কবিতার নাম ৫২’এর স্মৃতিকথা ৫২’এর দিনগুলোর কথা মনে পড়ে, ওই যে সেদিন! হাঠাৎ ঘুম থেকে উঠে আমার মানিক রতন আমায় বলেছিলো মা! তুমি কি চাও না! আমরা আমাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলি! তুমি কি চাও না! বাংলার প্রতিটি ঘরে, মাতৃভাষা চর্চা হোক! তাহলে কেনো মা তুমি বাঁধ সাধছ? আমিও যেতে চাই, ওদের দলে, আমিও যেতে চাই মাতৃভাষা ছিনিয়ে আনতে। তুমি শুধু আর্শীবাদ করো মা, আমরা যেনো পারি, ছিনিয়ে আনতে আমাদের মাতৃভাষা। তুমি চিন্তা করো না মা, আমি তোমার বুকে আবার ফিরে আসবো, এই বলে ঘরের দুয়ার থেকে পা বাড়ালো, ওটাই আমাদের শেষ দেখা। চারিদিকে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে, কত রং,কত মিছিল, ঘরে ঘরে আনন্দ, আমরা পেরেছি, আমরা পেয়েছি। সবার মুখের হাসি যেনো ঐ দূর আকাশে চাঁদের মতো চকচক করছে। কিন্তু তবুও আমার মন ভালো নেই, অপেক্ষার প্রহর গুনছি, কখন আসবে! আমার মানিক রতন, কখন বুকে এসে জড়িয়ে ধরে বলবে, দেখো মা আমি ফিরে এসেছি। অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো, আমার মানিক রতন এসে গেছি, কিন্তু সেই দীপ্ত কন্ঠে আমাকে তো মা বলে ডাকলো না। উঠনে দাঁড়াতেই দেখলাম, ধবধবে সাদা চাদরে মুড়ে, আমার মানিকে ওরা এনেছে। দর্শীপনা করছে না, কি সুন্দর চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। হঠাৎ কে যেনো ওর চশমাটা আমায় দিলো, হাতে নিয়ে দেখলাম তখনো রক্তের দাগ শুকাইনি। বুঝলাম, আমার মানিক চিরদিনের মতো ঘুমিয়ে গেছে। প্রচন্ড যন্ত্রণা শুরু হতে থাকলো বুকে, কাউকে কিছু বলতে পারছিনা, সন্তান হারানোর যন্ত্রণা সে যে কত বড় যন্ত্রণা বোঝাতে পারছিনা। সবাই বলছে! আমার মানিক নাকি শহীদ হয়েছে। আমি নাকি ভাগ্যবতী মা! হা আমি ভাগ্যবতী মা, একটি দেশ,একটি জাতিকে তাদের মায়ের ভাষা, মাতৃভাষা ছিনিয়ে আনতে আমার মানিক রতন তার জীবন দিয়েছে। সারা পৃথিবীর বুকে কি সমাদর, কিন্তু আমি! তবুও সন্তান হারানোর যন্ত্রণা ভুলতে পারি না। ছিনিয়ে আনলো মাতৃভাষা, ছিনিয়ে আনলো স্বাধীনতা। কিন্তু আমার মানিক আর ঘরে ফিরলো না….
লেখক:জেসিনা মুর্শীদ প্রাপ্তি