Thursday, March 28, 2024

চূড়ান্ত বরখাস্ত মৃণালকে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসানো নিয়ে সমালোচনার ঝড়

- Advertisement -

স্বাক্ষর জালসহ দুর্নীতির দায়ে চূড়ান্ত বরখাস্ত হওয়া যশোর সদর উপজেলার রুদ্রপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৃণাল কান্তি সরকারকে বেআইনিভাবে দায়িত্ব দিয়েছে অ্যাডহক কমিটি। অভিযোগ উঠেছে, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তাকে ফের প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসিয়েছেন। তার আগে তিনি তদন্ত কমিটি গঠন করে ওই মৃণাল কান্তিকে দুধে ধোয়া তুলশি পাতা বানিয়েছেন। যা নিয়ে হতবাক হয়েছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক সহ এলাকাবাসী। যে কিনা নানা দুর্নীতির অভিযোগে জেল খেটেছেন, তার বিরুদ্ধে দুইটি মামলা রয়েছে বিচারাধীন ও দুটিতেই পিবিআই এর তদন্তে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এতকিছুর পরও কিভাবে মৃণাল প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসলেন তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকেরা।
স্কুল সূত্র জানায়, বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক মৃণাল কান্তিকে ফের চেয়ারে বসানোর জন্য পুলেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাজিবকে প্রধান করে মনগড়া তদন্ত কমিটি গঠন করেন বর্তমান অ্যাডহক কমিটির আহবায়ক মোস্তফা ফরিদ আহম্মেদ চৌধুরী। কিন্তু অ্যাডহক কমিটির এ কমিটি করার কোনো এখতিয়ারই নেই। তার দায়িত্ব শুধুই নির্বাচনের কাজে সহযোগিতা করা ।
ওই তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বেসরকারী শিক্ষক ও কর্মচারী চাকরি বিধান মালা অনুযায়ী কারোর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চললে সে মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিভাগীয় কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। ফলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা থেকে অব্যহতির সুপারিশ করে ওই তদন্ত কমিটি। যা মোটা অংকের টাকা লেনদেনের মাধ্যমে অনুমোদন দেয় বর্তমান অ্যাডহক কমিটি।
মৃণাল কান্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক প্রতিনিধির স্বাক্ষর জাল করে অবৈধভাবে দু’জন শিক্ষক নিয়োগ দেন বরখাস্ত মৃনাল কান্তি সরকার। যা কৌশলে ধামাচাপাও দেয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট হয়। এরপর নড়েচড়ে বসে ম্যানেজিং কমিটি। বেরিয়ে আসে মৃনাল কান্তির থলের বিড়াল।স্কুল কর্তৃপক্ষ আদালতে এ বিষয়ে দু’টি মামলা করে। তদন্তে নামে পিবিআই। মৃনাল কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তখন তিনি আরেক প্রতারণার আশ্রয় নেন। দ্রæতস্কুলে যোগদানের জন্য তিনি দুদকের প্রধান কার্যালয়ের দু’টি ভুয়া চিঠি সংগ্রহ করে হাইকোর্টে রিট মামলা করে তার পক্ষে আদেশ এনে বিদ্যালয়ে যোগদানের চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয় তার। বিষয়টি জানাজানি হলে যশোর শিক্ষাবোর্ডের আপিল এন্ড আর্বিটেশন কমিটির সভায় গত বছরের ২০ জুন যশোর বোর্ডের তৎকালীন বিদ্যালয় পরিদর্শক ডক্টর বিশ্বাস শাহিন আহম্মেদ স্বাক্ষরিত এক আদেশে মৃণাল কান্তিকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করা হয়।
এরপর গত ২৮ নভেম্বর যশোর বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম চার সদস্য বিশিষ্ট এডহক কমিটি গঠন করে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার জন্য বলা হয়। ওই কমিটি নির্বাচন না দিয়ে মৃনাল কান্তিকে পুনর্বহালের চেষ্টায় চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে মৃণালকে ফের প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসায়।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রবিউল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন না। এমনকি এ বিষয়ে তিনি কথা বলতেও অনিচ্ছা প্রকাশ করেন করেন। একই সাথে আহবায়কের সাথে কথা বলার আহবান জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রুদ্রপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি ও যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, তারা আইনের মধ্যে থেকেই মৃণালকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন। তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতেই শুধু নয়, জিপি সাহেবের কাছথেকে আইনীকোনো জটিলতার বিষয়টি নিশ্চিত করেই মৃণালকে পুনরায় ক্ষমতায় বসানো হয়েছে বলে দাবি করেন.মি. ফরিদ। একই সাথে এসব বিষয়ে না লেখার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
এ বিষয়ে রুদ্রপুরের সন্তান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্কক বোর্ডের সাবেক সচিব এবং বাংলাদেশ স্কাউটস এর সাবেক জাতীয় কমিশনার বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর আতিয়ার রহমান বলেন, তদন্ত কমিটি যে যুক্তি দেখাচ্ছে সেটা মানা যেতো যদি আগে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা হত। যেহেতু আগে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে পরে মামলা হয়েছে সেক্ষেত্রে নিয়ম রয়েছে ওই মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত তিনি স্বপদে বহাল হতে পারবেন না। তিনি আরও বলেন, কারও বিরুদ্ধে যদি দূর্নীতি মামলায় চার্জশিট হয়। তাহলে তিনি যদি জামিনে থাকলেও তাহলে তিনি চাকরিতে যোগদান করতে পারবেন না। এছাড়া মৃণাল জেলও খেটেছেন। অর্থাৎ তাকে স্বপদে বহালের কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া তিনি দুদকের চিঠি জাল করে হাইকোর্টে প্লেস করেন। সেটাও তিনি ধরা পরেন। তিনি আরও বলেন, আইন রয়েছে যদি কারও বিষয়ে তদন্ত করতে হয় তবে তদন্ত করবে ওই ব্যক্তির সমান মর্যাদার অফিসার। কিন্তু মৃণাল কান্তির তদন্তে যারা ছিলেন তারা সবাই মৃণালের ছোট পোস্টের চাকরিজীবি। কোনো ভাবেই মৃণালের স্বপদে বহালের সুযোগ নেই বলে জানান মি.আতিয়ার রহমান।
এ বিষয়ে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে কমিটি গঠন করার জন্য এডহক কমিটি করা হয়েছে। এরবাইরে কোনো কাজই করতে পারবেন না। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়টি তারা সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। পরে তাৎক্ষনিক চেয়ারম্যান স্যারের নেতৃত্বে সভা করেছেন। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে কেউই লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ দিলে জেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

- Advertisement -

রিকি খান

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

jashore-fish

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত