Thursday, April 18, 2024

সংসার বিরাগী এখন কোটিপতি ফলচাষি: দেড় কোটি টাকার মাল্টা ও ড্রাগন বিক্রির আশা

- Advertisement -

মোঃ হাবিব ওসমান, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ কাজের প্রতি আন্তরিকতা থাকলে যে কোন কাজে সফলতা পাওয়া যায় তা দেখিয়ে দিয়েছেন আক্তারুজ্জামান নামে এক সফল ফলচাষি। ফল চাষ শুরু করার মাত্র ৬/৭ বছরে পেয়েছেন অভাবনীয় সফলতা। পরিচিত ফসল চাষের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে নতুন নতুন ফলের চাষ করে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন। তার চাষ পদ্ধতি আর সফলতার ফলে এলাকার কৃষকদের মাঝে হয়ে উঠেছেন আদর্শ এক অনুকরনীয়। বর্তমানে তার ৫০ বিঘা জমিতে উন্নত জাতের ড্রাগন, মাল্টা, ছাতকি কমলা চাষ রয়েছে। গতবার প্রায় কোটি টাকার ফল বিক্রি করেছেন। এবারও তিনি প্রায় দেড় কোটি টাকার ড্রাগন,মাল্টা বিক্রি করবেন। সফল এই ফল চাষী আক্তারুজ্জামান ঝিনাইদহের ভারতীয় সীমান্তবর্তি মহেশপুর উপজেলার বাথানগাছি গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছোট ছেলে।

- Advertisement -

কথা হয় সফল ফলচাষি আক্তারুজ্জামানের সাথে। লেখাপড়া ছেড়ে বাড়িতে চলে আসার পর পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের নানা ছন্দ পতনের মধ্যে দিয়ে দিনগুলো অতিবাাহিত হচ্ছিল। অর্থ সংকটে সমাজ জীবনের তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে অর্থ সংকটের মখোমুখি হচ্ছিল প্রতিটি দিন। এমন সময় অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠার প্রত্যয়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সফল উদ্যোক্তার গল্প শুনে অনুপ্রাণিত হয়। এরপর যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহন করি। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর আত্মবিশ^াসর বেড়ে যায়। ২০১০ সালের কথা, যুব উন্নয়ন থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিই। এরপর উপজেলা যুব ও মৎস্য কর্মকর্তাদের পরামর্শে পরিবার থেকে প্রাপ্ত কিছু আরো অর্থ যোগ করে আক্তারুজ্জামান এগ্রো ফার্ম নামে একটি কৃষি ফার্ম গড়ে তুলি। প্রথম দিকে ১৫ বিঘা জমিতে পেপে ও কলা দিয়ে শুরু করি। এর সাথে ১২ বিঘা জমিতে কুলচাষ করি। চাষের শুরু থেকে আশাতিত সফলতা আসতে থাকে। ২০১৬ সালে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার সহযোগীতায় পেয়ারার বীজ সংগ্রহ করে চারা তৈরি করি। সেই চারা ৫০ বিঘা জমিতে রোপন করা হয়। এসব জমি অর্ধেকের বেশি বর্গা নেওয়া। একই বছর পেয়ার সাথে ২০ বিঘা জমিতে সমন্বিত পদ্ধিতে মাল্টা এবং ১০ বিঘা জমিতে ছাতকি কমলার চারা রোপন করা হয়। পরের বছর বাকি ২০ বিঘা জমিতে পেয়ারার সাথে ড্রাগনের চারা রোপন করি। চলতি বছর ওই জমি থেকে ২৫ থেকে লাখ টাকার লেবু বিক্রি করেছি। এছাড়া ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ড্রাগন বিক্রি করবেন বলে আশা করছি। বাগান রক্ষনাবেক্ষণ খরচ বাদ দিয়ে বছরে ৭০ থেকে ৮০ লাখ লাভ হচ্ছে বলে যোগ করেন এই সফল ফলচাষি।

