মাদক সেবনে বাধা প্রদান, ভাড়া নিয়ে অশান্তি এবং সোনার লোভ সামলাতে না পেরেই গৃহকত্রীকে খুন করে মামাতো-ফুফাতো ভাই দুই ভাড়াটিয়া। যশোরের শেখহাটি আদর্শপাড়ার গৃহবধূ শাহানারা সানা হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুনের সাথে জড়িত তার বাড়ির ভাড়াটিয়া বাবলা ও তার মামাতো ভাই সুমন ইসলামকে সাতক্ষীরার ঝাউডাঙ্গা থেকে আটক করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যশোর। এরপর উঠে এসেছে খুনের কারণ।
পিবিআই খুনিদের কাছ থেকে জব্দ করেছে হত্যায় ব্যবহৃত চাকু ও লুট হওয়া নিহতের গহনা। আজ সকালে আটকদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। এর আগে নিহত শাহানারা সানার ছোট ছেলে ইউসুফ হোসেন কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আটক বাবলা সদর উপজেলার তালবাড়িয়া খালপাড়ার মৃত হোসেন আলীর ছেলে।
পিবিআই সূত্র জানায়, বাবলা ও সুমন ছিনতাইকারী। কয়েকমাস আগে শেখহাটি আদার্শপাড়ায় শাহানারা বেগম সানার বাড়িতে ভাড়া নেয় বাবলা ও তার মামাতো ভাই সুমন। এখানে থেকে নানা অপকর্ম করতো তারা। বাড়ি ভাড়াও দিত না। এসব বিষয় সহ্য করতে পারেননি শাহানারা। সে কারণে তিনি বাবলা ও সুমনকে তার বাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে গোলযোগও বাধতো। বিভিন্ন সময় বিষয়টি নিয়ে বাবলা বেশ হুমকিও দিত শাহানারাকে। উপরন্ত সে জানতে পারে শাহানারার অনেক সোনার গয়না রয়েছে।
গত ৩০ অক্টোবর দুপুরে শাহানারার স্বামী আতিয়ার রহমান ইজিবাইক চালানোর উদ্দেশ্যে বের হন। এসময় বাড়িতে একা ছিলেন শাহানারা। এই সুযোগ কাজে লাগায় বাবলা ও সুমন। চাকু নিয়ে ঘরে ঢুকে শাহানারাকে হত্যা করে ঘরে থানা সোনার গহনা নিয়ে চম্পট দেয়। যাবার সময় বাড়ির বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে যায়। সন্ধ্যায় শাহানারার স্বামী বাড়িতে এসে দেখেন বাইরে থেকে ঘরে তালা মারা। এসময় ডাকাডাকি করে না পেয়ে স্বজনদের বাড়িতে খোঁজাখুঁজি করেন। কোথাও না পেয়ে শাহানারার স্বামী তার ছেলের বাড়িতে যান। সেখানেই রাত থাকেন। পরের দিন তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখেন শাহানারার মরদেহ।
পিবিআই সূত্র আরও জানায়, ঘটনার পরপরই পিবিআই যশোরের ইন্সপেক্টর মোস্তফা, এসআই ডিএম নুর জামাল ও গোলাম আলীর সমন্বয়ে একটি টিম বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে সাতক্ষীরার ঝাউডাঙ্গা গ্রাম থেকে আটক করে বাবলা ও সুমনকে। আটকের পর তারা হত্যার ঘটনা স্বীকারও করে। তারা জানিয়েছেন, বাবলা ও সুমন শাহানারাকে হত্যা করে সরাসরি চলে যায় অভয়নগরের আকিজ সিটির পাশে তার এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয়র বাড়িতে। সেখানে গোপন স্থানে হত্যায় ব্যবহৃত চাকু রেখে দেয়। এছাড়া ওই আত্মীয়ের কাছে সোনার গহনা রেখে দশ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায় সাতক্ষীরার ঝাউডাঙ্গায়। তার মাধ্যমেই সাতক্ষীরার কেড়াগাছী সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করে দুজন। কিন্তু তার আগেই পিবিআই তাদেরকে ধরে ফেলে। পরে তাদের স্বীকারোক্তিতে অভয়নগর থেকে হত্যায় ব্যবহৃত চাকু ও গহনা উদ্ধার করে।
পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন বলেন, ‘বাবলা ও সুমন পেশাদার ছিনতাইকারী। এরআগে পিবিআই যশোরের টিম মাগুরা জেলা থেকে তাদেরকে ছিনতাইকরা ইজিবাইকসহ আটক করে আদালতে সোপর্দ করেছিল। পরবর্তীতে জামিনে বের হয়ে একই কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে তারা। এরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া করে অপকর্মে লিপ্ত হতো। শাহানারার বাড়িতে থেকেও একই কাজ করতো। যা শাহানারা জানতে পেরে প্রতিবাদ করেন। এই ক্ষোভ ও সোনার লোভে হত্যা করা হয় শাহানারাকে’। তিনি আরও বলেন, ‘তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর নেপথ্যে অন্য কোনো ঘটনা আছে কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখছেন পিবিআই কর্মকর্তারা। শনিবার (আজ) তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হবে’।
শাহানারার ছেলে মামলায় উল্লেখ করেন, ভাড়ার টাকা নিয়ে আসামিদের সাথে তার মায়ের প্রায় সময় কথাকাটাকাটি হয়। এর ফলে তার পিতা ও মাকে খুন জখমের হুমকি দেয় তারা। ওইদিন তার বাবা মাকে খুঁজে না পেয়ে মোবাইল ফোনও করেন। কিন্তু ফোন বন্ধ পান। পরদিন সকালে তার বড় ভাই ও পিতা স্থানীয় লোকজন নিয়ে বাড়িতে গিয়ে ঘরের তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন এবং দেখেন ঘরের মেঝেতে তার মায়ের মরদেহ পড়ে রয়েছে। গলায় ক্ষত। মেঝেতে রক্ত। পরে পুলিশে সংবাদ দিলে পুলিশ সেখানে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।
তিনি দাবি করেন, তার মাকে গলাকেটে হত্যা করে পালিয়ে যায় বাবলা ও সুমন।
বিশেষ প্রতিনিধি