Thursday, March 28, 2024

বিএনপি সংসদে নেই, নির্বাচনকালীন সরকারের চিন্তায়ও নেই

- Advertisement -

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নির্বাচনকালীন সরকারে সংসদে থাকা দলগুলো চাইলে তাদের কাউকে কাউকে মন্ত্রিত্ব দেওয়ার ইঙ্গিত করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে বিএনপির মতো সংসদে যারা নেই, তাদের বিষয়টি চিন্তায় নেই বলে তিনি জানিয়েছেন।

- Advertisement -

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘পার্লামেন্টে যারা আছে, তাদের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছা প্রকাশ করে যে নির্বাচনকালীন সরকারে তারা আসতে চায়, আমরা নিতে রাজি আছি।’

সোমবার (১৫ মে) বিকেলে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সম্পর্কে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনটি বিটিভিসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। শুরুতে প্রধানমন্ত্রী তিন দেশ সফরে অর্জন, সেখানে করা চুক্তি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে লিখিত বক্তব্য দেন। এরপর তিনি সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন।

সংবাদ সম্মেলনে একেবারে শেষ প্রশ্নটি ছিল সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকালীন সরকারটা কেমন হবে। এতে বিরোধী দলের কেউ থাকবে কী না। বিএনপি আন্দোলন নিয়ে অনুভব করছেন কী না। এর জবাবে প্রথমেই হাসতে হাসতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন কি আমি কানব? ওই নির্বাচন আসতেছে ভয় পাব? কেন ভয় পাব? আমি জনগণের জন্য কাজ করছি। জনগণ যদি ভোট দেয় আছি। না দিলে নাই।

বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট মিনিস্টার পদ্ধতি অনুসরণ করে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সেখানে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও একইভাবে নির্বাচন হবে।

নির্বাচনকালীন সরকারে বিরোধীদের রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এটুকু উদারতা দেখাতে পারি। পার্লামেন্টে যারা আছে, তাদের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছা প্রকাশ করে যে নির্বাচনকালীন সরকারে তারা আসতে চায়, আমরা নিতে রাজি আছি। এই উদারতা আগে আমরা দেখিয়েছি। এমনকি ২০১৪ সালে আমি খালেদা জিয়াকেও আহ্বান করেছিলাম। তারা তো আসেনি। এখন তো তারা নাইও পার্লামেন্টে। কাজেই ওদের নিয়ে চিন্তারও কিছু নাই।

বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তারা মাইক লাগিয়ে আন্দোলন করেই যাচ্ছে। সরকার হটাবে! আমরা তো তাদের কিছু বলছি না? আমরা যখন অপজিশনে (বিরোধী দলে) ছিলাম, আমাদের কি নামতে দিয়েছে? গ্রেনেড হামলা করেও হত্যা করার চেষ্টা করেছে। আমাদের ২১ হাজার নেতাকর্মী হত্যা করেছে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে।

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা কার পয়সায় আন্দোলন করছে? কোথা থেকে টাকা পাচ্ছে? তারা গ্রেনেড হামলা করে হত্যার চেষ্টা করেছে। আমাদের ২১ হাজার নেতাকর্মী হত্যা করেছে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। নির্বাচন ঠেকাতে ৫০০ স্কুল পুড়িয়েছে। সাড়ে ৩ হাজার লোক আগুনে পোড়া। ৩৮০০ গাড়ি পুড়িয়েছে, ২৭টি রেল পুড়িয়েছে, ৯টা লঞ্চ পুড়িয়েছে, ৭০টা সরকারি অফিস পুড়িয়েছে। তারা জ্বালাও-পোড়াও ওইগুলো করে গেছে।

বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমি বলে দিয়েছি যে, আন্দোলন করুক কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু জ্বালাও-পোড়াও যদি কিছু করতে যায়, কোনও মানুষকে যদি আবার পোড়ায়, কাউকে ছাড়বো না। মানুষের ক্ষতি আর করতে দেবো না। সেই পোড়া মানুষগুলোর চেহারা, তাদের কষ্ট দেখলে আপনাদের কষ্ট হয় না? এক-একটা পরিবার কী অবস্থায় আছে, কেউ কী খবর রাখে? কী বীভৎস অবস্থা সৃষ্টি করেছে এই বিএনপি-জামায়াত।

২০০৮ সালের নির্বাচনে তাদের ২০ দলীয় ঐক্যজোট সিট পেয়েছে মাত্র ২৯টি। এখন তারা আবার বড় বড় কথা বলে। কার পয়সায় এই আন্দোলন করছে? কোত্থেকে টাকা পাচ্ছে? বাংলাদেশের মানুষ এত অন্ধ হয়ে গেছে? চোখে দেখে না? হাজার হাজার কোটি টাকা যে লুট করে নিয়ে গেছে আর কাদের মদতে করছে, সেটা একটু খোঁজখবর নেন না। এত টাকা কোথায় পাচ্ছে? প্রতিদিন লোক নিয়ে আসে আর প্রতিদিন মাইক লাগিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছে। এমনি এমনি বিনা পয়সায় তো আর হচ্ছে না। কত দিচ্ছে, কত লোক আনবে, মোটরসাইকেলে কতজন আসবে— সেসব হিসাব তো আছে। সেগুলো আপনারা দেখেন না কেন? একটু খোঁজখবর নেন, জিজ্ঞেস করেন। সরকার উৎখাত করবে, আমি জানি এই আন্দোলন করে কোথাও থেকে তারা লাভবান হচ্ছে। তারা যত পারে আন্দোলন করুক। আমি জনগণের সঙ্গে আছি, তাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাসই আমার একমাত্র শক্তি। আমার তো হারাবার কিছু নেই। বাবা-মা-ভাই সবই হারিয়েছি। আমি এখন দেশের জন্য কাজ করে যাই।

দেশে আন্দোলনরত বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি আবারও নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আলোচনায় কীসের জন্য ডাকতে যাবো? তাদের ডিমান্ডই তো ঠিক নাই।

যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখার সময় বাইরে অনেক লোক বিক্ষোভ করছিল। তখন তাদের ডেকে কথা বলতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তার স্পিস রাইটারের এই বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রশ্ন করা হয়, এটি ঠিক কিনা। জবাবে মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক অভিব্যক্তি জানান প্রধানমন্ত্রী।

পরে প্রশ্ন করা হয়, এটি ঠিক থাকলে বাংলাদেশেও অনেক মানুষ রোদের মধ্যে কষ্ট, রাস্তায় নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। তারাও কষ্ট করছে। আপনি কি ওদের (যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষোভকারীরা) মতো এদেরও (বাংলাদেশে তাদের অংশ) আলোচনায় ডাকবেন?

উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, কাদের? সেই উত্তরটা পরে দিচ্ছি। আলোচনায় কীসের জন্য ডাকতে যাবো? তাদের ডিমান্ডই তো ঠিক নাই। যুক্তরাজ্যে যারা ছিলেন তখন বৃষ্টি নেমেছিল। আমি ভাবলাম বাংলাদেশের প্রবাসী তারা বৃষ্টিতে ভিজবে তার চেয়ে তাদের ডাকি, কী বলতে চায় শুনি। এখন ঢাকায় বা বাংলাদেশে যারা, তাদের যদি বৃষ্টিতে ভেজা শখের মধ্যে থাকে তারা থাকুক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কী কারণে স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেবে? যাদের দিয়ে (র‌্যাব) আমরা সন্ত্রাস দমন করলাম, জঙ্গিবাদ দমন করলাম। হলি আর্টিজানের পর বাংলাদেশে আর তেমন কোনও বড় ঘটনা ঘটেনি। কারণ, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গোয়েন্দা নজরদারি এবং আরও কিছু ভালো কাজ করেছে। যার ফলে আর কিছু তেমন হয়নি। এরপরও স্যাংশন কেন? সেটাই আমাদের প্রশ্ন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি তো অর্থ মন্ত্রণালয়কে, কেনাকাটার বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে বলে দিয়েছি। এখন থেকে আমাদের শর্ত থাকবে, যারা আমাদের স্যাংশন দেবে তাদের থেকে আমরা কোনও কিছু কেনাকাটা করবো না। পরিষ্কার কথা। এখানে ভয়ের কী আছে? যেটা নিয়ে সমস্যা হয় সেটা আমরা উৎপাদন করে সমাধান করতে পারি।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী যেখানে মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্যের অভাব, উন্নত দেশে খাবার কেনা সীমিত করে দেওয়া হচ্ছে, যারা বড়লোক তাদের অসুবিধা নাই, সাধারণ মানুষের তো অনেক অসুবিধা হচ্ছে। সেদিক থেকে আমরা তো আমাদের মানুষকে প্রণোদনা দিয়েছি। রোজার সময় তো মানুষের হাহাকার শোনা যায়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোজার সময় আমরা মানুষকে যথেষ্ট সাহায্য করেছি। আমাদের নেতাকর্মীরা করেছে। তো আমাদের দুশ্চিন্তার কী আছে? কথা নাই, বার্তা নাই, স্যাংশনের ভয় দেখাবে! আমরা ভয় পেয়ে বসে থাকবো কেন? আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। যারা আমাদের সপ্তম নৌবহরের ভয় দেখিয়েছিল, আমরা সেটি পার করে বিজয় অর্জন করেছি। সেটি ভুললে চলবে না, আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে। আমাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ, এটা সেটা শুনতে হয়। আমাদের দেশেরই কিছু মানুষই দেশের বদনাম করে। তারা যে দুর্নীতিসহ কত অপকর্মের সঙ্গে জড়িত সেগুলো আমাদের সাংবাদিকরা খুঁজে বের করে না। সাংবাদিকরা খুঁজলে অনেক তথ্য পাবে।

অনলাইন ডেস্ক/আর কে-২১

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

jashore-fish

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত