মোঃ হাবিব ওসমান ঝিনাইদহঃ প্রভাবশালী সুদে মহাজনদের টাকার ঘানি টানতে না পেরে অনেকে আজ ঘরছাড়া। মাঠের জমাজমিসহ ভিটেবাড়ি হারিয়ে কেউ কেউ সহায় সম্বলহীন। সুদখোরদের অত্যাচারে বেশ কয়েকজন আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। এমন অবস্থা ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামের। গ্রাম্য সুদে মহাজনদের হাত থেকে বাঁচাতে প্রশাসন সম্প্রতি নড়েচড়ে বসেছে। ইতোমধ্যে সমগ্র ঝিনাইদহ জেলার মত এ উপজেলাতেও বেশ কয়েকজন প্রশাসনের খাঁচায় বন্দি হয়েছে। আর অন্যরা রয়েছে আটকের ভয়ে। পুলিশ আসছে এমন খবর কানে পৌছলেই ভোদৌড় দিয়ে পালিয়ে পড়ছে তারা। এদিকে সুদে মহাজনমুক্ত সমাজ গড়তে প্রশাসন এখনও মাঝে মধ্যে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে কোন রকমের অনৈতিকভাবে অর্থ লেনদেনকারীরা কেউ রেহায় পাবেনা। যে কারনে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের সুদে মহাজনেরা রয়েছে মহা এক পুলিশ আতঙ্কে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, চলতি সপ্তাহে অবৈধভাবে এলাকায় সুদে কারবার চালানোর অভিযোগে উপজেলার জামাল ইউনিয়নের বড় তালিয়ান গ্রাম থেকে ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ শরিফুল ইসলাম ও রেজাউল ইসলাম নাামের দুই সহোদরকে আটক করেছে পুলিশ। তারা ওই গ্রামের মৃত আব্দুল বারির ছেলে। আটকের সময় তাদের কাছ থেকে টাকা দেওয়ার স্ট্যাম্প ও সুদে টাকার কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়।
এর আগে সাড়ে ৫ লাখ টাকায়ও পরিশোধ হয়নি সুদে নেওয়া ৮০ হাজার টাকা। উল্টো আরো ৮ লাখ টাকার দাবিতে দুই মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগে কালীগঞ্জের ঈশ^রবা গ্রাম থেকে আলোচিত সুদে কারবারী আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। সুদখোরদের ধরতে এখনও পুলিশী তৎপরতা জোরদার রয়েছে। ফলে সারা উপজেলার সুদে মহাজনদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আটকের ভয়ে তারা গা ঢাকা দিয়েছে।
ভুক্তভোগী ফয়লা গ্রামের শহিদুল ইসলাম জানান,সংসারের অনাটনে পড়ে ঈশরবা গ্রামের আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা নিয়েছিলাম। এ টাকায় মোট সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিয়েছি। এরপরও তার ৮ লাখ টাকা পাওনার দাবিতে সে আমার নামে পরপর দুটি মামলা করেছে। তিনি আরও বলেন, সুদে কারবারিরা টাকা দেওয়ার সময় স্টাম্পে লিখিত করে রাখে। যেখানে স্বাক্ষীরও সহি থাকে। এটাকে পুজি করে আইনী সহযোগীতা নিয়ে থাকে মহাজনেরা। এরপর শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে হলেও ভুক্তভোগীদের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হতে হয়। টাকা লেনদেনের সময়ে লিখিত রেখে এটাকে হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগায়। এ কৌশলটা সব সুদে কারবারিরাই নিয়ে থাকে। লিখিত থাকায় ভুক্তভোগীরা সুদখোরদের শক্ত জালে আটকে যায়। ফলে সারাজীবনেও তাদের টাকা পরিশোধ হয় না।
অপর ভুক্তভোগী উপজেলার কামালহাট হাট গ্রামের কৃষক ইব্রাহিম খলিল জানান,পরিবারের কেউ দীর্ঘমেয়াদি গুরুতর অসুস্থ হলে, বৈরি আবহাওয়ায় ফসলের আবাদ নষ্ট হলে, ছেলেমেয়েদের বিবাহ,লেখাপড়ার খরচ মেটাতে জরুরী টাকা প্রয়োজন হলে জটিল শর্তের হলেও তৎক্ষনিকভাবে অভাবি কৃষক পরিবারে টাকা নিতে বাধ্য হতে হয়। পরে তাদের জালে আটকা পড়ে সহায় সম্বল হারাতে হয়। এভাবে এ উপজেলার সুদে মহাজনদের খপ্পরে পড়ে অসংখ্য পরিবার মহাজনদের নামে শেষ সম্বল ভিটেবাড়ি পর্যন্তও হয় বিক্রি না হয় তার নামে লিখে দিতে হয়। তিনি বলেন, তিনি জামাল ইউনিয়নের বড় ডাউটি গ্রামের মিটুলের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে ১০ গুণেরও বেশি পরিশোধ করেছেন। কিন্ত এখনও মুক্তি পাননি। বিষয়টি নিয়ে তিনি কালীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
কালীগঞ্জ থানার ওসি আব্দুর রহিম মোল্লা জানান,সম্প্রতি সময়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে সুদে কারবারীদের জুলুম নির্যাতনের অভিযোগ আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় ভুক্তভোগি এক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের আটক অব্যাহত রয়েছে। আটকের সময় তাদের কাছ থেকে টাকা ঋণ দেওয়ার বিভিন্ন দলিল উদ্ধার করা হচ্ছে। তিনি বলেন পুলিশ কালীগঞ্জ উপজেলাকে সুদমুক্ত করা চেষ্টা করছে।