তার বিশাল এরয়িায় গড়ে তোলা দৃষ্টিনন্দন এই বাগান দেখতে এখন প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন কৃষি কর্মকর্তাসহ উদ্যোক্তারা তার বাগান পদির্শন করছেন। যেখানে নিয়মিত প্রায় ২৫ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

তিনি জানান, ড্রাগন একটি বহুবর্ষজিবী টেকসই ফল। খুটি পদ্ধতিতে একটি খুটিতে চারটি চারা রোপণ করতে হয়। রোপনের পর ফল আসতে সময় লাগে মোটামুটি ১৮ মাস। ফল আসা পর্যন্ত খুটি প্রতি খরচ পড়ে গড়ে এক হাজার টাকা। একটি খুটিতে এক বছরে গড়ে পঁচিশ থেকে তিরিশ কেজি ফল উৎপাদিত হয়। ড্রাগন ফলের মৌসুম শুরু হয় এপ্রিল মাস হতে আর একটানা নভেম্বর মাস পর্যন্ত। এসময়ে কয়েক দফায় ফল আসে। ফুল আসার ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মাথায় ড্রাগন তোলা যায়। ড্রাগন গাছে মূলত জৈব সার এবং সাথে সুষম মাত্রায় রাসায়নিক সার এবং পিপড়া দমনে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়।

ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট আক্তারুজ্জামান। বড় ভাই নুরুজ্জামান রাজশাহী বিশ^দ্যিালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে লেখাপড়া শেষ করে বর্তমানে একটি বেসরকারী সার্ভে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, মেজো ভাই আলফাজ্জামান রাজধানীর সমরিতা মেডিকেল এন্ড হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক, দুই ভাই কলেজ শিক্ষক এবং এক ভাই বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের ডেপুটি চীফ ইঞ্জিনিয়ার। এছাড়া তিন বোনের সবাই উচ্চ শিক্ষিত। শুধু লেখা পড়া করা হয়নি আক্তারুজ্জামানের। ১৯৯৩ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিলেও সংসার বিরাগী হওয়ায় কোন রকমে তৃতীয় বিভাগে পাশ করেন। এরপর ভায়েরা জোর করে ঢাকাতে নিয়ে একটি স্কুলের নবম শ্রেণিতে ভর্তি করে দেন। সেখানেও ভালো না লাগায় পালিয়ে ভারতে গিয়ে কোন পীরের দরবারে গিয়ে আউলিয়াদের সাথে ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হন কিন্তু বিজিবি’র হাতে আটক হয়ে বাড়ি ফেরত আসেন। ফলে ধর্ম প্রচার আর লেখাপড়া কোনটাই আর হয়ে উঠেনি তার।

মহেশপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ হাসান আলী জানান, আক্তারুজ্জামানের ফল চাষ পদ্ধতি প্রসংসার দাবি রাখে। তার ফলচাষ একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অন্যদিকে অনেক বেকার দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সার্বক্ষনিক সহযোগীতা করি। বিশেষ করে ফল চাষের রোগ বালাই দমনে তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কৃষি অফিসের একজন উপ-সহকারী কর্মকর্তা প্রতিদিনই তার বাগান পরিদর্শন করে। তিনি আরো বলেন, বিদেশি ফল ড্রাগন ও মাল্টা লাভজনক হওয়ায় অনেকে এখন তার কাছ থেকে চারা নিয়ে রোপন করছে। ক্যাকটাস গোত্রের ফল ড্রাগন দেখতেও খুব আকর্ষনীয়। এর স্বাদ হালকা মিষ্টি। ড্রাগন ফলে ক্যালোরি খুব কম থাকায় এ ফল ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য ভালো। এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি ও আয়রন রয়েছে। যে কারনে শরীরের চর্বি কমায় ও রক্তের কোলেস্টেরল কমানোসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে।

আর কে-১৭

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

jashore-fish

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত