কপিলমুনি (খুলনা) প্রতিনিধিঃ খুলনা জেলা সদর থেকে ৫০ কিঃ মিঃ দূরে কপিলমুনিতে জাফর আউলিয়া মাজারের অবস্থান। অনেকটা যেন উন্নয়ন বঞ্চিত দক্ষিণের অন্যতম এ পীরের মাজারটি। তাঁকে ঘিরে রয়েছে অনেক কীর্তিগাঁথা। আর মাজার ও পীরকে ঘিরে রয়েছে অনেক ইতিহাস।
প্রবীণ ব্যক্তিদের তথ্য মতে, আজ থেকে কয়েকশত বছর আগে সাধক পীরজাফর আউলিয়া (রহঃ) কপিলমুনিতে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য আসেন। তখন এ অঞ্চল ছিল বনজঙ্গলে ভরা তথা সুন্দরবনের একটি অংশ বলাচলে। এই নির্জন স্থানেই তাঁর সাধনা আশ্রম গড়ে তোলেন পীরজাফর আউলিয়া। তিনি হজরত খাজা খানজাহান আলী (রহঃ) এঁর শিষ্য ছিলেন, তবে কোন সময় তিনি কপিলমুনিতে আসেন এর সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। সে সময় বেত বন আচ্ছন্ন কপিলমুনিতে যে সাধনা আশ্রম গড়ে তোলেন তার স্মৃতিচিহ্ন এখনো রয়েছে। তাঁর অসংখ্য শিষ্য ও ভক্ত ছিলেন। সাধনা স্থলেই তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানা যায় এবং সেখানে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, প্রথমত তাঁর সমাধিস্থল মারাত্মকভাবে অবহেলিত ছিল। ১৯৬৯ সালের দিকে জাতীয় সংসদের সাবেক স্পীকার প্রয়াত শেখ রাজ্জাক আলী তৎকালীণ প্রায় ৮ শত টাকা খরচ করে শেখ নেছার আলীর তত্বাবধানে মাজারটি সংস্কার করান। তারপর ৩ দফায় সরকারি ও ব্যক্তিগত অর্থায়নে তিনি একটি মাজারে রুপ দেন। ১৯৫৮ সালে তাঁর নামানুসারে এলাকার কিছু প্রগতিশীল ও সমাজ সেবক মানুষের প্রচেষ্টায় জাফর আউলিয়া ডিগ্রি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া কপিলমুনি-কাঠামারী সড়কটির নামকরণ করা হয়েছে তাঁর নামানুসারে ‘জাফর আউলিয়া সড়ক’।
প্রতিদিন পীরজাফর আউলিয়ার মাজারে প্রতিদিন আসে অসংখ্য ভক্ত। সাম্প্রদায়িক বিভেদ ভুলে হিন্দু-মুসলিমসহ সব ধর্মের মানুষ মানত ও শিরনি নিয়ে আসেন করুণা প্রত্যাশার আশায়। তাছাড়া চৈত্র মাসে কপিলমুনির কপোতাক্ষ নদে বারুনী স্নান উপলক্ষে মাসব্যাপী মাজারের চার পাশে বসতো রকমারি দোকান নিয়ে মেলা। পীরজাফর আউলিয়াকে (রহঃ) ঘিরে রয়েছে অনেক অলৌকিক কাহিনী। অসংখ্য অলৌকিক শক্তির কথা শোনা যায় এ জাগ্রত পীরজাফর আউলিয়া সম্পর্কে।
এলাকাবাসী বলছেন, পীর জাফর আউলিয়ার মাজার খুলনা জেলার একটি ঐতিহাসিক স্থান। শুধু তাই নয়, পর্যটকদের জন্য হয়ে উঠতে পারে একটি দর্শনীয় পূণ্যভূমি।
মাজারে আসা ভক্ত মোঃ নরিম শেখ বলেন, ‘আমি অনেক দিন ধরে এই পীরের মাজারে আসি। এখান থেকে ধুলিমাটি নিয়ে যাই, প্রার্থনা করি, মনোবাসনা পুরণ হয়’।
মাজারটির খাদেম ইউনুস আলী ফকির বলেন, ‘আমরা বংশ পরমপরায় অনেক দিন ধরে মাজারের খাদেম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। সাবেক স্পীকার শেখ রাজ্জাক আলী মাজারের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন। তারপর আর কেউ উন্নয়নের দৃষ্টি দেয়নি’।
আর কে-০৫