যশোরের চৌগাছায় জন্মের পর থেকে মানবেতর জীবন পার করছে শারীরিক প্রতিবন্ধী মেহেদী হাসান (২৪)। বাক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ উপজেলার আন্দারকোটা গ্রামের মোল্লাপাড়ার নিছার আলীর ছেলে মেহেদীর দিনপর হয় ঘরের বারান্দায় শুয়ে। উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টায় আঘাত পেয়ে মাথায় একাধিক ক্ষতেরও সৃষ্টি হয়েছে। নিজের দারিদ্রের কথা বলে কান্না জড়িত কন্ঠে একটা হুইলচেয়ারের আকুতি করেন মেহেদীর মা বেগমজান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দাদার রেখে যাওয়া ৩ শতক জমিতে ছোট একটা ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করেন মেহেদী ও তার মা-বাবা। মাঠে কোনো জমি না থাকায় অন্যের জমিতে জন হিসেবে কাজ করেন মেহেদীর বাবা। মাঠে প্রতিদিন কাজ না পাওয়ায় বন্য শাঁক ও বাড়ির পাশের মাঠে হওয়া তরকারী রান্না করেন মেহেদীর মা। মাসে একদিন মাছ কিনতে হাট-বাজারে যায় মেহেদীর বাবা। আরোও জানা যায়, জন্মের পর মেহেদীকে স্বাভাবিক মনে হলেও পরবর্তীতে শারীরিকভাবে অসুস্থ বুঝতে পারেন মা-বাবা। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে সব কিছু বুঝে উঠার পরও চিকিৎসা করাতে পারেন না তারা। বাক ও শারীরিক অসুস্থ হওয়ার কারণে খাওয়া দাওয়া ও প্রকৃতির ডাকেও কিছু করতে পারেন না মেহেদী। উঠে দাড়ানোর চেষ্টায় বৃথা হয়ে পড়ে গিয়ে অনেক ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে মাথা ও শরীরে। হাঁটতে ও স্বাভাবিক ভাবে বসতে না পারায় মেহেদীর দিনের সময় কাটে বারান্দাতে শুয়ে।
মেহেদীর মা বেগমজান বলেন, আমাদের ছেলে তামিম জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। আল্লাহ যা দিয়েছে তাই মেনে ওকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি। আমার ছেলে অনেক বড় হয়েছে কিন্তু এখনও তার খাওয়া থেকে শুরু করে সব কিছু আমার করতে হয়। আমাকে ছাড়া সে চলাফেরা করতে পারে না। আমি একটু বাইরের কাজে বা রান্না করতে গেলে একা হাঁটতে গিয়ে সে বেশ কয়েকবার মাথায় ফাটিয়ে ফেলেছে। আমরা গরিব মানুষ, দুই বেলা খেতে পাই না। হুইল চেয়ার কেনার সামর্থ্য আমাদের নাই। যদি একটা হুইল চেয়ার হলে ছেলেটা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারত। সমাজের কোনো হৃদয়বান মানুষ যদি আমার সন্তানের জন্য একটি হুইল চেয়ার কিনে দিতো তাহলে সারা জীবন তার কাছে আমরা কৃতঙ্গ থাকতাম।
এবিষয়ে স্বরুপদাহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল কদর বলেন, ছেলেটির বিষয় আমি জানি। আমি হুইল চেয়ারের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা করবো।
সহযোগীতার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, যতটা দ্রæত সম্ভব আমি হুইলচেয়ারের ব্যবস্থাসহ আর্থিক সহযোগীতার চেষ্টা করবো।
রাতদিন সংবাদ