পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ভাঙ্গা দিয়ে ঢাকা-যশোর-খুলনা ট্রেন যাত্রার শুরুতে আরেক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির ছয় দফা দাবি না মানলে ট্রেন চলাচল বন্ধের হুশিয়ারির মধ্যে এবার রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছে বাঘারপাড়া উপজেলার বাসুয়াড়ি ইউনিয়নের রাধানগরবাসী। সেই রাধানগর গ্রামে তৈরি করা হয়েছে পদ্মবিলা জংশন।
প্রকৃত অর্থে পদ্মবিলা যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম। যার দূরত্ব রাধানগর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার। কিন্তু রাধানগরে প্রতিষ্ঠিত রেলওয়ে স্টেশনের নাম কেন পদ্মবিলা দেয়া হয়েছে তা নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি এর নেপথ্যে রয়েছে শুভংকরের ফাঁকি। প্রতিবাদে তারা আজ পদ্মবিলা জংশন এলাকায় মানববন্ধন করবেন। নাম পরিবর্তন না করলে প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেয়ারও হুশিয়ারি দিয়েছেন তারা। এমনকী তাদের এ ডাকে অংশ নিতে বাঘারপাড়া উপজেলাবাসীও একাট্টা হচ্ছেন। তারা শ্লোগান দিচ্ছেন`রাধানগরের মাটিতে পদ্মবিলা জংশন মানিনা, মানবো না’। নতুন এ বিতর্কে চিন্তার ভাজ পড়েছে যশোরবাসীর মনে।
সোমবার সরেজমিনে পদ্মবিলা জংশনে যেয়ে দেখা যায়, সব প্রস্তুতিই শেষ, এখন শুধু ট্রেন আসার অপেক্ষায় রয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ইতিমধ্যে এই স্টেশন দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে রেলও চলাচল করেছে। সংশ্লিষ্ট স্টেশন মাস্টারও জানান ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই চালু হচ্ছে এ জংশন দিয়ে ট্রেন চলাচল। জংশনের একদিকে দেখা যায় সাজসাজ রব, অন্যদিকে শোনা যায় ভ্যানে চলছে মাইকিং। একাট্টা হওয়ার ডাক দিয়ে রাজপথে নামার আহ্বান জানানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে ‘রাধানগরের মাটিতে পদ্মবিলা জংশন মানিনা, মানবো না’। অবিলম্বে পদ্মবিলার নাম বাতিল করতে হবে। কেন এমন প্রতিবাদ তা জানতে এলাকাবাসীর মুখে শুনা যায় চাঞ্চল্যকর তথ্য।
এ বিষয়ে কথা হয় ওই এলাকার মনিরুল ইসলাম, আশরাফ, মিলনসহ অন্তত ১০/১২ জনের সাথে। তারা অভিযোগ করেন, রাধানগরের সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে রেল বিভাগ। তারা তাদের সম্পদ দিয়েছেন রেলকে। কিন্তু তাদের এলাকার নামে স্টেশন না করে করেছে পদ্মবিলার নামে। তারা আরও অভিযোগ করেন, জমি অধিগ্রহণের সময়েও তাদের সাথে বৈষম্য করা হয়েছে।
কীভাবে এ বৈষম্য করা হয়েছে জানতে চাইলে তারা বলেন, রাধানগরে জমির শতক নয় হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু পদ্মবিলায় জমির শতক ধরা হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে তাদেরকে ঠকানো হয়েছে। তাদের দাবি, পদ্মবিলা নাম দেয়ার নেপথ্যে অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে। তারা ধারণা করছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রাধানগরে জংশন তৈরি করে পদ্মবিলার জমির দাম অর্থাৎ ৭০ হাজার টাকা করে শতক ধরে টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের মৌজা অনুযায়ী নয় হাজার টাকা দিয়ে বাকী টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। শেষমেষ তারা বলেন, তাদের টাকার দরকার নেই। নিজেদের জমি দিয়েছেন, এলাকার নামেই করতে হবে স্টেশন। অন্যথায় পদ্মবিলার নামে রাধানগরে জংশন রাখতে দেবেন না তারা।
এলাকাবাসী বলেন, তারা আজ প্রাথমিকভাকে মানববন্ধন করবেন। তাদের দাবি মানা না হলে বৃহৎ কর্মসূচির ডাক দেয়া হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, বিষয়টি নিয়ে তাদের কর্মকর্তারা খোঁজ খবর নিচ্ছেন। এছাড়া অর্থনৈতিক বিষয় ও জমির দামের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা একটি প্রকল্পের মাধ্যমে হয়েছে। সেটা প্রকল্প কর্মকর্তাদের বিষয়। তারাই জানেন কীভাবে কী করেছেন। তবে, বিষয়টি রেল কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখবে বলে জানান।
উল্লেখ্য, যশোরবাসীর স্বপ্ন পূরণের দারপ্রান্তে। আগামী মাসের শুরুতেই চালু হচ্ছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ভাঙ্গা দিয়ে ঢাকা-যশোর-খুলনা ট্রেন যাত্রা। শুরুতেই যশোর রেলওয়ে জংশনকে বাদ রেখে খুলনা হয়ে পদ্মবিলা জংশন দিয়ে ঢাকায় যাতায়াতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এর প্রতিবাদে যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ ছয় দফা দাবি দিয়ে আল্টিমেটাম দেয়া হয়। পরবর্তীতে এ কমিটির নেতৃবৃন্দ রেলওয়ের মহাপরিচালক ও সচিবের সাথে বৈঠক করেন। পরে বগি সংকটের বিষয়টি বিবেচনা করে প্রতিদিন একটি করে ট্রেন দুইবার করে খুলনা ও যশোর রুটে চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়। যা সকালে খুলনা থেকে ছেড়ে পদ্মবিলা হয়ে ঢাকায় পৌঁছাবে। পরে ঢাকা থেকে যশোর এবং যশোর থেকে ফের ঢাকায় আসবে। রাতে ঢাকা থেকে খুলনায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এমনকী এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে একটি ট্রেন পরীক্ষামূলক ভাঙ্গা হয়ে খুলনা রুটে চলাচল করে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মাসের শুরুতেই এ রুটে ট্রেন চলাচল করবে। ঠিক এমন সময় পদ্মবিলা জংশনের নাম নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। যা নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা। বাঘারপাড়া উপজেলার রাধানগরে কেনই বা সদর উপজেলার পদ্মবিলার নামে স্টেশনের নামকরণ করা হলো এ প্রশ্ন এখন সবার মনে। এর নেপথ্যে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি যশোরবাসীর।
রাতদিন সংবাদ/আর কে-০৭