Tuesday, September 26, 2023

কালীগঞ্জে সংখ্যালঘু প্রতিবন্ধী বৃদ্ধের জমি বিনা টাকায় লিখে নিলো এক প্রভাশালী

মোঃ হাবিব ওসমান, ঝিনাইদহ প্রতিবেদকঃ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মহাদেবপুর গ্রামের নরোত্তম নামে এক সংখ্যালঘু বুদ্ধি প্রতিবন্ধি বৃদ্ধের ১ একর ৩ শতক জমি বিনা টাকায় রেজিষ্ট্রি করে নিয়েছে একই গ্রামের স্বপন বিশ্বাস নামে এক প্রভাবশালী মাতুব্বর। বৃদ্ধ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি মহাদেবপুর গ্রামের মৃত কুঞ্জ বিহারীর ছেলে নরোত্তম মন্ডল। এবং জমি ক্রয়কারী স্বপন বিশ্বাস একই গ্রামের মৃত সন্তোষ বিশ্বাসের ছেলে।

বিক্রয়কৃত দলিলে উল্লেখিত, গত-১৯/০২/২৩ ইং তারিখে উপজেলার ৮ নং মহাদেবপুর মৌজার মহাদেপুর গ্রামের নরোত্তম মন্ডলের পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া আরএস দাগ নং-৩২৮ বাস্ত শ্রেনীর ১২.০০ শতক, আরএস দাগ নং-১৭৩৬ ডাঙ্গা শ্রেনীর ০৫.৫০ শতক, আরএস দাগ নং-১৮০৩ ডাঙ্গা শ্রেনীর ১৮.০০ শতক, আরএস দাগ নং-১৮৯৮ ডাঙ্গা শ্রেনীর ১২.০০ শতক, আরএস দাগ নং-২৩০২ ডাঙ্গা শ্রেনীর ০৯.০০ শতক, আরএস দাগ নং-২৪০৭ ডাঙ্গা শ্রেনীর ১২.৫০ শতক জমি। এই ৬টা দাগের ৬৯ শতক জমি এবং আরএস দাগ নং-১৮৫৩ ডাঙ্গা শ্রেনীর ৩৪.০০ শতকসহ মোট ১ একর ৩ শতক জমি, স্বপন বিশ^াস ১০ লক্ষ ১৬ হাজার টাকায় জমি নিজের নামে রেজিষ্ট্রি করে নেয় বলে দলিলে উল্লেখ করা হয়। একই দলিলে এই ১ একর ৩ শতক জমি মধ্যে ১২ শতক জমি ১ লক্ষ ৯৭ হাজার টাকায় মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার শ্রীকোল এলকার গয়েসপুর গ্রামের মৃত ননী গোপাল মন্ডলের অধির কুমার মন্ডলের বিক্রয় করা হয়। একই দলিলে ১ একর ৩ শতক জমির মধ্যে ৬৯ শতক জমি স্বপন বিশ^াস এবং ৩৪ শতক জমি অধির কুমার মন্ডল ক্রয় করেছেন বলে দলিলে উল্লেখ করা হয়।

এ ব্যাপরে বৃদ্ধ নরোত্তম মন্ডল বলেন, স্বপন বিশ্বাস আমার কাছে কিছু বলেননি। আমার স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করে আমার বাড়িতে রেজিষ্ট্রি অফিসের লোকজন এসে আমার আইডি কার্ড দেখে নাম ঠিকানা লিখে নিয়ে গেছে। আমি পরে শুনতে পেলাম আমার সমন্ত জমি নাকি আমার স্ত্রী স্বপন বিশ্বাসের কাছে বিক্রয় করে দিয়েছে। আমাদের বসবানের জন্য ২ রুম বিশিষ্ট একটা বাড়ি করে দিয়েছেন। এই বাড়িতে আমি এবং আমার স্ত্রী বসবাস করছি। আমার ৩ মেয়ে অনেক আগেই ভারতে চলে গেছে। তাদের সবাই ভারতেই বিয়ে করে ঘর সংসার করছে। এখন আমি মাছ মারা জাল বুনে কোন রকম খেয়ে না খেয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে। আমি এ ব্যাপারে যদি আমার স্ত্রীকে কিছু বলি তাহলে আমার স্ত্রী আমার সাথে ঝগড়া করে এজন্য আমি আর কিছু বলি না।

স্থানীয়রা জানায়, কালীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিসের সদ্য অবসরে যাওয়া ক্ষেত্র সহকারি স্বপন বিশ্বাস কালীগঞ্জ উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারন সম্পাদক নাসির চৌধুরীকে অসহায় নরোত্তম মন্ডলের বাড়িতে এনে টাকা না দিয়েই ১ একর ৩ শতক জমি কৌশলে নিজের নামে রেজিষ্ট্রি করে নেওয়া ঠিক হযনি। কারন নরোত্তম মন্ডল একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধি বৃদ্ধ মানুষ। তার কোন ছেলে সন্তান নেই। তিন মেয়ে আছে তারা অনেক আগেই ভারতে চলে গিয়াছে। এখানে শুধু নরোত্তম এবং তার স্ত্রী থাকেন। নরোত্তমের স্ত্রীকে হাত করে তিনি এই কাজটি করেছেন। এবং সেখান থেকে ৩৪ শতক জমি বিক্রয় করে রেজিষ্ট্রি খরচ এবং তার ক্রয়কৃত জমিতে নরোত্তমের বসবাসের জন্য দুই রুম বিশিষ্ট একটি পাকা ঘর করে দিয়েছেন। স্বপন বিশ্বাসের উদ্দেশ্য খারাপ, কারন নরোত্তমের পরিবারের লোক থাকতেও তাদের সনাক্তকারী না করে, স্বপন বিশ্বাসের ভাই সরোজিত বিশ্বাসের ছেলে সুজিত বিশ্বাসকে সনাক্তকারী করেন। এবং স্বাক্ষী হিসাবে স্বপন বিশ্বাসের ছেলে সোহাগ এবং শ্যালক একই গ্রামের ধীমানের নাম রয়েছে। গ্রামবাসী প্রশাসনের নিকট দাবি করেন নরোত্তম বিশ্বাসের জমি ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

বিনা টাকায় জমি ক্রয়ের কথা জানতে চাইলে স্বপন বিশ্বাস প্রথমে বিষয়টি বিভিন্ন ভাবে এিেড়য়ে যান। এবং এক পর্যায়ে তিনি বলেন, নরোত্তম মন্ডল বুদ্ধি প্রতিবন্ধি তার দেখার মতো কেউ নেই। আমিই তাদের দেখাশোনা করি। তার জমি এই গ্রামের মনজের নামে এক ব্যক্তি চাষ করতো। সে তার জমিগুলো নিয়ে নিতে পারে এজন্য নরোত্তম মন্ডলের জমিগুলো তার স্ত্রী এবং ভারতে থাকা মেয়েদের সম্মতিতে নরোত্তমের বাড়িতে দলিল লেখক সমিতির সাধারন সম্পাদক নাসির চৌধুরীসহ অফিসের লোক এনে আমার নিজের নামে দলিল করে নিয়েছি। তা নাহলে তার জমিগুলো মানুষে দখল করে নিতো। এবং এই জমির মধ্যে ৩৪ শতক জমি বিক্রয় করে তাদের স্বামী-স্ত্রীকে বসবাসের জন্য একটি বাড়ি করে দিয়েছি। তাদের সমস্থ খরচ আমি চালাই। এটা আপনারা নরোত্তমের স্ত্রীর নিকট শুনে দেখেন।

এ সময় নরোত্তমের স্ত্রী বাড়িতে না থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। জমি আবার ফেরত দিবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন আপনারা নরোত্তমের স্ত্রীর সাথে কথা বলেন সব জানতে পারবেন। আমি তাদের আমানত রক্ষা করার জন্য আমার নিজের নামে করে নিয়েছি। তাদের সাথে আমার সম্পর্ক ভালো, তারা কোন প্রকার ক্ষতিগ্রস্থ হোক এটা আমি চাইনা।

কালীগঞ্জ উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারন সম্পাদক নাসির চৌধুরী বলেন, আমি বাড়ির গিয়েছি তবে একা নয়, আমার সাথে অফিসের লোক ছিল। কমিশন করে জমি রেজিষ্ট্রি করা। ব্যাংকে টাকা জমার চালান কপি, পে-অর্ডারসহ দলিল সাবমিট করার পর সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস থেকে লোক পাঠিয়ে তাদের সাথে আমি গিয়েছিলাম। এটা বিধি মোতাবেক হয়েছে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কালীগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার মাহমুদা খাতুন শিরিন জানান, বাড়ির উপর গিয়ে জমি রেজিষ্ট্রি হয় তবে সেটা কমিশনে হয়। সে ক্ষেত্রে আগে ব্যাংকে চালান জমা দিয়ে চালানের কপি, পে-অর্ডার সহ দলিল অফিসে সাবমিট করতে হয়। এরপর অফিস থেকে যাকে পাঠানো হবে তার মাধ্যমে রেজিষ্ট্রি করা যায়। কিন্তু অফিসের লোক বাদে এভাবে বাড়ির উপর গিয়ে রেজিষ্ট্রি করার নিয়ম নেই। এভাবে যদি শুধু দলিল লেখক গিয়ে জমি রেজিষ্ট্রি করার কথা বলে তাহলে সেটা ভূয়া হবে দলিল।

আর কে-০৫

 

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