ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, ‘গত ১৫ বছরে জনপ্রশাসনের পুরোটাই আওয়ামী দলীয় ক্যাডারে পরিণত হয়েছে। সেই বাস্তবতায় সরকারের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনা করা কঠিন তা আমরা বুঝতে পারি। তারপরও বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, একশ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও রাষ্ট্রের ওপরে অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়ন্ত্রণ স্পষ্ট না। বরং দুর্বলতা স্পষ্ট।’
শনিবার (১৬ নভেম্বর) পুরানো পল্টন ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনের কার্যক্রম ও দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীনতা, পোশাক খাতে অরাজকতা, ঢাকায় সেনাবাহিনীর যানবাহনে হামলা, পুলিশ বাহিনী সক্রিয় না হওয়া, ট্রাফিক ব্যবস্থা কার্যকর না হওয়াসহ অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে স্থবিরতা জাতির আশাকে ম্লান করে দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারকে পরামর্শ দেবো, এখনও যারা আপনাদের নেতৃত্ব মেনে নিতে দ্বিধা করছে বা স্বৈরাচারের পদলেহন করছে তাদের ব্যাপারে শক্ত হোন। তাদের ছুড়ে ফেলুন।’
নতুন উপদেষ্টাসহ সব নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে তিনি বলেন, ‘সুশাসন সংক্রান্ত স্বচ্ছতার সংজ্ঞায় সিদ্ধান্ত যাদের প্রভাবিত করে তাদের কাছে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সংক্রান্ত সব তথ্যের অবাধ ও সরাসরি প্রবাহ থাকার কথা বলা আছে। এর মানে হলো, কাকে কোন বিবেচনায় নিয়োগ করা হচ্ছে, তা জনগণের জানা থাকা উচিত।’
নতুন নিয়োগ পাওয়া উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে জনগণ মেনে নেয়নি জানিয়ে দলের আমির বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচারের বেনিফিশিয়ারি বিকৃত মানসিকতার সমাজ বিধ্বংসী নাটক-সিনেমা নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে দ্রুত উপদেষ্টা পরিষদ থেকে প্রত্যাহার করা হোক, তা দেশবাসী প্রত্যাশা করে।’
ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, ‘এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব হলো রাষ্ট্র সংস্কার করা, যাতে করে আর কখনোই কোনও স্বৈরাচার জন্ম নিতে না পারে। সেজন্য সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে, এজন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। এখন এই কমিশনগুলোকে গতিশীল করুন। জনসম্পৃক্ত করুন। রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করুন। বিভিন্ন পেশা ও স্তরের জনমানুষকে সম্পৃক্ত করুন। সংস্কার নিয়ে ইতোমধ্যেই মানুষের মাঝে কানাঘুষা তৈরি হয়েছে। এই কানাঘুষা সংস্কারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই এখনই পদক্ষেপ নিন।’
আওয়ামী লীগের বিচার প্রসঙ্গ টেনে এই আমির বলেন, ‘পতিত হাসিনা সরকার জাতির সঙ্গে যা করেছে তার বিচার না হলে মানবতার সঙ্গে অপরাধ করা হবে। কিন্তু এই বিষয়ে তেমন কার্যকর কোনও পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘আপনাদের সরকার গঠন হওয়ার পরও ফ্যাসিস্ট রেজিমের মন্ত্রী, এমপি, দালাল পাবলিক সার্ভেন্ট, এলাকার নেতা, পাতি নেতা, মাস্তানদের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালানোর সুযোগ পেয়েছে। অনেকে দেশেই আত্মগোপনে থেকে জনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। কেন তাদের পালানোর সুযোগ দেওয়া হলো, কেন দেশে থাকা অপরাধীদের আটক করা হচ্ছে না, এই প্রশ্ন কোটি জনতার। আমরাও এই প্রশ্ন জোরালোভাবে উপস্থাপন করছি। বিনয় ও হুঁশিয়ারির সুরে বলছি যে, কোনও ধরনের দয়া, আপস করা ছাড়াই স্বৈরাচারের বিচার করুন।’
এ সময় বিপ্লবে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দল এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সমন্বয়ে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ গঠনের দাবি জানান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন— ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ সৈয়দ মুহাম্মাদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব আমিনুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব মাওলানা ইমতিয়াজ আলম প্রমুখ।
-অনলাইন ডেস্ক