Monday, October 14, 2024

হিন্দু সম্প্রদায় আমাদের আমানত, তা‌দের রক্ষা কর‌তে হ‌বে-মির্জা ফখরুল

- Advertisement -

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা আমাদের আমানত। তাদের রক্ষা করার দায়িত্বও আমাদের। সামনে পূজা আসছে, পূজাকে কেন্দ্র করে কোথাও যেন অঘটন না ঘটে সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপু‌রে ঠাকুরগাঁওয়ের হ‌রিপুর উপ‌জেলা ঈদগাহ মা‌ঠে বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।

বিএন‌পির মহাস‌চিব ব‌লেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছে। তার পত‌নের আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকার খুন করেছে প্রায় দুই হাজার মানুষকে। এই আন্দোলনে কারো হাত গেছে, কারো পা গেছে, আবার কারো মাথার খুলি উড়ে গেছে। এরা বিভিন্ন কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে পড়ত। এসব মানুষকে হাসিনা খুন করেছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আমরা মুক্ত বাংলাদেশে বাস করছি। কিন্তু মনে রাখবেন, সেদিন পর্যন্ত এটি মুক্ত থাকবে, যেদিন পর্যন্ত আমরা এটিকে স্বাধীনভা‌বে রাখতে পারব। আমরা যদি আবার আওয়ামী লীগের মতো শুরু করি তাহলে কি আমরা টিকতে পারবো? উপস্থিত নেতাকর্মীরা না সূচক কথা বললে ফখরুল বলেন, তাদের মতো (আওয়ামী লী‌গের) একই আচরণ করলে একই রকম অবস্থা হবে আমাদেরও। সেই জন্য আমাদের মধ্যে যারা লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি-তাদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা নিজেদেরকে মানুষের কাছে ভালোবাসার পাত্র হিসেবে তৈরি করেন। কারও ওপর অন্যায়-অত্যাচার, জুলুম-নির্যাতন করবেন না।

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, গত ১৫-১৬ বছরে আমরা খুব কষ্ট পেয়েছি। আওয়ামী লীগ সরকার ও শেখ হাসিনা আমাদের ওপর ব্যাপকভাবে নির্যাতন ও জেল-জুলুম করেছেন। আপনাদের নামে মামলা হয়েছে শুধু বিএনপি-জামাত করার অপরাধে, এ জন্য আপনাদেরকে জেলে রাখা হয়েছে। সেই অবস্থার পরিসমাপ্তি ঘটেছে। যে শেখ হাসিনা সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা হয়ে গিয়েছিল, তাকে ঠিক সেভাবে পালিয়ে যেতে হয়েছে। জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাকে চলে যেতে হয়েছে। চলে যাওয়ার আগ মুহূর্তে লাখ লাখ মানুষ গণভবন দখলে আসছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে হেলিকপ্টারে করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে গিয়ে তিনি জীবন রক্ষা করেন।

পবিত্র কুরআনের সূরা ইমরানের একটি আয়াত আরবিতে তেলওয়াত করে তা বাংলায় অনুবাদ করে ফখরুল বলেন, আল্লাহ বলেন, ‘আমি যাকে ইচ্ছা মালিক বানাই, বাদশা বানাই, রাষ্ট্রপতি বানাই প্রধানমন্ত্রী বানাই-আবার তাকে যেকোনো সময় রাস্তার ফকির বানিয়ে দিই।’ আজকে সেই প্রতাপশালী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়ে সেই করুণ অবস্থার মধ্যে পড়েছে। আর যারা এইখানে দাপটের সঙ্গে আমাদেরকে শাসন করত, আমাদেরকে জেলে দিত, জুলুম করত, জমি দখল ক‌রে নিত, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে নিত, আমাদেরকে রাজনীতি করতে দিত না-আজ তারা জেলের ভেতরে ঢুকে পড়ে আছে। এ জন‌্যই আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সীমালঙ্ঘন করো না, সীমালঙ্ঘনকারীকে আল্লাহ ক্ষমা করেন না’।

ফখরুল ব‌লেন, আমি ১১ বার কারাগারে গিয়েছি। আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বছরের পর বছর লড়াই-সংগ্রাম করেছি। আমাদের ঠাকুরগাঁওয়ে অসংখ্য ছেলেকে গুলি করেছে, অসংখ্য মামলা হয়েছে। বারবার জেলে গিয়েছে আমাদের ছেলেরা কিন্তু কখনো সত্যের পথ থেকে সরে দাঁড়ায়নি।

ওবায়দুল কাদের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, কোথায় গেলেন ওবায়দুল কাদের সাহেব, আপনি কোথায় চলে গেছেন দেশবাসী জানে না। আমি আপনাকে বলতে চাইম, আমার বাসায় আসেন আমার এলাকাতে আসেন।

ফখরুল ব‌লেন, প্রয়াত জামাত নেতা আমাদের গোলাম আযমের ছেলে ব্রিগেডিয়ার আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে আট বছর আয়নাঘরে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে এই আয়নাঘরে রাখা হয়েছে। অনেক নেতাকর্মীর খবরই পাই না। ১২ বছর আগে ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হন, এখন পর্যন্ত তার কোনো খবরই পাওয়া যায়নি। তার স্ত্রী-সন্তানরা জানে না তার মৃত্যু দিবস পালন করবে, না আল্লাহ তাকে ভালোভাবে ফিরিয়ে দিক সে দোয়া কর‌বে, তারা সেটাও জানে না। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সমস্ত নামিদামি মানুষকে টর্চার করার জন্য আয়নাঘর বা‌নি‌য়েছিল। বিএনপি-জামায়াত ইসলামের নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে সেখানে নির্যাতন করা হতো।

এদিন নিজে অসুস্থতা থাকার কারণে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে না পারায় নেতাকর্মীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে সভা শেষ করেন মির্জা ফখরুল।
সভায় হ‌রিপুর উপ‌জেলা বিএনপির সভাপতি উপাধ‌্যক্ষ জামাল উদ্দি‌নের সভাপতিত্বে সভায় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, আবু তা‌হের প্রমুখ বক্তব্য দেন।

-অনলাইন ডেস্ক

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত