যশোর এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় ও পায়ে গুলি করার অভিযোগে যশোরের সাবেক পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।
ঘটনার সাড়ে ১০ বছর পর বৃহস্পতিবার শহরের বারান্দীপাড়ার মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে মাসুদুর রহমান নান্নু বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম কিবরিয়া মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য কোতোয়ালি থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্য আসামিরা হলেন, তৎকালিন সহকারী পুলিশ সুপার-ক সার্কেল মিলু মিয়া বিশ্বাস, এসআই সোয়েব উদ্দিন আহম্মেদ, আজগর আলী, জামাল উদ্দিন, এএসআই ইসরাফিল হোসেন, কনস্টেবল রোকনুজ্জামান, সালাউদ্দিন, আজম, সবুজ, আব্দুল্লাহ আল কাফী, মোস্তাফিজুর রহমান, গোবিন্দ, সদর উপজেলার রামনগর পুকুরকুল মাঠপাড়ার সোহরাব ডাক্তারের ছেলে আজিমুল হোসেন ও মেয়ে নিলুফা ইয়াসমিন। ১৩জন পুলিশ সদস্য এবং আজিমুল ও নিলুফাকে পুলিশের কোথিত সোর্স হিসেবে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
বাদী মামলায় উল্লেখ করেন, তিনি একজন ব্যবসায়ী। ২০১৪ সালের ৩১ মে সন্ধ্যা ৬টার দিকে যশোর শহরের মণিহার সিনেমা হলের সামনে থেকে পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানের নির্দেশে অন্য আসামিরা তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
প্রথমে চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আটক রেখে নির্যাতন করতে থাকে। এরই মধ্যে তাকে ক্রসফঢায়ারের ভয় দেখিয়ে দাবি করা হয় ৩০ লাখ টাকা। আর না দিলে ওই সময়ই তাকে ক্রসফায়ারে খুন করার হুমকি দেন । বাধ্য হয়ে বাদীর ছোট ভাই মাহামুদুর রহমান বাবুর মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা এনে আসামিদের দেয়া হয়। এরপরে তাকে চোখ বেধে সদর উপজেলার ভাতুড়িয়া গ্রামের হাবিবুর রহমানের বাড়ির সামনে চোখ ও হাতকড়া খুলে দৌড়ে পালাতে বলা হয়। কিন্তু আসামির মনে দুর্বিসন্ধি মনে অনুভব করায় তিনি দৌড় না দিয়ে তাদের কাছে অনুনয় বিনয় করে মুক্তি দাবি করা হয়।
পরে আবারও ৩০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। অন্যথায় ক্রসফায়ারের হুমকি দেয়া হয়। ফলে বাধ্য হয়ে আবারও বাদীর ভাই বাবু এসে আরও পাঁচ লাখ টাকা দেন। এতেও ক্ষ্যান্ত না হয়ে বাম পায়ে গুলি করা হয়। পরে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ফেলে রাখা হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা অস্ত্র মামলা দেয়া হয়। কিন্তু গুলি করা পায়ের অবস্থা খারাপ থাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পুলিশ পাহারায় ঢাকায় নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে যশোর এনে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরন করে পুলিশ। আর ওই অবস্থা দেখে বাদীর বৃদ্ধ পিতা লুৎফর রহমান স্ট্রোক করে ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর মারা যান। স্বামী ও ছেলের শোকে বাদীর মাও মৃত্যু বরণ করেন। এই সকল ঘটনায় ওই সময়ে আওয়ামী সরকারের ভয়ে থানা বা আদালতে মামলা করিতে সাহস পাননি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আদালতে তিনি এই মামলাটি করেছেন।