Friday, April 19, 2024

নড়াইলে শিল্পী সুলতানের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী পালিত

- Advertisement -

সৈয়দ নাইমুর রহমান ফিরোজ, নড়াইল প্রতিনিধি: বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী বুধবার (১০ আগস্ট) যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে। ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়ায় বাবা মেছের আলী ও মা মাজু বিবির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন এসএম সুলতান।

- Advertisement -

শিল্পীর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নড়াইলের জেলা প্রশাসন ও এস এম সুলতান ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এস এম সুলতান কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে যেসব কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছিল তার মধ্যে ছিল শিল্পীর রুহের মাগফেরাত কামনা করে সকাল ৬টায় পবিত্র কোরান খতম, সকাল সাড়ে ৭টায় চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা, সকাল ৯টায় বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংষ্কৃতিক সংগঠনের অংশগ্রহনে শিল্পীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শিল্পীর রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল এবং সবশেষে সকাল সাড়ে ৯টায় শিল্পী এস এম সুলতান আর্ট ক্যাম্প উদ্বোধন ও পুরস্কার বিতরন। এসব কর্মসূচী নড়াইল এস এম সুলতান কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নড়াইলের জেলা প্রশাসক মো: হাবিবুর রহমান সকাল ৯টায় শিল্পীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর নড়াইল পৌরসভার মেয়র আন্জুমানারা, নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রিয়াজুল ইসলামও অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর নড়াইল প্রেসক্লাব, নড়াইল শিল্পকলা একাডেমী, মূর্ছনা সংগীত নিকেতন, এস এম সুলতান বেঙ্গল চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়, লাল বাউল সম্প্রদায়, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গ্রেভ শিল্পী গোষ্ঠীসহ সরকারি-বে-সরকারিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শিল্পীর সমাধিতে পুস্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
পুস্পমাল্য অর্পণ অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফকরুল হাসান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মলয় কুমার কুন্ডু, নড়াইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শামিমুল ইসলাম টুলু, এস এম সুলতান বেঙ্গল চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ অনাদি বালা বৈরাগী, এস,এম,সুলতান শিশু চারু ও কারুকলা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শেখ হানিফসহ অনেকে এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সংক্ষিপ্ত জীবনী:
দারিদ্রতার মাঝে বেড়ে ওঠা ‘লাল মিয়া’ তথা এস এম সুলতান ১৯২৮ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। স্কুলের অবসরে রাজমিস্ত্রি বাবাকে কাজে সহযোগিতা করতেন এবং মাঝে মাঝে ছবি আঁকতেন শিশু সুলতান। ১৯৩৩ সালে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় জমিদার শ্যামাপ্রাসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবি এঁকে তাক লাগিয়ে দেন। মুগ্ধ হন শ্যামাপ্রাসাদসহ নড়াইলের তৎকালীন জমিদাররা। পড়ালেখা ছেড়ে ১৯৩৮ সালে চলে যান ভারতের কলকাতায়। চিত্রসমালোচক শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে তার (সুলতান) পরিচয় হয়। অ্যাকাডেমিক যোগ্যতা না থাকা সত্বেও সোহরাওয়ার্দীর সুপারিশে ১৯৪১ সালে ভর্তি হন কলকাতা আর্ট স্কুলে। ১৯৪৩ মতান্তরে ১৯৪৪ সালে কলকাতা আর্ট স্কুল ত্যাগ করে ঘুরে বেড়ান এখানে-সেখানে। কিছুদিন কাশ্মীরের পাহাড়ে উপজাতিদের সাথে বসবাস এবং তাদের জীবন-জীবিকা ভিত্তিক ছবি আঁকেন সুলতান। ১৯৪৫ মতান্তরে ১৯৪৬ সালে ভারতের সিমলায় প্রথম একক চিত্রপ্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের লাহোরেও চিত্রপ্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। চিত্রপ্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতিমা জিন্নাহ। ১৯৫০ সালে চিত্রশিল্পীদের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আমেরিকা যান সুলতান। এরপর ইউরোপে বেশ কয়েকটি একক ও যৌথ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন তিনি। এ সময় বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো, সালভেদর দালি, পল ক্লীসহ খ্যাতিমান চিত্রশিল্পীদের ছবির পাশে এসএম সুলতানের ছবি স্থান পায়। ১৯৫৩ সালে নড়াইলে ফিরে আসেন সুলতান। শিশু-কিশোরদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি চারুকলা শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। ১৯৬৯ সালের ১০ জুলাই ‘দি ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন। উদ্বোধন করেন যশোরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইনাম আহম্মদ চৌধুরী। ১৯৮৭ সালে স্থাপিত হয় ‘শিশুস্বর্গ’। অবশ্য অনেক আগেই স্বপ্নের শিশুস্বর্গ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন এসএম সুলতান।

চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি বাঁশি এবং সুরযন্ত্র বাজাতেও পটু ছিলেন তিনি। সুলতান বিষধর সাপ, ভল্লুক, বানর, হনুমান, খরগোশ, মদনটাক, ময়না, গিনিপিক, মুনিয়া, ষাঁড়সহ বিভিন্ন পশু-পাখি পুষতেন। সুলতান হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি পছন্দ করতেন না।
চিত্রশিল্পের মূল্যায়ন হিসেবে এস এম সুলতান ১৯৮২ সালে ‘একুশে পদক’, ১৯৮৪ সালে ‘রেসিডেন্ট আর্টিস্ট’, ১৯৮৬ সালে ‘বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা’ এবং ১৯৯৩ সালে ‘স্বাধীনতা পদক’ পেয়েছেন। এছাড়াও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কার লাভ করেন। অসুস্থ অবস্থায় ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার পর নড়াইলে প্রিয়জন্মভূমিতে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

jashore-fish

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত