চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দুই নারী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে তারা মারা যান। এর মধ্যে একজন শান্তা সূত্রধর (২০), অপরজন শাকিলা আক্তার (২৬)।
শান্তা সূত্রধর সোমবার দুপুরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। এটি তার প্রথম সন্তান। মেয়ের মুখ দেখে ওই দিন রাতেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নগরীর লাভলেন এলাকার বাসিন্দা শান্তা ৭ সেপ্টেম্বর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ায় গত এক সপ্তাহ ধরে তার শারীরিক জটিলতা বেড়েই চলছিল। স্বজনরা দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলেন। এ অবস্থায় সোমবার অস্ত্রোপচার করা হয়। এর পরপরই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানেই রাত ১০টা ৫০ মিনিটে মৃত্যু হয়।
স্বজনরা জানিয়েছেন, সোমবার দুপুর ২টার দিকে শান্তা সন্তানের জন্ম দেন। মেয়ে হওয়ায় খুশিও ছিলেন। প্রথম বাবা হওয়ার আনন্দে ভাইকে মিষ্টি নিয়ে আসতে বলেন শান্তার স্বামী সাগর দাশ।
সাগরের মামাতো ভাই আকাশ দে বলেন, ‘সন্তান হওয়ার পর আমাকে ফোন করে দাদা মিষ্টি নিয়ে যেতে বলেন। আমি হাসপাতালে গিয়ে বউদির সঙ্গে কথা বলি। তিনি তখন ওয়ার্ডে ছিলেন। তখনও কথা বলছিলেন। সন্ধ্যা থেকে অবস্থা খারাপ হতে থাকে। একপর্যায়ে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাতে মারা যান।’
আকাশ দে আরও বলেন, ‘শান্তার নবজাতক কন্যাটি এখন সুস্থ আছে। তবে বুকের দুধের জন্য কান্নাকাটি করছে। মায়ের অনুপস্থিতিতে এই সন্তানকে কীভাবে বড় করবো, তা নিয়ে চিন্তিত আমরা।’
একই হাসপাতালে সোমবার বিকালে মারা যান শাকিলা আক্তার। তার বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়ায়। দুই ছেলে ও এক মেয়ের জননী ছিলেন। মৃত্যুর আগে খুব করে সন্তানদের দেখতে চেয়েছিলেন। বিশেষ করে দেড় বছরের দুধের শিশু মিমকে। কিন্তু সন্তানরা ছিল গ্রামের বাড়ি চকরিয়ায়। সাত দিন ধরে শাকিলা জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। বাড়িতেই আক্রান্ত হন। তিন দিন আগে চকরিয়ায় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে সোমবার সকালে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই মৃত্যু হয়।
শাকিলার বোন মারুফা বলেন, ‘বোনের পেটে পানি জমে গিয়েছিল। চকরিয়ায় পারেনি। তাই চট্টগ্রামে নিয়ে এসেছিলাম। সেখানেই মারা যায়। তার বাচ্চাগুলো এখনও খুব ছোট। ছোট দুটি বাচ্চা বুঝতে পারছে না মা নেই। শাকিলার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে আট বছরের মোস্তাকিম মাদ্রাসায় পড়ে। মেজো ছেলে মুনতাকিমের চার বছর বয়স। দুধের শিশুটিকে নিয়েই এখন আমাদের যত চিন্তা। সন্তানরা এখন বাবা সাইফুলের কাছে রয়েছে। সাইফুল একটি আসবাবের দোকানে কাজ করেন।’
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। এ নিয়ে চলতি বছর ৭১৪ জন আক্রান্ত হলেন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৮৫, নারী ১৮৫ ও শিশু ১৪৫ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ৯ জন। আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে বর্তমানে ১২ জন চিকিৎসাধীন আছেন।
-অনলাইন ডেস্ক