Friday, April 26, 2024

অস্ত্র বিরতিতে রাজি ইসরায়েল

- Advertisement -

অশান্ত আর ধ্বংসের ভুমি ফিলিস্তিন ও ইসরাইল। সম্প্রতি ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে ইসরায়েল অস্ত্র বিরতিতে রাজি হয়েছে। রোববার রাতে দুই পক্ষ প্রস্তাবিত অস্ত্র বিরতিতে রাজি হয়েছে ।

মিসরের এক নিরাপত্তা সুত্রে জানা গেছে, ইসরায়েল অস্ত্র বিরতিতে সম্মতি দিয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলেছে, স্থানীয় সময় রাত আটটা থেকে অস্ত্র বিরতি কার্যকর হবে। তবে এ চুক্তির বিষয়টি ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠি নিশ্চিত করেনি। তারা বলেছে, কায়রোর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে।  আল–জাজিরার এক খবরে এ তথ্য জানা গেছে।

গাজা উপত্যকায় আজ নতুন করে সহিংসতা দেখা দেয়। গাজা উপত্যকা ঘিরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা অব্যাহত রেখেছে। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে রকেট ছুড়েছে ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদ। ইসরায়েলের তিন দিনের হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩২ হয়েছে। আহত অন্তত ২১৫ জন। পরিস্থিতি দেখে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, এই সংঘাত আরও দীর্ঘস্থায়ী ও রক্তক্ষয়ী হতে পারে। কিন্তু আজ রাত নাগাদ অস্ত্র বিরতির সম্ভাবনার কথা বলেছে মধ্যস্থতাকারী মিসর।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় যে ৩২ জন নিহত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৬ জন শিশু রয়েছে। তবে ইসরায়েলের বাহিনী শিশুহত্যার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, গত শনিবার ইসলামিক জিহাদের সদস্যদের ছোড়া রকেটে শিশু নিহত হয়েছে। গতকাল ইসরায়েলের বাহিনী জানায়, দখল করা পশ্চিম তীরে অভিযান চালিয়ে ইসলামিক জিহাদের ২০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গত শুক্রবার ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলা চালানো শুরু করে। ইসরায়েল সেনাবাহিনীর দাবি, ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হুমকির জবাবে গোষ্ঠীটির জ্যেষ্ঠ নেতাকে লক্ষ্য করে হামলাটি চালানো হয়। শুক্রবারের ইসরায়েলি হামলায় ইসলামিক জিহাদের অন্যতম কমান্ডার তাইসির আল-জাবারির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে উভয় পক্ষ থেকে।

২০২১ সালের মে মাসে টানা ১১ দিন দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ২৫০ জন ফিলিস্তিনি ও ১৩ জন ইসরায়েলি নিহত হন। এরপর তাদের মধ্যে সংঘাত কিছুটা কমেছিল। তবে এবারের সংঘাত আরও বাড়বে কি না, তা নির্ভর করছে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের ওপর। হামাস যদি এ লড়াইয়ে যুক্ত হয়, তাহলে উত্তেজনা আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

হামাসের সঙ্গে জোটবদ্ধ থাকলেও ইসলামিক জিহাদ প্রায়ই স্বতন্ত্র হিসেবে পরিচালিত হয়। ২০০৭ সালে গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চারবার সংঘাতে জড়িয়েছেন হামাসের সদস্যরা। পশ্চিমা দেশগুলোর চোখে হামাস ও ইসলামিক জিহাদ—দুটিই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। ২০১৯ সালে ইসরায়েলি বাহিনী ইসলামিক জিহাদের নেতা বাহা আবু আল-আতাকে হত্যা করে। এতে ইসলামিক জিহাদের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনী সংঘাতে জড়ালেও তাতে হামাস জড়ায়নি। গাজার অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠার সমর্থক বিভিন্ন পক্ষের চাপে রয়েছে হামাস।

গত শনিবার ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে বিমান হামলার সাইরেন বাজানো হয়। তবে সেখানে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। সীমান্ত এলাকায় কর্মকর্তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে শুক্রবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ জাতীয় টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে বলেন, গাজায় ব্যাপক সংঘর্ষে জড়াতে আগ্রহী নয় ইসরায়েল, কিন্তু প্রয়োজনে পিছপাও হবে না।

গতকাল ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট ছোড়েন ফিলিস্তিনের সশস্ত্র যোদ্ধারা। তবে তাঁদের ছোড়া রকেটে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে এ রকেট হামলার জবাবে ইসরায়েলের সেনারা গাজায় বিমান হামলা জোরদার করেছেন।

ইসলামিক জিহাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের নেতাদের হত্যার প্রতিশোধ নিতে জেরুজালেমের দিকে রকেট ছুড়েছে তারা। এতে কারও ক্ষয়ক্ষতি না হলেও তেল আবিব ও আশকেলনের মতো শহরের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়। ইসরায়েলের পক্ষের ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়ার কারণ, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আয়রন ডোম সিস্টেম। ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেন, আয়রন ডোম সিস্টেমে ইসলামিক জিহাদের ছোড়া রকেটের ৯৭ শতাংশ ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হয়েছে।

দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত কমানোর জন্য মধ্যস্থতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মিসর। তবে দুই পক্ষই অনড় অবস্থানে থাকায় সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

গাজার এক গাড়িচালক বলেন, ‘যুদ্ধ কে চায়? কেউ না। কিন্তু যখন নারী, শিশু ও নেতাদের খুন করা হয়, তখন আমরা চুপ করে থাকতে পারি না। চোখের বদলা চোখ।’

ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসলামিক জিহাদের পক্ষ থেকে যদি গোলাগুলো বন্ধ করা হয়, তাহলে তারা আর হামলা করবে না। সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেন, ‘চুপ থাকার জবাব চুপ থেকে দেওয়া হবে।’

সংঘর্ষের বিষয়ে গতকাল আল-জাজিরাকে ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানেজ বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুধু অবৈধই নয়, নির্দয়ও। সংঘাত থেকে নিজেকে রক্ষায় হামলা চালানোকে জাহির করতে পারে না ইসরায়েল।

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত