন দুরাচারি নারী। তার অপকর্মের কথা গ্রামের সব মানুষ জানেন। তার অপকর্মের প্রমাণ নিজের কাছে আছে জানিয়ে জেসমিন বলেন, এ কারণে তাকে তালাক দিতে তার স্বামীকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করেন। ননদের এ অন্যায় বরাবরই সমর্থন করেন শ্বশুর জাফর ব্যাপারি। এসব বিষয় নিয়ে তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন, থানায় মামলাও করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে যে মীমাংসা করে দেয়া হয় তার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আসমা নিজের অপকর্ম অব্যাহত রেখেছেন। থানায় আসমার বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে অজ্ঞাত কারণে তাতে কোনো সুফল পাননি জানিয়ে তিনি দাবি করেন, আসমা তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কোনো অভিযোগ করার সাথে সাথেই পুলিশ গ্রামে চলে আসে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে আসমার অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনসহ সকলের সহানুভূতি কামনা করেন।
আসমার মেঝ ভাবি রাহাতুননেছা সাদিয়া জানান, স্বামী ফারুক ব্যাপারির সহযোগিতায় আসমা খাতুন তাকে লেবাননে পাচার  করেছিলেন। সেখানে প্রায় ছয় বছর নির্যাতন সহ্য করার পর তিনি পালিয়ে দেশে আসতে সক্ষম হন। দেশে আসার পর তাকে বাড়িতে উঠতে দেয়া হয়নি। তাকে তালাক দেয়া হয়েছে বলে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। এমনকি নিজের ছেলেকে পর্যন্ত তার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। ছেলের সাথে দেখা পর্যন্ত করতে দেয় না ননদ আসমা ও শ্বশুর। তাকে তালাকের কোনো ডকুমেন্টও দেয়া হয়নি। অন্যায়ভাবে স্বামী-সংসার থেকে বিতাড়িত হয়ে তিনি এখন মানুষের কাছ থেকে চেয়েচিন্তে খান দাবি করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি আসমাকে ‘অত্যাচারী মহিলা’ অভিহিত করে বিচার দাবি করেন। নিজের সংসারে ফিরে যাওয়ার আকুল আবেদন জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও মর্মস্পর্শী ঘটনার বর্ণনা দেন আসমা খাতুনের নির্যাতনের শিকার তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী আপন চাচাতো বোন নাসরিন খাতুন। তিনি জানিয়েছেন, আসমা তাকে দীর্ঘ আড়াই বছর গৃহবন্দি করে অমানুষিক নির্যাতন করেন। দিনের পর দিন খেতে দেননি। ঘর-গৃহস্থালির সকল কাজের হাড়ভাঙা খাটুনির পর অনাহারী নাসরিন জীবন বাঁচাতে দীর্ঘদিন লুকিয়ে খেয়েছেন বাড়িতে পোষা রাজহাঁসের জন্যে কুড়ো মেশানো ভাত। জটরজ্বালা নিবারণ করতে কুড়ো ধুঁয়ে ভাত খেতেন তিনি। আসমা ব্লেড দিয়ে তার হাত কেটে দেন। মুখে গামছা বেঁধে পিটিয়েছেন দিনের পর দিন। প্রসাধনীতে ঝালের গুড়ো মিশিয়েও সাধ মেটেনি আসমার, ক্রিমে এসিড মিশিয়ে বিকৃত করে দিয়েছেন নাসরিনের মুখ। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে শ্বশুর বাড়ি নামের টর্চার সেল থেকে জানুয়ারি মাসে মুক্ত করা হয় তাকে। তারপরও রয়েছেন জীবননাশের হুমকির মুখে।
স্থানীয় মেম্বর ফারুক হোসেন বলেন, আসমা খাতুন শহরে অবস্থান করায় প্রভাবশালীদের সাথে তার সংখ্য রয়েছে। নিজের অপকর্ম ঢাকতে সে একের পর এক মামলা দিয়ে গ্রামবাসীকে হয়রানি করছে। নাসরিন খাতুনকে তাদের বাড়ি থেকে উদ্ধারে সহযোগিতা করায় তিনিও আসমার দায়ের করা মামলার শিকার হয়েছেন।
অমানবিক এসব কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। ২০০৬ সালে আসমার প্রথম বিয়ে হয় শার্শা উপজেলার শ্যামলাগাছি গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে আরিফুল ইসলাম পিন্টুর সাথে। পিন্টু সৌদি আরব যাওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে ওঠেন আসমা। ওই সময় তিনি যশোর শহরের হুঁশতলা, পালবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া করে শুরু করেন নানা অপকর্ম। স্বামী থাকা সত্ত্বেও নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে ২০১১ সালের ১৫ জুন শুকুর আলী নামে আরেকজনকে বিয়ে করেন। কাগুজে সেই স্বামীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে আসমা তাকে বিতাড়িত করেন। ২০১৩ সালের ২৫ জানুয়ারি আসমা ঝিকরগাছা উপজেলার নাভারণের আবুল হাশেমের ছেলে রাজু আহমেদের সাথে অপকর্মের কারণে নাভারণ উত্তরপাড়ার শাহাজান আলীর বাড়িতে শালিস বসে। শালিসে রাজু আহমেদকে ৩৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ২০১৪ সালে আসমার স্বামী পিন্টু দেশে ফিরে এলে এসব ঘটনায় সংসার ভেঙে যায়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ঘুনী গ্রামের সাধারণ মানুষ আসমার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, নানা ছলচাতুরি আর ভুয়া কাবিননামা দেখিয়ে টাকা হাতানো আসমার পেশা। তার ফাঁদে পড়ে বহু পুরুষ সর্বস্বান্ত হয়েছে। শার্শার দেউলি গ্রামে বিয়ের পর স্বামী তার এসব আচরণের প্রতিবাদ করায় তাকে তালাক দিয়ে কাবিনসহ লাখ দশেক টাকা হাতিয়ে নিয়ে বাপের বাড়িতেই স্থায়ী আসন গেড়েছেন তিনি। এলাকাবাসী জানায়, আসমার সর্বশেষ শিকার তারই অনৈতিক কাজের মদদদাতা স্থানীয় ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম। গত ২৫ জুলাই আসমা আক্তার মনিরুল ইসলামকে আসামি করে জাল কাবিননামায় বিয়ে ও আট লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় আটক আছেন মনিরুল। মনিরুলের পরিবার দাবি করেছে, তাকে জিম্মি করে আসমা আক্তার টাকা দাবি করেন। টাকা না পেয়ে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করেন তিনি। এখন মামলা উঠিয়ে নেয়ার জন্যে মোটা অংকের টাকা দাবি করছেন।
আসমাকে ‘ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী’ দাবি করে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। তারা বলেন, তার এই অনৈতিক ক্ষমতার খেসারত দিতে হচ্ছে এলাকার মানুষের।

অনলাইন ডেস্ক

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর