Thursday, March 28, 2024

ইস্তাম্বুলে বোমা বিস্ফোরণ: হামলাকারীসহ গ্রেপ্তার ৪৬

- Advertisement -

তুরস্কের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শহর ইস্তাম্বুলের ইস্তিকলাল অ্যাভিনিউ এলাকায় শনিবার যে বিস্ফোরণ ঘটেছিল, সেটি একটি পরিকল্পিত বোমা হামলা ছিল বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিচারবিভাগ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয় ও আইশৃঙ্খলা বাহিনী।

- Advertisement -

সন্দেহভাজন হামলাকারীসহ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ইতোমধ্যে ৪৬ জনকে গ্রেপ্তারও করেছে তুরস্ক পুলিশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেমান সয়লু এ হামলার জন্য তুরস্কের নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) ও এই দলের অঙ্গসংগঠন সিরিয়াভিত্তিক কুর্দি সশস্ত্রগোষ্ঠী ওয়াইপিজি মিলিশিয়াকে দায়ী করেছেন।

তুরস্কের বিচারবিভাগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বেকির বোজদাগ দেশটির সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, হামলাকারী ছিলেন একজন নারী। ইস্তিকলাল অ্যাভিনিউয়ের যে এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটেছে, তার আগে সেখানকার একটি বেঞ্চে ওই নারী ৪০ মিনিটেরও বেশি সময় বসেছিলেন। তারপর তিনি বেঞ্চ থেকে উঠে সরে পড়েন এবং তার কয়েক মিনিটের মধ্যে বেঞ্চের তলায় থাকা বোমাটি বিস্ফোরিত হয়।

‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ওই এলাকার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। সেখানে দেখা গেছে পার্পল রঙের সোয়েটার পরা কোঁকড়া চুলের ওই মহিলা বেঞ্চটিতে বসেছিলেন। তিনি বেঞ্চটি থেকে ওঠার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেখানে বিস্ফোরণ ঘটে।’

ইস্তাম্বুলের ইস্তিকলাল অ্যাভিনিউ মূলত পথচারীদের চলাচলের সড়ক। প্রতিদিন প্রচুর মানুষ এই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। বিদেশি পর্যটকদের কাছেও বেশ জনপ্রিয় এই সড়কটি। সড়কের দুই ধারে সারি সারি রেস্তোরাঁ ও দোকানপাট রয়েছে।

রোববার স্থানীয় সময় বিকেল ৪ টা ২০ মিনিটে ব্যস্ত সেই সড়কটিতে আকস্মিক বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৬ জন, আহত হন আরও ৮১ জন। আহতদের মধ্যে কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

 

সোমবার তুরস্কের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে সন্দেহভাজন ওই নারীসহ অন্যান্য অভিযুক্তদের থানায় নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। তবে তাদের সবার চেহারা অস্পষ্ট (ব্লার) করে দেওয়া হয়েছিল। সন্দেহভাজন ওই হামলাকারী ও গ্রেপ্তার অন্যান্যদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

রাজধানী আঙ্কারায় এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোলেইমান সয়লু বলেন, ‘প্রাথমিক অনুসন্ধানে আমরা জানতে পেরেছি, হামলাকারী ওই নারী পিকেকের একজন সক্রিয় সদস্য। কোবানি (সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তবর্তী শহর) থেকে তাকে পাঠানো হয়েছিল এবং হামলার পর ইস্তাম্বুল ত্যাগ করে আফরিনের (উত্তর সিরিয়ার একটি শহর) উদ্দেশে রওনা হতে বলা হয়েছিল।’

‘তুরস্ক ত্যাগ করার আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।’

ইরান, ইরাক, সিরিয়া ও তুরস্কজুড়ে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির সংগঠন বিস্তৃত। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ এই দলটির সিরীয় শাখার দুই গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি এলাকা কোবানি ও আফরিন।

সংবাদ সম্মেলনে সয়লু আরও জানান, হামলার উদ্দেশ্যে কয়েকদিন আগে ইস্তাম্বুল আসার পর শহরে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়েছিলেন ওই নারী। সেখানে তল্লাশি চালানোর পর স্বর্ণ, অর্থ ও গোলাবারুদ পাওয়া গেছে।

স্বাধীন কুর্দিস্তানের দাবিতে আন্দোলনরত পিকেকে এবং তার অঙ্গসংগঠন ওয়াইপিজে মিলিশিয়ার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ থাকায় পিকেকে কে নিষিদ্ধ করেছে তুরস্কের সরকার। ২০১৫ সালের আগ পর্যন্ত পিকেকের সঙ্গে আঙ্কারার শান্তিচুক্তি ছিল; কিন্তু ওই বছরের মাঝামাঝি সময়ে তা ভেঙে যায়।

২০১৬ সালে ইস্তাম্বুলের ফুটবল স্টেডিয়ামে প্রকাণ্ড এক বোমা হামলা করেছিল পিকেকে। সেই হামলায় ৩৮ জন নিহত ও ১৫৫ জন আহত হয়েছিলেন। তারপর ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর শহরের একটি নৈশক্লাবে ইংরেজী বর্ষবরণ উৎসবে বড় আকারের বন্দুক হামলাও চালিয়েছিল পিকেকে।

শনিবারের হামলার দায় অবশ্য এখনও পিকেকে বা ওয়াইপিজে মিলিশিয়া স্বীকার করেনি।

রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, আগামী ২০২৩ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে অস্থিরতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই এই হামলা চলানো হয়েছে। নির্বাচনের আগে তুরস্কের বিভিন্ন ছোট-বড় শহরে আরও হামলা হতে পারে বলে শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তারা।

অনলাইন ডেস্ক/আর কে-০৬

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

jashore-fish

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত