Thursday, March 28, 2024

নড়াইল সদর হাসপাতালে সর্প বিষ প্রতিষেধক ‘সিরাম’ নেই: দংশিতরা আশ্রয় নিচ্ছেন ঝাড়-ফুঁকের

- Advertisement -

সৈয়দ নাইমুর রহমান ফিরোজ, নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইল সদর হাসপাতালে জীবন রক্ষাকারী সর্প বিষ প্রতিষেধক সিরাম নেই। গত দু’সপ্তাহ যাবত এ ওষুধের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে ২১ জুলাই ২শ এ্যাম্পুল সিরাম আনা হলেও তার মেয়াদ ছিল মাত্র ৪০দিন। ২০১৩ সাল থেকে সদর হাসপাতালে সরকারিভাবে এ প্রতিষেধক দেওয়া চালু হলেও ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৮শ ২০পিচ এ প্রতিষেধক সিরামের একটিও ব্যবহার হয়নি।

- Advertisement -

এ বিষয়ে নড়াইল সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট তথ্য জানতে চাইলে সর্বশেষ গত ৫বছরে নড়াইল সদর হাসপাতালে কত এ্যাম্পুল সিরাম এসেছে এবং কতটি ব্যবহৃত হয়েছে সে তথ্য দিতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত আগস্ট মাসে এক কিশোরকে নড়াইল সদর হাসপাতালে সর্প বিষ প্রতিষেধক সিরাম দেওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে তার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ফলে এ প্রতিষেধক সাপে কাটা রোগীর জন্য কতোটা কাজে আসছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মানুষ এখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গ্রাম্য ওঝা-কবিরাজদের দ্বারস্থ হয়ে ঝাড়-ফুঁকু এর আশ্রয় নিচ্ছেন। বিষধর সাপে কাটলে রোগির অবস্থা বুঝে ৫টি থেকে ১০টি সর্প বিষ প্রতিষেধক সিরাম দিলে সুস্থ হয়ে ওঠে রোগী।

সম্প্রতি নড়াইলে সাপের উপদ্রব বেড়েছে। প্রায়ই ঘটছে সর্প দংশনের ঘটনা। গত আড়াই মাসে নড়াইলে এক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীসহ ৩জনের মৃত্যু এবং অনেককে সর্প দংশনের খবর পাওয়া গেছে।

নড়াইল শহর সংলগ্ন সদরের আউড়িয়া ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের কুরবান আলী জানান, ১৫ আগস্ট ছেলে আশিক (১৪) রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে তাকে সাপে কাটে। রাত ১১টার দিকে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক-নার্স প্রথমে স্যালাইন ও পরে ইনজেকশান দেবার ১০মিনিটের মাথায় সে নিস্তেজ হয়ে পড়লে খুলনা নিয়ে যেতে বলেন। পরে মাইক্রোবাসে রওয়ানার ১ মিনিটের মধ্যেই ছেলের মুত্যু ঘটে।

একই ইউনিয়নের খলিশাখালী গ্রামের হেনা বেগম জানান, ৩১ আগস্ট প্রকৌশলী (ডিপ্লোমা) ছেলে মামুন রহমানকে বাড়িতে রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় সাপে দংশন করলে রাত ২টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে খুলনায় নেওয়ার পথে ছেলের মৃত্যু ঘটে। সদর হাসপাতালে নিয়েছিলেন কিনা এ প্রশ্নে তিনি ও মামুনের স্ত্রী বলেন, কেউ বলেছেন নড়াইল সদর হাসপাতালে ভ্যাকসিন নেই আবার কেউ বলেছেন থাকলেও মেয়াদোত্তীর্ণ। সে কারণে তাকে খুলনায় নিয়েছিলাম।

