পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কের জেরে স্বামী জহির হাসান গাজীকে হত্যার ঘটনায় স্ত্রী শেফালি বেগম ও তার পরকীয়া প্রেমিক রবিউল ইসলামকে আলাদা অভিযানে র্যাব ও যশোর কোতয়ালি থানা পুলিশ আটক করেছে। চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ড সম্পর্কে যশোর কোতয়ালি পুলিশ ও যশোর র্যাব ক্যাম্প আলাদা আলাদা প্রেসবিফিং এ চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের বর্ণনা দিয়েছে।
জহির হাসান শহরের বকচর হুশতলা এলাকার মৃত হোসেন আলী গাজীর ছেলে। বর্তমানে তিনি ওই এলাাকার কল্পতরু হাউজিয় স্টেটের শান্তা রানী কুন্ডর বাড়ির নিচতলায় ভাড়া থাকেন
যশোর কোতয়ালি থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত ভিন্ন কৌশলে স্বামীকে হত্যা করেছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন শেফালি। সে যশোর শহরের মাতৃসেবা নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালের আয়া। শেফালির সাথে শহরের শংকরপুরের রবিউল সরদার নামে এক যুবকের পরকীয়া সম্পর্ক তৈরি হয়। রবিউল শংকরপুর ইসহাক সড়কের আব্দুল সরদারের ছেলে। এ নিয়ে আগের দিন স্বামী জহিরের সাথে তার গোলযোগ হয়। পরদিন দুপুরে স্বামীর খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন তিনি। ওষুধের প্রভাবে ঘুমিয়ে পড়ার পর ওই দিন সন্ধ্যার দিকে তার শরীরে ভিজিয়ে রাখা মোবাইল ফোনের ব্যাটারি থেকে নিশ্রিত অ্যাসিড সিরিঞ্জের মাধ্যমে পুশ করেন শেফালি। এ অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। কিন্তু রাতে জহির হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে পরিবারে কছে জানান শেফালি। জহিরের ছোট ভাই ফেরদৌস রাত দেড়টার দিকে তাকে নিয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালে আসেন। এসময় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি আরও জানান, পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জহিরের স্ত্রীর পরকীয়া ও এ নিয়ে দাম্পত্য কলোহের কথা জেনে শেফালিকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন এবং ঘটনার বর্ণনা দেন।
এদিকে বিকেলে র্যাব যশোর ক্যাম্পে এক প্রেস ব্রিফিং এ জানানো হয়, ঘটনার সাথে মূল পরিকল্পনাকারী শেফালির প্রেমিক রবিউল ইসলামকে শহরের শংকরপুর গোালপাতা মসজিদ এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। র্যাবের হাতে আটক রবিউল ইসলাম শহরের শংকরপুর এলাকার ভাড়া হিসাবে বসবাস করেন। তার আসল বাড়ি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার পাইকগাছা গ্রামে।
র্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের অধিনায়ক লে. কমান্ডার এম নাজিউর রহমান বিকেলের তাৎক্ষণিক এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, ঘটনার পরপরই ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব। হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা শেফালীর প্রেমিক রবিউল ইসলামের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে বুধবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে আটককৃত দু’জনকেই নিহতের ভাই গাজী শাহনেয়াজের দায়ের করা মামলায় আটক দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
গাজী শাহনেওয়াজ এজাহারে উল্লেখ করেছেন, তার ভাবি শেফালির সাথে রবিউল ইসলামের পরকীয়ার সম্পর্ক তৈরি হয়। এই নিয়ে ভাইয়ের সাথে ভাবির গন্ডোগোল হতো। কিন্তু তার ভাই কাউকে কিছু বলতো না। রবিউলের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘরের ওয়ারড্রব থেকে তার ভাইয়ের একটি মোবাইল ফোনের ব্যাটারি এবং পুরনো আরো একটি ব্যাটারি ১০/১৫দিন আগে পানিতে ভিজিয়ে অ্যাসিড সংগ্রহ করে। মঙ্গলবার দুপুরে পানির সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে স্বামীকে পান করতে দেয়। ওই পানি পান করে তার ভাই জহির হোসেন ঘুমিয়ে পড়ে। এরপর তার দুই ছেলে মেয়ে প্রাইভেট পড়তে বাড়ির বাইরে গেলে কৌশলে শেফালি তার ভাইয়ে হাতের শিরার মধ্যে ওই অ্যাসিড মিশ্রিত পানি পুশ করে। এবং ঘুমের মধ্যেই জাহির হোসেন মারা যায়।
সন্ধ্যার দিকে শেফালি জানায় ঘুমের মধ্যে তার স্বামী স্ট্রোক করেছে। পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত পায়। পরে তার দুই হাতে ক্ষত এবং কালো দাগ দেখে সন্দেহ হয়। এবং পুলিশকে সংবাদ দেয়। পুলিশ শেফালিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে সে হত্যার কথা স্বীকার করে। তার দেখানো মতে যে মোবাইল ফোনের ব্যাটারি থেকে অ্যাসিড সংগ্রহ করে সেই মোবাইল ফোনটি পুলিশ জব্দ করে। এছাড়া ঘুমের ওষুধের পাতা ও ইনজেকশনের সিরিঞ্জ মনিহারের বিপরীতে ফলপট্টির সামনে রাস্তার ওপর ফেলে দেয়। পুলিশ সেখানে গিয়ে ওই ওষুধের পাতা ও সিরিঞ্জ উদ্ধার করে। এছাড়া মাতৃ সেবা ক্লিনিক থেকে আরো সিরিঞ্জ উদ্ধার করে।
এদিকে আদালত সূত্রে জানাগেছে, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সালমান আহমেদ শুভ এবং অবন্তিকা রায়ের আদালতে দুই আসামি স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বিচারক আলাদাভাবে দুইজনের জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করেছেন।
রাতদিন সংবাদ/আর কে-১৬