জানা গেছে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেখে কৃষক জিয়াউর রহমান সুদূর চট্টগ্রাম, বগুড়া ও ফেনী থেকে ঔষধি গুণসম্পন ধানবীজ সংগ্রহ করে চাষ শুরু করে এলাকায় সাড়া জাগিয়েছেন। ঔষধি গুণসম্পন্ন এই ধানগাছ দেখতে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ। কৌতুহল জাগানো এই কালো প্রজাতির ধান বিষয়ে জানার শেষে। আগ্রহ সহকারে ধান ক্ষেতের ছবি তুলে ফিরছেন অনেকেই।
পর্যটক আকর্ষণের মত দর্শনার্থীদের ভিড় দেখে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোরের শার্শা উপজেলা সদরের বাসিন্দা জিয়াউর রহমান তিনি বাহাদুরপুর ইউনিয়নের লটাদিঘা গ্রামের মাঠে ঔষধি গুণসম্পন এসব ধান চাষ শুরু করেছেন। সুদূর চট্টগ্রাম, বগুড়া ও ফেনী থেকে ভিয়েতনামের বেগুনী রাইচ, ব্লাক রাইচ ও চায়না ব্লাক রাইচ নামক এর ধানবীজ সংগ্রহ করে প্রায় ৬ বিঘা জমিতে চাষ করেন। আর এতেই মানুষের মাঝে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়। কালো জাতের এই ভিন্ন ধরনের ধানগাছ দেখতে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। ঔষধি গুণের কথা এবং এই ধান চাষে খরচও কম এবং বেশি হওয়ার কথা জানতে পেরে অগ্রিম ধানবীজ কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
এছাড়াও ছবি তুলে ফিরছেন তাঁরা বাড়িতে। উল্লেখ্য, কালো চালের যত গুণাগুণ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বছর ব্যাপী ফল প্রকল্পের পরিচালক ও ধান গবেষণায় বিশেষজ্ঞ ড. মেহেদী মাসুদ বলেছেন, কালো চালে অ্যান্থসায়ানিন বেশি থাকে যা একটি ক্যান্সার প্রতিরোধী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এতে ফাইবার অনেক বেশি থাকে। ফলে এ চালের ভাত শরীরে গ্লুকোজ তৈরি করে খুব ধীর গতিতে। ফলে শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ কারণে এ চাল’কে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব কার্যকর বলা হয়”।
এছাড়া আমীষ, ভিটামিন, জিংক, খনিজ পদার্থসহ অন্য উপাদানগুলো সাধারণ চালের চেয়ে অন্তত তিনগুণ বেশি থাকে বলে দাবি করেন এ গবেষক। এছাড়াও তিনি আরও জানান, কালো চালের ভাত সাধারণ ভাতের অর্ধেক খেলে পেট ভরে যাবে। ফাইবার বেশি থাকায় তা সময় নিয়ে হজম হবে। যা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী।
এদিকে যাদের পেটে চর্বি রয়েছে তাদেরও উপকার হবে। কালো চালে গøাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) অনেক কম। জিআই যত কম হয় সেই খাবার শরীরে জন্য তত উপকারী। গ্লকোজের জিআই ১০০ ভাগ, চিনির ৮০ভাগ, সাদা চালের ভাতের ৭২ ভাগ, গমের আটার রুটিতে ৬৫ ভাগ আর কালো চালের জিআই মাত্র ৪২ ভাগ। কালো চাল ভালো উৎপাদন হলে রোগ প্রতিরোধের সাথে তা কৃষি অর্থনীতিতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
এবিষয়ে উক্ত ধান চাষী জিয়াউর রহমান জানান, সুদূর চট্টগ্রাম, বগুড়া ও ফেনী থেকে ঔষধি গুণসম্পন্ন ভিয়েতনামের বেগুনী রাইচ, ব্লাক রাইচ ও চায়না ব্লাক রাইচ এর ধানবীজ সংগ্রহ করে এই প্রথম ৬ বিঘা বন্ধকী জমিতে চাষ করি। আর এতেই মানুষের মাঝে কৌতুহলের উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে। কালো প্রজাতির এই ভিন্ন ধরনের ধানগাছ দেখতে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেখে ঔষধি গুণের কথা ও এই ধান চাষে খরচও কম জানতে পেরে উৎসাহিত হয়ে ধানবীজ সংগ্রহ।
এ ধানবীজ অগ্রিম কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। আর আমিও অনেকের অনুরোধে ও আমার এলাকার মানুষের কথা চিন্তা করে, এই ধান থেকে বীজধান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যারা এই ধানবীজ সংগ্রহ করার ইচ্ছা পোষণ করবেন তারা আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
এ ব্যাপারে শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা জানান,এ উপজেলায় এ ধানের চাষ এটা প্রথম। এটি ক্যানসার প্রতিরোধে এন্টি অক্সিডেন্ট পুষ্টি সমৃদ্ধ ধান। যদিও বৈজ্ঞানিক ভাবে আমাদের কোন ধারনা দেওয়া হয়নি। যদি কোনদিন সরকারি ভাবে এ সম্পর্কে কোন ধারনা পায় তাহলে কুষকদের এ ধান চাষে সার্বিক সহযোগীতা করা হবে বলে তিনি জানান।
আর কে-০৯