আশরাফুল ইসলাম (ছন্দনাম)। বর্তমানে আটক রয়েছেন যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে। এরআগেও তিনি একাধিকবার কারা বরণ করেছেন কিন্তু কারাগার থেকে বের হয়ে চালিয়েছেন ফের মাদক কারবার। এছাড়া অনেকেই রয়েছেন যারা বন্ধু কিংবা সঙ্গদোষে মাদকের সাথে মিশে গেছেন। বৃহস্পতিবার কারাগারে আটক সকল মাদক মামলার আসামিদের নতুন জীবন ফিরিয়ে আনতে মাদক মামলার আসামিদের নিয়ে মাদক বিরোধী কাউন্সিলের আয়োজন করে যশোরের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও কারাকর্তৃপক্ষ ।
এসময় আসামিদের উদ্দেশ্যে মাদকের ভয়ভয়তা সম্পর্কে তুলে ধরেন বক্তারা। তাদের বক্তব্যে অনুপ্রানিত হয়ে এক পর্যায় আসামিরা মাদককে না বলার শপথ গ্রহন করেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের মনিহারের (একটি ওয়ার্ড) নিচতলায় শতশত বন্দি বসে আছেন যারা মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকায় কারাগারে আটক রয়েছেন। ১০ টা ৪০ মিনিটে কারাগারের ভেতরে হাজির হন অতিথিরা। ১০ টা ৪৫ মিনিটে স্বাগত বক্তব্য দেন যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার ফোরকান ওয়াহিদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনি মাদকের ভয়ভয়তা ও পরিণতি তুলে ধরেন।
এরপর বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের যশোরের উপ পরিচালক হুমায়ুন কবির খন্দকার।
তিনি বলেন, মাদক সেবিরা দিন দিন শীর্ণকায় হয়ে যায়, নানা রোগে ভুগে শারীরিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কিডনি, লিভার, হার্ট বিনষ্ট হয়ে নিঃশেষ হয়ে যায় তারুণ্য জীবনের মাঝপথেই। কেউ কেউ মাদকের টাকা জোগাড় করতে ভাইকে, মাকে, স্ত্রীকে, বাবাকে পর্যন্ত খুন করে । পরিবার হয়ে যায় ছিন্ন বিছন্ন। তিনি আসামিদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা চিরকাল কারাগারে আটক থাকবেন না। জেল খানায় যেমন মাদক ছাড়া থাকতে পারছেন তেমনি বাইরে বের হলেও মাদক ছাড়া আপনারা থাকতে পারবেন এই বিশ্বাস মনে তৈরী করুন। এজন্য দরকার সুন্দর মানসিকতা। কারাগারে থেকেই ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করার আহবান জানান মি. হুমায়ুন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবীর চৌধুরী বন্দীদের সাথে এ বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। মাদক সম্পর্কে আসামিদের অভিমত প্রকাশের সুযোগ দেন। আসামিদের অনেকেই তাদের মাদকের সাথে জড়ানোর পুরোনো ইতিহাস তুলে ধরেন। শেষমেষ উপস্থিত প্রায় তিনশতাধিক বন্দি হাত তুলে মাদককে না বলার শপথ গ্রহন করেন। এসময় উপস্থিত অতিথিরা তাদের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপনি টানেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মাদকের প্রসিকিউটর রাসেল আহম্মেদ, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সহকারী ডাক্তার আজাদ মিয়া, গ্রামের কাগজের স্টাফ রিপোর্টার ও রাতদিন নিউজের সম্পাদক মন্ডলির সদস্য শিমুল ভুইয়া প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ডেপুটি জেলার তৌহিদুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, বর্তমানে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে মাদক মামলার আসামি রয়েছেন ৩৯০ জন।