গত ২ জুলাই কালিয়ার কলাবাড়িয়া গ্রামের হিংগুল শেখের স্ত্রী জরিনা বেগমের (৪০) সর্প দংশনে মৃত্যু হয়।
আউড়িয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বর আনোয়ারা বেগম বলেন, কমলাপুর, খলিশাখালীসহ কয়েকটি গ্রামে গত এক মাসে কমপক্ষে ১০জনকে সাপে দংশন করেছে। পরিবারের লোকজন রোগিদের হাসপাতালে না নিয়ে গ্রাম্য ওঝাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। নড়াইল পৌরসভার বাহিরডাঙ্গা এলাকার কৃষক দিপক বিশ্বাস জানান, তাদের গ্রামে গত ১মাসে ৬জনকে বিষধর গোখরা সাপে দংশন করেছে। এদের সবাই ওঝার কাছে গিয়ে ঝাঁড়-ফুক-এর আশ্রয় নিয়েছে।

নড়াইলের উজিরপুর অর্গানিক বহুমখি সমবায় সমিতির সাধারন সম্পাদক সায়েদ আলী শান্ত বলেন, ইকো সিষ্টেমের অংশ হিসেবে সাপ বিল-মাঠে বসবাসের কারণে ফসলের ওপর ঈদুরের আক্রমন কম হয়। ফলে কৃষক বেশী ফসল ঘরে তোলে। নড়াইল সাপ প্রবন এলাকা। চৈত্র-বৈশাখ ও বর্ষা মৌসুমে বেশী সর্প দংশনের ঘটনা বেশী ঘটে। প্রশিক্ষিত চিকিৎসক দিয়ে সাপে কাটা রোগির চিকিৎসা করালে একজন রোগিও মারা যেতনা।

নড়াইল সদর হাসপাতালের স্টোরকিপার(ভারপ্রাপ্ত) আলফাজ উদ্দিন বলেন, স্টোরকিপার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর ৫শ পিচ সর্প বিষ প্রতিষেধক সিরাম আনা হয়। এরপর গত ২১জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসি বিভাগ থেকে ২শ সিরাম পাওয়া যায়, যার মেয়াদ ছিল গত ৩১আগস্ট পর্যন্ত। স্বল্প মেয়াদের এ সিরাম আনতে অপারগতা প্রকাশ করলেও না এনে উপায় ছিলনা। সদর হাসপাতালের মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ডে ১শ পিচ দিয়ে বাকি সিরাম স্টোরে রেখে দেওয়া হয়। ৬ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আরও ১শ পিচ সিরাম বরাদ্দ পেলেও হাতে পাইনি। আগামি ২৫ সেপ্টেম্বর দেওয়া হবে। হাসপাতালে গত ৫ বছরে কত পিচ সিরাম এসেছে এবং কত পিচ ব্যবহার হয়েছে এ প্রশ্নে বলেন, এ তথ্য আমার জানা নেই।
এদিকে দুদিন সদর হাসপাতালর আরএমও ডা. সুজল কুমার বকশি এবং তত্বাবধায়ক ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল-এর সাথে হাসপাতালে এ বিষয়ের ওপর তথ্য জানার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাদের অফিসিয়াল প্রোগ্রাম থাকায় তাদের সাথে দেখা করার সুযোগ হয়নি। পরে আরএমওকে ফোন দিলে তিনি তত্বাবধায়ক-এর সাথে কথা বলতে বলেন। এ পসঙ্গে সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ককে ফোন করলে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর ১শ সর্প বিষ প্রতিষেধক সিরাম পাওয়া যাবে। তিনি গত আগস্ট সাপে কাটা এক রোগিকে সর্প বিষ প্রতিষেধক প্রয়োগের ১০ মিনিটের মধ্যে মারা যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বিরক্ত হয়ে বলেন, “বিভিন্ন কারণে মারা যেতে পারে। আমি কিভাবে বলেবো কিভাবে সে মারা গেছে”? গত এক বছরে হাসপাতালে কতো পিচ সিরাম ব্যবহার হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি স্টোরকিপারের সাথে কথা বলতে বলেন। স্টোরকিপার বিষয়টি জানেন না জানালে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন “আমি কি মুখস্ত করে বসে আছি” ?

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

jashore-fish

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত