খুলনা প্রতিনিধি– সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা, নির্যাতনের প্রতিবাদ ও ৮ দফা দাবি আদায়ে খুলনা মহানগরীর শিববাড়ি মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সনাতন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এই সমাবেশ হয়।
রবিবার (১১ আগস্ট) বিকাল ৩টার দিকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল সহকারে শিববাড়ী মোড়ে জড়ো হতে থাকেন। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ একে একে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে হাজির হন। এ সময় পুরো শিববাড়ী এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এসময় ‘তুমি কে, আমি কে, বাঙালি বাঙালি’, ‘হিন্দুদের ওপর হামলা কেন, জবাব চাই, জবাব চাই’, ‘আমার মাটি, আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’সহ নানা স্লোগানে প্রকম্পিত হয় সমাবেশ স্থল। বিভিন্ন জেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি-ঘরে ভাঙচুর, মন্দিরের জায়গা দখল এবং অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও সনাতনী মা-বোন, ভাইদের নির্যাতন, হত্যা ও দেশ ত্যাগের হুমকিসহ নানাবিধ নির্যাতনের প্রতিবাদ জানানো হয়।
সনাতন শিক্ষার্থীরা ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো, সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন। সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন। হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করার পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা। দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন যথাযথ বাস্তবায়ন। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জন্য উপসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনা কক্ষ বরাদ্দ। সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন করা। শারদীয় দুর্গাপূজায় ৫ দিন ছুটি দেয়া।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের খুলনা জেলার সভাপতি বিমান বিহারী রায় অমিত বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট একদল দুষ্কৃতকারী তার তিন তলা বাড়িতে এসে হামলা করে। তারা বাড়ির প্রধান ফটক ভেঙে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে। ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে তারা বাড়ির বাইরের অংশে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।’
তিনি অভিযোগ করেন, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের জোড়াকল বাজারের আশেপাশের অন্তত ২০টি বাড়িতে আমরা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। অনেকের বাড়ির সাথে লাগোয়া দোকান থেকে অনেকে মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, জেলার অন্যান্য জায়গা বিশেষ করে রূপসা, পাইকগাছাসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে হিন্দুদের বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-লুটপাট ও নির্যাতনের খবর পাচ্ছি।
সমাবেশে আসা উজ্জ্বল সাহা নামে একজন বলেন, ‘আমাদের হিন্দুদের বাড়ি-ঘর, মন্দির, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে নিরাপত্তা দেওয়ার মতো কেউ নেই। প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নেওয়ার জন্য অনেকে বর্ডারে গিয়ে বসে আছে। তাদের সম্মানের সঙ্গে বাড়িতে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।’
বিকাশ বৈরাগী নামে আরেক সনাতন ধর্মালম্বী বলেন, ‘এই দেশটা তো সবার। এখানে আমাদের নিরাপত্তা চাই। যেই ক্ষমতায় আসুক, আমাদের কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু আমাদের বাসস্থান ও ধর্মীয় স্থাপনার নিরাপত্তা চাই।’
সরকারি ব্রজলাল কলেজের শিক্ষার্থী পূজা চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বাড়ির পাশে একটা বাজার আছে। সেখানে কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন এলাকার লোকজন এসে আড্ডা দিচ্ছে এবং আমাদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। বাধ্য হয়ে আমি খুলনা শহরের ভাড়া বাড়িতে এসে অবস্থান নিয়েছি। আমরা নিরাপত্তা চাই। সব সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আমরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তারা জানান, সোমবার গোলকমনি পার্ক ও পিকচার প্যালেস মোড়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে।