Saturday, April 20, 2024

প্রিয়নবীর সাথে বেয়াদবির পরিণতি ভয়াবহ অবস্থা!

হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকীঃ প্রিয় পাঠকের কাছে আজকে আমার আলোচনা হলো প্রিয়নবীর সাথে বেয়াদবির পরিণতি ভয়াবহ অবস্থা সম্পর্কে। স্বয়ং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রিয়নবীর সঙ্গে বিদ্রুপকারীদের থেকে ‘প্রতিশোধ’ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কুরাইশ কাফেরদের মধ্যে দুষ্কৃতকারী একটি দল ছিল। এ দুরাচারীরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেওয়া, তাঁকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করা এবং তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার ক্ষেত্রে সবার চেয়ে অগ্রগামী ছিল। তারা হলো—
১. ওয়ালিদ ইবনে মুগিরা
২. আসওয়াদ ইবনে মুত্তালিব
৩. আসওয়াদ ইবনে আবদে ইয়াগুস
৪. হারেস ইবনে আইতাল
৫. আস ইবনে ওয়ায়েল সাহমি।
একদিন জিবরাঈল আলাইহিস সালাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে এসে উপস্থিত হলেন। উপরোল্লিখিত ব্যক্তিদের দেওয়া কষ্টে অতিষ্ঠ হয়ে নবীজি জিবরাঈলের কাছে তাদের নামে অভিযোগ করলেন। এর কিছুক্ষণ পরই সেখান দিয়ে ওয়ালিদ ইবনে মুগিরা অতিক্রম করল। জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তার আঙুলের দিকে ইশারা করে বললেন, আমি তার জন্য যথেষ্ট। তারপর দেখা গেল আসওয়াদ ইবনে মুত্তালিবকে। জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তার চোখের দিকে ইশারা করে বলেন, আমি তার জন্য যথেষ্ট। তারপর এলো আসওয়াদ ইবনে আবদে ইয়াগুস। জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তার মাথার দিকে ইশারা করে বললেন, আমি তার জন্য যথেষ্ট। তারপর দেখা গেল হারেস ইবনে আইতালকে। জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তার পেটের দিকে ইশারা করে বললেন, আমি তার জন্য যথেষ্ট। সবশেষে দেখা গেল আস ইবনে ওয়ায়েল সাহমিকে। জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তার পায়ের দিকে ইশারা করে বললেন, আমি তার জন্য যথেষ্ট।
কিছুদিন যেতে না যেতেই আল্লাহ তাআলা তাদের থেকে প্রতিশোধ নিতে শুরু করলেন। তারা ঠিক সেভাবেই ধ্বংস হতে লাগল, যেভাবে জিবরাঈল আলাইহিস সালাম ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
ওয়ালিদ ইবনে মুগিরা একদিন খুজাআ গোত্রের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। ওই গোত্রেরই একজন তার তির-ধনুক ঠিক করছিল। হঠাৎ লোকটির হাত থেকে একটি তির ফসকে গিয়ে ওয়ালিদের আঙুলে লাগল। এতে তার আঙুল কেটে গিয়ে জখম হয়ে গেল। জখমের আঘাতে কিছুদিন সে ছটফট করতে করতে মারা গেল।
আসওয়াদ ইবনে মুত্তালিব একদিন তার সন্তানদের সঙ্গে গাছের নিচে বসে ছিল। হঠাৎ সে অজানা কারণে চিৎকার করে বলতে লাগল, ‘আমার ছেলেরা! আমাকে বাঁচাও! আমি মরে যাব!’ তার ছেলেরা বলল, কী হয়েছে? আমরা তো কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। সে আবারও বলল, ‘আমি মরে যাব! তাকে থামাও! সে আমার চোখে কাঁটা ঢুকিয়ে দিচ্ছে।’
আসওয়াদ এভাবে চিৎকার করে করে আর্তনাদ করছিল আর তার সন্তানরা একই জওয়াব দিচ্ছিল—কই, আমরা তো এখানে কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না। অবশেষে তার চোখ অন্ধ হয়ে গেল। আর এ অবস্থায়ই সে ধুঁকে ধুঁকে মারা গেল।
আসওয়াদ ইবনে আবদে ইয়াগুসের মাথায় হঠাৎ বড় বড় ফোড়া বের হতে শুরু করল। তার সারা মাথাই জখমে ভর্তি হয়ে গেল। এ রোগে আক্রান্ত হয়েই সে মারা গেল।
হারেস ইবনে আইতালের পেট অজানা কারণে হলুদ রঙের পানিতে ভরে গেল। তার পেট ফুলে-ফেঁপে উঠল। পেটের ময়লা তার মুখ দিয়ে বের হতে শুরু করল। এই ভয়ংকর রোগে ভুগে ভুগে সে মারা গেল।
বাকি রইল আস ইবনে ওয়ায়েল। সে একদিন তার গাধায় চড়ে তায়েফে যাচ্ছিল। হঠাৎ তার গাধা এক কাঁটাতারের ঝোপে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। এতে বিরাট একটি কাঁটা তার পায়ে বিঁধে গেল। সে ওই কাঁটার বিষে ছটফট করতে করতে মারা গেল। (আস-সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকি : ৯/৮)
এভাবে এক এক করে সব বেয়াদবই স্বীয় পরিণতি বরণ করে নিল।
আল্লাহ তাআলা সত্য বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই বিদ্রুপকারীদের বিরুদ্ধে তোমার জন্য আমিই যথেষ্ট।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ৯৫) মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মহব্বত হওয়ার তৌফিক দান করুন আল্লাহুম্মা আমিন।
আর কে-১০

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

jashore-fish

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত