Tuesday, September 26, 2023

স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা

এশিয়া কাপের সুপার ফোরে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার ম্যাচটা অলিখিত সেমিফাইনালে রূপ নিয়েছিল। তার ওপর ছিল বৃষ্টি হানার সম্ভাবনা। কয়েক দফা বৃষ্টি হানা দিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত থাকা ম্যাচের উত্তাপে সেটি আর বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। জমজমাট লড়াইয়ে বৃষ্টি আইনে পাকিস্তানকে ২ উইকেটে হারিয়ে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্টের ফাইনালে নাম লিখিয়েছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। রবিবার স্বাগতিকরা ভারতের মুখোমুখি হবে। গত আসরে লঙ্কান দল টি-টোয়েন্টি ফর‌ম্যাটে শিরোপা জিতেছিল।

২৫২ রানের লক্ষ্যে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল শ্রীলঙ্কা। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে স্কোরবোর্ড সচল রাখছিলেন কুশল পেরেরা। দলের ২০ রানে লঙ্কান এই ওপেনার (১৭) আউট হলেও তা লঙ্কানদের বিচলিত করতে পারেনি। ৭৭ রানে পড়ে পাথুম নিসাঙ্কার (২৯) উইকেট। তখনও মনে হয়নি লঙ্কানদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরানো গেছে। কারণ শুরু থেকে রানরেটের দিকে নজর রেখে খেলায় সেই চাপটা তাদের নিতে হয়নি। ফলে অবিচল থেকে পাকিস্তানি বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে খেলেছেন কুশল মেন্ডিস ও সাদিরা সামারাবিক্রমা। মনে হচ্ছিল এই জুটিতেই লঙ্কান দল অনায়াসে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়বে।  কিন্তু ক্রিকেট যে ঘোর অনিশ্চয়তার খেলা! ১০০ রানের এই জুটি ভাঙতেই দৃশ্যপট পাল্টায় ম্যাচের। সামারাবিক্রমা ব্যক্তিগত ৪৮ রানে ফিরলে ভাঙে জুটি। তার পর সেঞ্চুরির পথে থাকা ও সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক কুশল মেন্ডিসকে (৯১) আউট করে লঙ্কানদের নড়বড়ে পরিস্থিতির মুখে ফেলে দেন ইফতিখার। এই দুই ব্যাটার ফেরার পরই ম্যাচটা পেন্ডুলামের মতো দুলতে শুরু করে।

ইফতিখার দাসুন শানাকাকেও ৩৮ ওভারে আউট করলে ম্যাচটা পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে। শাহীন ৪১তম ওভারে পর পর ধনাঞ্জয়া ও ভেল্লালাগের উইকেট তুলে নিলে শেষটায় স্নায়ু পরীক্ষার মুখে পড়ে দুই দল। তখন ৬ বলে শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন ৮ রান। ক্রিজে ছিলেন স্বীকৃত ব্যাটার চারিথ আসালাঙ্কা ও প্রমোদ মাদুশান। শেষ ওভারে প্রথম তিন বলে দুই রান নিতে পারে তারা। চতুর্থ বলে পাকিস্তান মাদুশানকে আউট করতে পারলেও স্নায়ু পরীক্ষায় উতরে যায় শ্রীলঙ্কা। আসালাঙ্কা শেষ দুই বলে একটি চার ও ডাবলসে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন। তাতে ৮ উইকেট হারানো শ্রীলঙ্কা রেকর্ডড ১১তম বারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে নাম লিখিয়েছে।

জয় নিয়ে মাঠ ছাড়া আসালাঙ্কা ৪৭ বলে ৪৯ রানে অপরাজিত থেকেছেন। তার ইনিংসে ছিল ৩টি চার ও ১টি ছয়ের মার। জয়ের ভিত গড়ে দেওয়া মেন্ডিসের সর্বোচ্চ ৯১ রানের ইনিংসে ছিল ৮টি চার ও ১টি ছয়। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হাল ধরে খেলায় ম্যাচসেরাও তিনি।

শেষটা জমিয়ে তুলতে অবদান ছিল পাকিস্তান স্পিনার ইফতিখার আহমেদের। ৫০ রানে তিন উইকেট নেন তিনি। ৫২ রানে দুটি নেন পেসার শাহীন আফ্রিদি।

বৃষ্টির হানায় ম্যাচ শুরুই হয় দুই ঘণ্টার বেশি বিলম্বে। তাই ম্যাচ নেমে আসে ৪৫ ওভারে। টস জিতে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তানের শুরুটা মোটেও ভালো ছিল না। ৪.২ ওভারে আউট হন ফখর জামান। অধিনায়ক বাবর আজম-আব্দুল্লাহ শফিক মিলে ধাক্কা সামাল দিতে পেরেছিলেন। ৬৪ রান যোগ করে পথ দেখাচ্ছিলেন তারা। ঠিক এমন সময় বাবর (২৯) আজমের বিদায়ে ছন্দপতন ঘটে ইনিংসে।

ওপেনার শফিক ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরি (৫২) পেয়েছেন ঠিকই। কিন্তু ইনিংসটা লম্বা করতে পারেননি। ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৬৯ বলের ইনিংস খেলে আউট হয়েছেন। দলের শত রানে তার বিদায়ের পর দ্রুত সময়ে হারিস (৩) ও নওয়াজের (১২) আউটে চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান। তখন রানের গতিও বেশি ছিল না।

২৭.৪ ওভারে আবার বৃষ্টি বাধা তৈরি করলে ম্যাচ নেমে আসে ৪২ ওভারে। এই বিরতির পরই চাঙা হয়ে ওঠেন রিজওয়ান। ইফতিখারকে সঙ্গে নিয়ে ঝড়ো গতিতে রান তুলতে থাকেন তিনি।

যেখানে বৃষ্টি বিরতির আগে ৫ উইকেটে ১৩০ রান ছিল স্কোরবোর্ডে। সেখান থেকে রিজওয়ান-ইফতিখার জুটিতে ৪০.৩ ওভারে জমা হয় ২৩৮ রান! ৭৮ বলে তারা ১০৮ রান যোগ করেছেন তারা। ইফতিখার ৪০ বলে ৪৭ রানে আউট হলে ভাঙে দারুণ এই জুটি। তার পর রিজওয়ানের দৃঢ়তায় ৭ উইকেটে পাকিস্তানের স্কোর হয় ২৫২।  রিজওয়ান ৭৩ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৮৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। বৃষ্টি আইনে লঙ্কানদের লক্ষ্যও দাঁড়ায় ২৫২।

লঙ্কানদের হয়ে ৬৫ রানে তিনটি উইকেট নিয়েছেন মাথিশা পাথিরানা। ৫৮ রানে দুটি নিয়েছেন প্রমোদ মাদুশান।

অনলাইন ডেস্ক

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